করমণ্ডল এক্সপ্রেস : চেন্নাইগামী ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত শতাধিক, বাংলাদেশি যাত্রী থাকার আশঙ্কা

আগের সংবাদ

দেয়াল

পরের সংবাদ

দ্রুতই লোডশেডিংয়ের সমাধান : প্রধানমন্ত্রী > পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে আমেরিকা না গেলেও চলবে

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আমেরিকা না গেলেও আমাদের চলবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, পৃথিবীটা অনেক বড়। ২০ ঘণ্টা আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে কোনো দেশে আমাদের না গেলেও চলবে। আটলান্টিকের এপারে অনেক মহাসাগর ও আশপাশে অনেক দেশ আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর করতে হবে। গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নিজস্ব কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অত্যাধুনিক এই কার্যালয়টি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগও ব্যবহার করতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজের পায়ে চলব। নিজের দেশকে গড়ে তুলব। কারো মুখাপেক্ষী হয়ে নয়। কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের স্যাংশন দেবে- ও নিয়ে মাথাব্যথা করে কোনো লাভ নেই। ২০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে ওই আমেরিকা না গেলে কিচ্ছু আসে- যায় না। পৃথিবীতে আরো অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। সেই মহাদেশের সঙ্গে মহাসাগরেই আমরা যাতায়াত করব আর বন্ধুত্ব করব। আমাদের অর্থনীতি আরো মজবুত হবে, উন্নত হবে, আরো চাঙা হবে।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
বিএনপি আবার আমেরিকার কাছে ধরনা দেয়- মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ভোট যারা চুরি করে। ভোট নিয়ে যারা চিরদিন খেলছে। জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা খেলছে- আমি তাদের বলব যে ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দেন। কানাডার আদালত বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এই সন্ত্রাসী আর দুর্নীতির দায়ে সেই আমেরিকাই তারেক জিয়াকে ভিসা দেয়নি। এখন সেই বিএনপি আবার আমেরিকার কাছে ধরনা দেয়।
ঘন ঘন লোডশেডিং সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদ্যুৎ শতভাগ দিতে পেরেছি। এখন যেহেতু তেল-গ্যাস ও কয়লার দাম বেড়ে গেছে। সব থেকে অবাক- কয়লা এখন পাওয়া যাচ্ছে না। আগে যারা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা আন্তর্জাতিকভাবে করে বেড়াতো এখন তারাই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে। যার ফলে আমাদের কয়লা কিনে আনতে সমস্যা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি জানি, এই গরমে অনেকের কষ্ট হচ্ছে। আমরা তো লোডশেডিং সম্পূর্ণ দূর করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, এর আগে করোনা ভাইরাস না হতো, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা না হতো, মুদ্রাস্ফীতি না দেখা দিত- তাহলে কোনো কষ্ট হতো না। আজকে আমরা ভেতরে যতই চেষ্টা করি, যেই জিনিস বাইরে থেকে আমাদের আনতে হচ্ছে, সেটা অত্যন্ত কষ্ট করে আমাদের জোগাড় করতে হচ্ছে। তবুও সুখবর হলো যে কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে। আমরা আরো কয়েকটা দেশের সঙ্গে চুক্তি করছি যেন আমরা গ্যাস কিনতে পারি, আনতে পারি-

