পেঁয়াজ-সবজির দামে স্বস্তি, মাছ চড়া

আগের সংবাদ

ভোটের জন্য প্রস্তুত খুলনা কার ভাগ্যে ছিঁড়বে শিকে

পরের সংবাদ

খুলনায় শেষ মুহূর্তে নানা সমীকরণ : বিএনপি-জামায়াতের ভোটই হতে পারে ফলাফল নির্ধারক

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র ও বাবুল আকতার, খুলনা থেকে : খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন ঘিরে শেষ মুহূর্তে চলছে নানা সমীকরণ। সাধারণ ভোটার থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক- সবার আলোচনায় ভোটের গতিপ্রকৃতি। সবাই হিসাব মেলাতে ব্যস্ত- কার পাল্লা ভারি। কেউ বলছেন, নৌকা জিতবে। আবার কেউ বলছেন, বিএনপি-জামায়াত এক হয়ে ভোটের মাঠে নামলে ঝুঁকিতে পড়বেন নৌকার মাঝি খালেক। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এখানে সুবিধা করতে পারবে না। কেসিসি নির্বাচনে অংশ না নিলেও বিএনপি-জামায়াত মূলত নাটক সাজিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারা নৌকার প্রার্থীকে হারানোর জন্যই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করবে। তাদের সাজানো নাটক ছক অনুযায়ী মঞ্চস্থ হলে কপাল খুলতে পারে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধুর।
বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনায় কখনোই জনসমর্থনের দিক থেকে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী অবস্থানে ছিল না। স্বাধীনতার আগে মুসলিম লীগ এখানে শক্তিশালী ছিল। পরবর্তীতে মুসলিম লীগ বিলুপ্তর পর বিএনপি ও জামায়াত শক্ত অবস্থান নেয়। তারপর জাতীয় পার্টির অবস্থান। বিগত সময়ে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ডুমুরিয়া ফুলতলা বটিয়াঘাটা আসনটি ছাড়া অন্য কোনো আসনে জয়লাভ করতে পারত না। গত ১৪ বছরের বেশি সময় আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকায় এখন অনেকেই আওয়ামী লীগের পক্ষে সমর্থন জোগাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে থাকলেও ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের বিপক্ষেই কাজ করছেন তাদের অনেকে। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এর ব্যত্যয় হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, খুলনা সিটিতে বর্তমানে বিএনপি-জামায়াতের ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ ভোট রয়েছে। আওয়ামী লীগের ভোট আছে ৩০ শতাংশ, জাতীয় পার্টির ৮ থেকে ১০ শতাংশ। বাকি ভোট অন্যান্য দলের প্রার্থীরা পেয়ে থাকে। স্বাভাবিক হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এবারের নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট কাস্ট হতে পারে। এই অবস্থায় বিএনপি জামায়াত নির্বাচনে অংশ না নিলেও নেপথ্যে থেকে নৌকাকে হারানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এ বিষয়টি ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ কর্মীরা বলছেন, ভোটার উপস্থিতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে

