করমণ্ডল এক্সপ্রেস : চেন্নাইগামী ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত শতাধিক, বাংলাদেশি যাত্রী থাকার আশঙ্কা

আগের সংবাদ

দেয়াল

পরের সংবাদ

১৩ মিনিটের রহস্য ও লুপ লাইনের ধোঁয়াশা

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সত্যজিৎ চক্রবর্তী, কলকাতা থেকে : ভারতীয় রেলের ইতিহাসে অন্যতম ভয়ঙ্কর এক দুর্ঘটনা, প্রতি মুহূর্তে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। কিন্তু কীভাবে ঘটল মারাত্মক এই দুর্ঘটনা এই একটি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এখনও চরম ধোঁয়াশা। উঠে আসছে পরস্পরবিরোধী নানা তত্ত্ব। রেল বলছে এক, ওড়িশার দমকল বিভাগ বলছে আরেক কথা, আবার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফলে দুর্ঘটনার কারণ ২৪ ঘণ্টা পরও স্পষ্ট তো হয়ইনি; বরং একে ঘিরে তৈরি হয়েছে ধাঁধা।
১৩ মিনিটের রহস্য : রেলের একটি সূত্রের মতে, বালাসোর রেল দুর্ঘটনায় যে মালগাড়ির কথা বলা হচ্ছে, সেটি ছেড়েছিল খড়্গপুর থেকে। মালগাড়ি ছাড়ার ১৩ মিনিট পর খড়্গপুর স্টেশন ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। অর্থাৎ, মালগাড়ির সঙ্গে যেহেতু এক লাইনে করমণ্ডল এক্সপ্রেস তাই দুই ট্রেনের মধ্যে এই ১৩ মিনিটের ব্যবধান রেখে চলতে হবে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির পেছনে এসে ধাক্কা মারে করমণ্ডল। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন, কীভাবে এই ১৩ মিনিটের ব্যবধান শূন্যে নেমে এলো করমণ্ডলের চালক এবং সহকারী চালকের ভুলে এই কাণ্ড ঘটল নাকি সিগনালিং ব্যবস্থার গণ্ডগোলে মালগাড়ির চালকইবা কেন গাড়ি দাঁড় করালেন মালগাড়ি একই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে তা কেন করমণ্ডলের চালককে জানানো হল না, কী করছিলেন বালাসোরের স্টেশন মাস্টার
দুর্ঘটনার ৩ তত্ত্ব : শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে তখন রেলের তরফে জানানো হয় দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে করমণ্ডলে দুর্ঘটনা ঘটে। এটা ছিল প্রথম তত্ত্ব। কিন্তু বেশি রাতে ওড়িশা সরকার এবং রেল জানায়, দুটি ট্রেন নয়, তিনটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটেছে। বেঙ্গালুরু হাওড়া যশবন্তপুর সুপারফাস্ট প্রথম বেলাইন হয়। বেলাইন হওয়া কামরায় ধাক্কা মারে করমণ্ডল, পরে মালগাড়ি সংঘর্ষে জড়ায়। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এই তত্ত্ব ঠিক নয়, দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির সঙ্গেই প্রথম করমণ্ডলের সংঘর্ষ হয়, পরে করমণ্ডলের বেলাইন হয়ে যাওয়া কামরার সঙ্গে সংঘর্ষ হয় যশবন্তপুর সুপারফাস্টের, ফলে সেটাও লাইনচ্যুত হয়। পরস্পরবিরোধী এই তিন তত্ত্বে আরো ধোঁয়াশা বাড়ছে। রেলের তরফে শনিবার জানানো হয়, দুর্ঘটনা কী ভাবে হয়েছে তা স্পষ্ট হচ্ছে না। তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনটি গাড়ির চালক গার্ড জখম হয়েছেন, তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না। আপাতত উদ্ধারকাজে জোর দেয়া হচ্ছে। পরে ফরেন্সিক পরীক্ষার পর দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ সামনে আসতে পারে। তার আগে এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না।
এসবের মাঝে উঠে এলো আরো এক তত্ত্ব। তা হল ‘লুপ লাইন’। বিষয়টি হল, মেইন এবং লুপ- এই দুই ধরনের লাইন থাকে। রেলের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভুল লাইনে ঢুকে পড়ে ১২৮৪১ শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। আসলে মেইন লাইনে ধরে ভুবনেশ্বরের দিকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল এই ট্রেনের। কিন্তু ওড়িশার বালাসোর জেলার বাহানগা বাজার স্টেশন পেরিয়ে ‘ভুল করে’ লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে সেটি। এই ট্র্যাকে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল একটি মালগাড়ি। তাতেই এসে ধাক্কা মারে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ভুলের জেরেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে যে কোনো যান্ত্রিক ত্রæটি নেই, মানুষের ভুলেই এই ঘটনা- তা কার্যত স্পষ্ট হচ্ছে। যদিও এই বিষয় নিয়ে রেল কোনো মন্তব্য করেনি এখনো।
আবার রেলের একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, মালগাড়ির সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কোনো সংঘর্ষ হয়নি। কোনো কারণে প্রথমে আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। সেটি গিয়ে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে। এই সময় উল্টো দিক থেকে আসা বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এই কামরাগুলোকে ধাক্কা মারে। ফলে একসঙ্গে তিনটি ট্রেনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়