এই কষ্টটা দূর করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি, এই বিদ্যুতে একবার মানুষের যদি অভ্যাস হয়ে যায়, তারপরে যদি বিদ্যুৎ না থাকে- কষ্টটা তখন বাড়ে। আর বিএনপি-জামায়াত- এদের সময় যখন বিদ্যুৎ ছিল না, তখন মানুষ হাহাকার করত। আর এই বিদ্যুৎ চাওয়ার কারণে কানসাটে খালেদা জিয়া গুলি করে মানুষ হত্যা করেছিল। সারের দাবি করেছিল বলে ১৮ জন কৃষককে হত্যা করেছিল। শ্রমিকের মজুরির কথা বলেছিল বলে রমজান মাসে ১৭ জন শ্রমিককে হত্যা করেছিল।
বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে অনুরোধ করব। বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়। যা খরচ হয়, তার অর্ধেক দাম আমরা নিচ্ছি। লাভবান কে? বড় লোকরা। যারা এয়ারকন্ডিশন ও লিফট ব্যবহার করে। তারাই লাভবান হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের এতে খুব একটা লাভ হয় না- এটা হলো বাস্তব কথা। আর ৬০০ ওয়াট পর্যন্ত তো বিদ্যুৎ আমরা ফ্রি-ই দেই। কাজেই বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। প্রতি লিটার পানি পরিশোধনে অনেক টাকা খরচ হয়। পানির জন্য এক সময় হাহাকার ছিল। নিশ্চয়ই পানি আর বিদ্যুতের জন্য বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিনের দৌড়ের কথা আপনারা ভুলে যাননি। আমরা পানি সরবরাহ ও পানি পরিশোধনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বাজেট বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেট আমরা দিয়েছি। বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব বলেই আমরা বাজেট দিয়েছি। আমরা দেখি, আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী টকশো ফাটায় ফেলছে যে, এটা (বাজেট) না কি আমরা বাস্তবায়ন করতেই পারব না। প্রতিবার বাজেটের আগে এরা যে কথা বলে, সেই একই কথা কিন্তু বলেই বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের কাজ করে ঠিকই মানুষের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। জীবনমানের উন্নয়ন করে দিতে পারছি। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান যেন উন্নত হয়- সেটাই তো আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি কাজ করে যাচ্ছি। আর সেটা সম্ভব হয়েছে ২০০৮ সালের পর থেকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে একটানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করছে বলে। একটা স্থিতিশীল-গণতান্ত্রিক পরিবেশ বাংলাদেশে বিরাজমান আছে বলেই কিন্তু এই অর্থনৈতিক উন্নয়নটা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে এ দেশের কোনো উন্নতি হতো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সমস্ত কিছুতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তারপরেও আমাদের দেয়া টেলিভিশন, বিদ্যুৎ, ওয়াইফাই, ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার করে আমাদেরই গালমন্দ করে যাচ্ছে। আর আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে যাচ্ছে। কিন্তু যে যা-ই বলুক, কে কী বলল- ওতে কিছু আসে-যায় না। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত বাজেট আমরা ঘোষণা করেছি। এই বাজেট ইনশাল্লাহ আমরাই বাস্তবায়ন করতে পারব।
বাজেট নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা অর্থনীতিবিদ আর জ্ঞানী-গুণী আছেন। আমরা হয়তো লেখাপড়া জানি না। কিন্তু বাংলাদেশের মাটি ও মানুষকে চিনি। বাংলাদেশটাকে চিনি। নদী-নালা, খাল-বিল চিনি। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ কোথায়, মঙ্গল কোথায়? কী করলে ভালো হবে- সেটা আমরা খুব ভালো করেই জানি। আর সেটা মাথায় রেখেই আজ কাজ করে উন্নয়নশীল দেশে উন্নতি করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যেই উন্নত দেশ হবে। ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা প্ল্যান আমরা করে দিয়েছি- যাতে আমাদের ব-দ্বীপ, এই পরিবেশ বা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে রক্ষা পেয়ে এই দেশটা যেন সুন্দরভাবে চলতে পারে, আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে চলতে পারে সেই পরিকল্পনাও আমি করে দিয়েছি। কাজেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতার হাতে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এই দেশ। জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের প্রতি আমার আস্থা আছে। বিশ্বাস আছে। তারা জানে একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। তারা নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নত জীবন পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে ডিজিটাল দেশ পেয়েছে। নৌকায় ভোট দেয়ার ফলেই স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সবকিছুর উন্নতি হচ্ছে। সারা বাংলাদেশে আমরা ৫৬০টি মডেল মসজিদ বানিয়ে দিচ্ছি। প্রত্যেকটা স্কুল-মাদ্রাসায় নতুন দালান করে দিচ্ছি। এমনকি মন্দির-মঠ যেগুলো বিএনপি ভেঙে দিয়েছিল সেগুলোও করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সবদিক থেকে সবার সেবা করে, সবার কাজ করে। জনগণের সেবক হিসেবে আমি সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।
সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে হবে। এই সমস্ত অশুভ শক্তি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে। সেইভাবে দেশের মানুষকে এদের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
ঢাকার উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৬ সালে আমি তেজগাঁওয়ের এমপি ছিলাম। এখনো আমি এমপি আছি। হাতিরঝিল প্রকল্পে দুর্গন্ধে এক সময় মানুষ সেখানে যেতে পারত না। সেই হাতিরঝিল আমরা দৃষ্টিনন্দন করেছি। দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ- প্রতিটি রাস্তা, তুলসী সেতু, মরিচা সেতু- সবই আমাদের করা। ঢাকা থেকে আশুলিয়ার রাস্তা- সেটাও আমার করা। কারণ এটা আমি বের করেছিলাম। ঢাকা-আরিচা রোড উন্নত করা, আরিচা থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত রাস্তাও আমরা করেছি। তেজগাঁও এক সময় শিল্পনগরী ছিল, সেটাকে আমরা বাণিজ্য নগরীতে রূপান্তর করে আরো উন্নত করে দিয়েছি। এয়ারপোর্ট রেলস্টেশন থেকে আন্ডারপাসের প্রকল্প নিয়েছি। একটা ওয়াটারওয়ে ও রিং রোড করে দেব। ঢাকা শহরের চারিদিকে চারটা স্যাটেলাইট টাউন হবে। এরই মধ্যে পূর্বাচল ও ঝিলমিল আমরা করে দিয়েছি। আরো করে দেব। যানজট নিরসনের জন্য মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসেওয়ে করছি। এগুলো সম্পন্ন হলে ঢাকায় কোনো সংকট হবে না।
তিনি বলেন, তেজগাঁওয়ে ট্রাক স্ট্যান্ডের অভাব। এর জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব, যিনি ঢাকার ডিসি ছিলেন, তাকে দায়িত্ব দিয়েছি- কোথায় ভালো জায়গা পাওয়া যায়, সেই জায়গা বের করে সেখানে একটা আধুনিক, উন্নতমানের ট্রাক স্ট্যান্ড যেন তৈরি হয়- সেই ব্যবস্থা আমরা করে দেব। সেইসঙ্গে বাসগুলো দাঁড়ানোরও জায়গা আমরা করে দেব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়