কাগজ প্রতিবেদক : আমদানি শুরু হওয়ায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে। পাঁচদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৩৫-৪০ টাকা কমে এখন ৬০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। পাশাপাশি সবজি ও ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা কমলেও মাছের দাম বেড়েছে। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, লোডশেডিংয়ের কারণে বরফ সংকট দেখা দিয়েছে। এতে মাছের সংরক্ষণ খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দামে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আরো কম। ভারতীয় এ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। মসলাপণ্য বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, ভারতের পেঁয়াজ আসায় প্রতিদিন দাম কমছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকারও বেশি কমে গেছে। আমদানি বেশি হলে দাম হয়তো আগের মতো হবে। ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে কিনতে পারবেন ভোক্তারা। পেঁয়াজের দাম কমলেও বাজারে আদার দাম কমছে না। প্রতি
কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। বিশেষ করে চীন থেকে আমদানি করা আদার দাম বেশি। মসলার বাজারে আরো কিছু পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। জিরার কেজি ৯০০ টাকা। মাসখানেক আগেও জিরার কেজি ছিল ৬০০ টাকা।
এদিকে, চিনি এখনো ‘তেতো’ ক্রেতার কাছে। বাজারে কোথাও প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। বড় বাজারগুলোতে খুচরা ব্যবসায়ীরা খোলা চিনি বিক্রি করছেন ১৩৫ টাকা দরে। পাড়া-মহল্লার বেশিরভাগ মুদি দোকানে চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। যেখানে সরকার খুচরা পর্যায়ে খোলা চিনির কেজি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দর ১২৫ টাকা নিধার্রণ করে দিয়েছে। চিনি নিয়ে খোদ খুচরা বিক্রেতারাই উষ্মা জানিয়েছেন। মালিবাগের মা স্টোরের শাহিন বলেন, কোম্পানি চিনি দেয় না। পাইকারি বাজার থেকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। অথচ চিনির দাম নিয়ে ক্রেতারা আমাদের কথা শোনান। তারা বেশি দিতে চান না। অনেক সময় বাকবিতণ্ডা হয়। এ কারণে চিনি বিক্রি বন্ধ রাখি। শুধু রেগুলার কাস্টমারকে (নিয়মিত ক্রেতা) দিই।
অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগি আর সবজির দামে কিছুটা স্বস্তির আভাস মিলছে। গত রমজানে ২৫০ টাকায় ঠেকেছিল ব্রয়লার মুরগির দাম। ঈদের পর তা কিছুটা কমে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। গতকাল তার চেয়েও ১০ টাকা কমে, অর্থাৎ ২০০-২১০ টাকা দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখা গেছে। ব্রয়লারের সঙ্গে সোনালি জাতের মুরগির দামও কমেছে। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ৩০০ টাকার কাছাকাছি ছিল। তবে বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম তেমন কমেনি। বড় বাজারে ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
বেশ কয়েক মাস চড়া থাকা সবজির বাজার কিছুটা নি¤œমুখী প্রবণতায় এসেছে। গ্রীষ্মকালীন বেশিরভাগ সবজি এখন ৫০ টাকার মধ্যে। সজনে, কাকরোল, বরবটি, কচুর লতিসহ কয়েক ধরনের সবজি এখনো ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আলুর দামে পরিবর্তন দেখা যায়নি। ৪০ টাকার আশপাশে আটকে আছে আলুর কেজি, যা বছরের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি।
সবজির বাজারে যখন কিছুটা স্বস্তির হাওয়া বইতে শুরু করেছে ঠিক তখনি অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে মাছের বাজারে। শান্তিনগর মাছের বাজারের বিক্রেতা মোসলেহ উদ্দিন বলেন, কয়েকদিন লোডশেডিংয়ে বরফের দাম বেড়েছে। এ কারণে সব ধরনের মাছ কেজিতে প্রায় ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজারে ‘সস্তা মাছ’ হিসেবে পরিচিত তেলাপিয়া ও পাঙাশের দামও বেড়েছে। এ দুই ধরনের মাছের দাম এখন প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের রুইয়ের দাম প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা। এ মাছের দামও গত সপ্তাহের চেয়ে এখন কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া পাবদা, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছের যে দাম, তা শুধু নি¤œবিত্ত নয়, নি¤œ-মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে চলে গেছে। এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।