ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শোকজ

আগের সংবাদ

বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব : বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

পরের সংবাদ

চাহিদামতো মেলেনি অর্থ : খরচ করতে না পারায় কম বরাদ্দ স্বাস্থ্য খাতে

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে গুরুত্ব পায়নি স্বাস্থ্য খাত। করোনা মহামারির কারণে গত দুই অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাত বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছিল। তবে স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তাদের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ অর্থের সবটা ব্যবহার করতে না পারায় এই খাত গুরুত্ব কম পেয়েছে। ফলে মোট বাজেট বাড়লেও নতুন বাজেটে চাহিদামতো অর্থ পায়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য ৩৫ হাজার ৫০ কোটি টাকার প্রস্তাব দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয় সেই প্রস্তাবনায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতায় তিনি জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য স্বাস্থ্য খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে যা মোট প্রস্তাবিত বাজেটের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জন্য ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকার মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ৩ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা ও পরিচালন ব্যয় ৫ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা ।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এই বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জন্য ছিল ২৯ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১৫ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। আর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের জন্য বরাদ্দ ৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকার মধ্যে পরিচালন ব্যয় ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ২ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উন্নয়ন ব্যয়ে বরাদ্দ কমেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে কোনো

দেশের বাজেটের ১২ থেকে ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকা উচিত। গত কয়েকটি অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ৬ শতাংশের নিচেই রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বরাদ্দ কমানো হলে বেসরকারি চিকিৎসার প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়বে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে না পেরে আরো সংকটে পড়বে দরিদ্র রোগীরা।
মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন কেনাকাটাসহ নানা কারণে প্রতিবছর কিছু অর্থ ফেরত যায়। তবে চল?তি অর্থবছ?রে বরাদ্দের ম?ধ্যে কত টাকা ব্যয় হয়েছে আগামী ১৪ জুনের পর ?তা পুরোপুরি জানা যাবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, বরাদ্দের বেশির ভাগটাই চলে যায় কেনাকাটা, বেতন-ভাতায়। এদিকে আবার বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করার সক্ষমতাও আমাদের নেই।
বরাদ্দ কমার প্রভাব স্বাস্থ্য খাতে নেতিবাচক হবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ। তিনি বলেন, টাকা থাকলে খরচ করার একটা উপায় থাকে। কিন্তু না থাকলে তা আর সম্ভব হয় না। এর ফলে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় আরো বে?ড়ে যা?বে। এরই মধ্যে তা প্রায় ৭০ শতাংশ হয়েছে। এমন হলে বেসরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানু?ষের নির্ভরশীলতা আরো বাড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ালেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। বাজেট যতটা দেয়া হয় সেটাই ঠিকমতো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বার বার একটি অংশ ফেরত যাচ্ছে। মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য অনেক কিছুর সুষ্ঠু ও পরিকল্পনা কাঠামো দরকার। কিন্তু সেটি এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়