তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো দুজনের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

সিগন্যালের ভুলেই দুর্ঘটনা : শোকে কাতর পুরো ভারত > তিন ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ২৮৮, আহত সহস্রাধিক

পরের সংবাদ

করমণ্ডল এক্সপ্রেস : চেন্নাইগামী ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত শতাধিক, বাংলাদেশি যাত্রী থাকার আশঙ্কা

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ভারতের ওড়িশায় বালেশ্বরের কাছে কলকাতা থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় কমপক্ষে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩ শতাধিক মানুষ। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশা রাজ্যের বালেশ্বরের কাছে মালবাহী আরেকটি ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেলে হাওড়া শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে এ ঘটনা ঘটে। অন্তত ১২-১৩টি বগি দুমড়েমুচড়ে গেছে। গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত ৫০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। অনেকে ট্রেনের বগির নিচে চাপা পড়ায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
হতাহতদের মধ্যে বাংলাদেশের অনেকে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা বাংলাদেশি অনেকে চিকিৎসা নিতে কলকাতা থেকে ওই ট্রেনটিতে করে ভেলরে আসা-যাওয়া করেন। যদিও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির লাশ উদ্ধার হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে, নজর রাখছে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন। মিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ওড়িষ্যার সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছি। সম্পূর্ণ বিষয়টার ওপর মনিটরিং শুরু করেছি।
এদিকে এই দুর্ঘটনাকে গত কয়েক বছরের মধ্যে ভারতে ঘটা দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলা হচ্ছে। দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন
রেলওয়েমন্ত্রীর মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা। তিনি জানান, উদ্ধার তৎপরতা চলছে। শোক জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক টুইটবার্তায় জানিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে রাজ্যের সচিব ও অপর সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নভীন পাটনায়েক রাজ্যের রাজস্বমন্ত্রী প্রমিলি মালিককে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্ঘটনা এতই ভয়াবহ, হাওড়া স্টেশনে রেলের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। হেল্পলাইন নম্বর জানিয়েছে রেল। হাওড়ার হেল্পলাইন নম্বর ০৩৩-২৬৩৮২২১৭, পাশাপাশি বালেশ্বরে কন্ট্রোল রুম নম্বর ৭৯৭৮৪১৮৩২২। রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্নে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারত যাওয়ার সব ট্রেন বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ওড়িশাগামী ট্রেনও। এর ফলে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
রেল সূত্রের খবর, অন্তত ১২-১৩টি বগি দুমড়েমুচড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ১০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা ৫০ জন জানানো হয়েছে। আর আহত বলা হয়েছে ২০০ এর বেশি যাত্রী। তাদের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরিস্থিতি চূড়ান্ত আশঙ্কাজনক, মৃতের সংখ্যা ২০০ পার হয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, একই লাইনে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ও একটি মালগাড়ি চলে আসার প্রায় একই সময় অন্য লাইন দিয়ে আসছিল হাওড়াগামী যশোবন্তপুর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। করমণ্ডলের ধাক্কার অভিঘাতে যশোবন্তপুর এক্সপ্রেসেরও সামনের তিনটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক যাত্রীকে উদ্ধার করা গেলেও এখনো দুই এক্সপ্রেসের বহু যাত্রী আটকে রয়েছে। যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস আসছিল হাওড়ায়। রেলের তরফে উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। খবর দেয়া হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও। ৬০টি দমকল ও দুটি ক্রেন উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে। স্থানীয়রাও উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করছে। তবে, ঠিক কী কারণে মালগাড়ির সঙ্গে একেবারে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলো তা এখনো স্পষ্ট নয়।
জানা গেছে, স্থানীয় সময় দুপুর ৩টা ১৫ মিনিটে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। এরপর পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর স্টেশন থেকে ছাড়ে বিকাল সোয়া ৫টায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ট্রেনটি পৌঁছায় ওড়িশার বালেশ্বরে। কাছেই বাহানগা বাজারে সজোরে মালগাড়িকে ধাক্কা দেয় চেন্নাইগামী ট্রেনটি। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডলের ২৩ বগির ট্রেনটি।
রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলেন, সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ শালিমার থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১০-১২টি বগি বালেশ্বরের কাছে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত বগিগুলো ছিটকে পড়ে উল্টো দিকের লাইনে। কিছুক্ষণ পর উল্টো দিকের লাইন দিয়ে আসে হাওড়াগামী যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনটি করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ছিটকে পড়া বগির ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে লাইনচ্যুত যশোবন্তপুর এক্সপ্রেসেরও ৩ থেকে ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা বলেছেন, দুর্ঘটনায় তৃতীয় আরেকটি ট্রেন জড়িত ছিল। প্রায় ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স হতাহতদের উদ্ধারে কাজ করছে। আহতের সংখ্যা অনেক বেশি মনে হচ্ছে। আহতদের হাসপাতালে নিতে বিপুলসংখ্যক বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ওড়িশার দমকল বাহিনীর প্রধান সুধাংশু সরাঙ্গি উদ্ধার অভিযান তদারকি করছেন। বালেশ্বরের হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় দুর্যোগ ত্রাণ বাহিনীর শতাধিক সদস্য আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধারে কাজ করছে। তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য দুর্ঘটনায় পড়া বগি কাটার কাজ করছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়