যাবে। কারণ দুজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হলেও অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের ভোট পাওয়ার জন্যই লোকজনকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে উৎসাহিত করবেন, প্রয়োজনে সহযোগিতাও করবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পাওয়া কাউন্সিলররা নিজের ভোটের পাশাপাশি নৌকার প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের জন্য কাজ করবেন। তারপরও বিএনপি-জামায়াত ভোটকেন্দ্রে গেলে পাল্টে যেতে পারে ভোটের চিত্র। বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ১১ জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত একটা নাটক। এভাবে বহিষ্কার এবং দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ না নেয়ার পুরো বিষয়টি লোক দেখানো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রবীণ শিক্ষাবিদ জানান, নির্বাচনে অংশ না নিলেও বিএনপি-জামায়াত ভোট দিতে যাবে কিনা- আজকালের মধ্যেই সিদ্ধান্ত আসবে। যদি তারা ভোটকেন্দ্রে যায় তাহলে বিএনপি সমর্থকরা জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধুকেই ভোট দেবে। তাদের মূল লক্ষ্য থাকবে নৌকার প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককে হারানো। বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়ালকে সমর্থন করবে না। নির্বাচনী প্রচারণার শোডাউন থেকে ধারণা করা হচ্ছে- হাতপাখা প্রতীকের এই প্রার্থী খুব বেশি হলে ২০ থেকে ২৫ হাজার ভোট পাবেন। তাই তাকে সমর্থন দিয়ে আশা পূরণ হবে না। এক্ষেত্রে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা লাঙ্গলের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধুকে সমর্থন দেয়া হলে তিনি জিতবেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয় ঘটবে। এই পরাজয় আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু এ বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্বাচনী মাঠে সরব রয়েছেন। কৌশলে যোগাযোগ রাখছেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে।
খুলনা জেলা বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। এখন নৌকাকে হারানোর জন্য বিএনপির সমর্থকরা ভোট দিতে গেলে সেটা বিএনপির জন্য এক ধরনের পরাজয়। বিএনপি জেলা কমিটি এবং মহানগর কমিটির নেতারা এ বিষয়টি দলীয় সমর্থকদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তারা যেন নির্বাচনী কোনো কর্মকাণ্ডে, কারো প্রলোভনে জড়িয়ে না পড়ে। তাদের ভাষ্য, খুলনাসহ দেশবাসী জানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও অন্যান্য দলের ভোটব্যাংকের অবস্থা সম্পর্কে। নৌকাকে হারানোর জন্য বিএনপি যদি নিচুসারির কোনো দলকে ভোট দেয় এবং যদি জিতে যায়, তবে সবাই বুঝতে পারবে বিএনপির ভোটের কারণেই ওই দলটি জিতেছে। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভোট দিতে যাওয়াটা বিএনপির জন্য একটি নৈতিক পরাজয় হবে। এসব কারণে বিএনপির লোকজন ভোট দিতে যাবে না। তাছাড়া ভোট দিতে যাওয়ার কোনো নির্দেশনা এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয়, জেলা বা মহানগর পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে আসেনি।
খুলনা নগরীর ডাকবাংলা এলাকার বাসিন্দা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের মনে আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভ আছে। আওয়ামী লীগের আমলে খুলনার সব পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ বেকার হয়েছে। যেসব মানুষ আগে পাটকলে শ্রমিক ছিল তারা এখন রিকশা চালাচ্ছে, তরকারি বিক্রি করছে। অনেকে পাওনা টাকা এখনো পায়নি। খালিশপুর ও দৌলতপুর এলাকার এসব মানুষ নৌকায় ভোট দিতে চায় না। আবার নগরীর উন্নয়নের স্বার্থে খালেককে ভোট না দিয়েও উপায় নেই।
খালিশপুর জুট মিলস এলাকার ব্যবসায়ী মোর্শেদ জানান, পাটকল বন্ধ হওয়ার পর শ্রমিকদের অর্ধেকের বেশি খুলনা ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু ভোটার তালিকায় এখনো তাদের নাম আছে। যারা এখন আছে তাদেরও ভোটের ব্যাপারে অতটা আগ্রহ নেই, কারণ চাকরি না থাকায় তাদের মনে শান্তি নেই। পাটকল চালু থাকলে এসব শ্রমিকদের ভোট নৌকাতেই পড়ত। আমাদের দাবি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ পাটকলগুলো খুলে দিক।
খুলনায় নৌকার প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে আসা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে না এবং তাদের জনসমর্থন নেই। তাই তারা নির্বাচনে আসেনি। বিএনপি নির্বাচনে না আসার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা গণতন্ত্রের জন্য আত্মঘাতী। এখন নৌকার জয় ঠেকানোর জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তালুকদার আব্দুল খালেক খুলনা মহানগরীর পরীক্ষিত নেতা, একজন সফল মেয়র। খুলনার জনগণ নৌকার পক্ষে ভোট দিতে কোনো ভুল করবে না।
সরজমিন খুলনা নগরীর দৌলতপুর, খালিশপুর, সোনাডাঙ্গার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষেই কথা বলছে। খালিশপুরের চিত্রালি বাজারের সামনের রাস্তাটির বেহালা অবস্থা। খানাখন্দের কারণে হেঁটে চলার উপায় নেই, যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। কিন্তু তারপরও চিত্রালি বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তারা কেসিসি নির্বাচনে তালুকদার আব্দুল খালেককে ভোট দেবেন। কেন ভোট দেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, এই রাস্তার অবস্থা আগে আরো খারাপ ছিল। তালুকদার খালেক কিছুটা উন্নতি করেছেন বলে চলাফেরা করা যায়। এখনো রাস্তার কাজ চলছে। তিনি আবার নির্বাচিত হয়ে এলে দ্রুতই রাস্তার কাজ শেষ হবে। অন্য কেউ নির্বাচিত হলে এই রাস্তার কাজ শেষ হতে আরো সময় লাগবে এবং আমাদের ভোগান্তি বাড়বে।
তালুকদার আব্দুল খালেকের নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও খুলনা ১৪ দলীয় জোটের নেতা খালিদ হোসেনের মতে, এই নির্বাচনে ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নগরীর প্রতিটি এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণাকালে সাধারণ মানুষের উৎসাহ দেখে তাই মনে হয়েছে। ১২ জুন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তালুকদার আব্দুল খালেক আবারো কেসিসির মেয়র নির্বাচিত হবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়