তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো দুজনের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

সিগন্যালের ভুলেই দুর্ঘটনা : শোকে কাতর পুরো ভারত > তিন ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ২৮৮, আহত সহস্রাধিক

পরের সংবাদ

বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব : বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** গরিববান্ধব বাজেট ** আইএমএফের পরামর্শে নয় ** মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কিত **

কাগজ প্রতিবেদক : আমাদের প্রত্যেকের দেশপ্রেম আছে। দেশপ্রেম আছে বলেই আমরা বারবার বিজয়ী হয়েছি। আমরা ফেল করি না। এ দেশের সবকিছুর মূলে হলো মানুষ। তাদের কর্মদক্ষতা, দেশের প্রতি তাদের মায়া-মমতা, দায়বদ্ধতা অসাধারণ এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এমন মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমার বিশ্বাস আমরা পরাজিত হব না, বিজয়ী হবই হব। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ বছরে আমরা যে বাজেটগুলো দিয়েছি, প্রতি বছরই বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, তা সব সময় প্রচার করেছি। ফেল করিনি, ইনশাল্লাহ আগামীতেও ফেল করব না। এটি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। এবারের বাজেট ধনী-গরিব সবার জন্যই উপকারী মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা থাকলেও নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব নয়। রাজস্ব বাড়াতে এবার কর আহরণে বাড়তি মনোযোগ দেয়া হলেও এতে আইএমএফের পরামর্শের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।
জাতীয় বাজেট ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল শুক্রবার রীতি অনুযায়ী ছয়জন মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থমন্ত্রী। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেটপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে যদিও প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে খানিকটা বিড়ম্বনায় পড়েন ‘স্মার্ট বাজেট’ দেয়া অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় মাইক্রোফোনে সমস্যা দেখা দিলে সমাধানে ছুটে যান অন্য মন্ত্রী-সচিবরাও। একের পর এক চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে নিতে সক্ষম হন অর্থমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, এনবিআর চেয়ারম্যান রহমাতুল মুমিন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা প্রমুখ।
এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুরো বাজেটই গরিব মানুষের জন্য উপহার। তিনি বলেন, দেশে অনেক মধ্যআয়ের মানুষ আছেন; কিন্তু তারা আয়কর দেন না। সময় এসেছে, তাদের আয়কর দিতে হবে। যারা আয় করেন কর দেয়ার সক্ষমতা আছে- তাদের কর দিতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে দেয়া রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ সরকার

যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে, তখন রাজস্ব আদায় ছিল ৬৯ হাজার কোটি টাকা। এখন আমাদের রাজস্ব ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ৬৯ হাজার কোটি টাকা থেকে যদি ৩ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছানো যায়- তাহলে এখন যেটা বাড়তি বলা হচ্ছে, তা আমরা অর্জন করতে পারব।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে আমি দুই কোটি মানুষের চাকরির ব্যবস্থার কথা বলেছিলাম। আমরা ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষকে চাকরি দিয়েছি। এটা খারাপ নয়, আমাদের ভালোই অর্জন। আস্তে আস্তে আমাদের কর্মসংস্থান বাড়ছে এবং কর্মসংস্থানের পরিধিও বেড়ে গেছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, আমি চাকরির ব্যাপারে যেসব কমিটমেন্ট বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাজেটে করেছিলাম সেগুলো রক্ষা করেছি। আমরা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কালচারটা জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছি। এ দেশে যে জিনিস তৈরি হবে, তা দিয়ে আমাদের প্রয়োজন মিটবে। এর মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরা নিজেরাও শঙ্কিত। সারা বিশ্বই এখন মূল্যস্ফীতিতে আছে। আমরা খাবার বন্ধ করতে পারব না। মানুষকে খাবার না দিয়ে রাখা যাবে না। আমরা একটু নমনীয়ভাবে এগোচ্ছি। যেসব কারণে এটি হয়, সেটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা ছাড় দিচ্ছি। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার মাধ্যমে প্রচুর খাদ্য সরবরাহ করছি। পাশাপাশি যেসব পণ্য নিত্যপ্রয়োজনীয়, সেখানে নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করে সরকারকে সাহায্য করছি। এভাবে আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করছি। মুস্তফা কামাল বলেন, যখন আমরা ক্ষমতায় আসি, তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশ। পরের ১০ বছরে সেটি ৬ শতাংশে নেমে আসে। সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। এখন খুব খারাপ সময়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা ভালো আছি। এবারো যেসব প্রজেকশন আমাদের আছে, সবই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব বলে আশা করি।
আইএমএফের সঙ্গে কাজ করাকে ভালো হিসেবেই দেখছেন মন্ত্রী। আইএমএফের দেয়া শর্তের ভিত্তিতে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে- এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের প্রেসক্রিপশনে বাজেট করিনি। তাদের পরামর্শের যেটুকু নেয়া যায় সেটুকু করব। সেখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আইএমএফের সঙ্গে কাজ করা ভালো। তারা শুধু আমাদেরটা নয়, সবারটাই দেখে, আর এ দেখাটা ভালো। আইএমএফের সঙ্গে যারা কাজ করে, আমি মনে করি এটা ভালো দিক এজন্য যে, তারা শুধু অর্থ দিয়ে মানে ঋণ দিয়ে সাহায্য করে না, পাশাপাশি কিছু প্রকল্পের পরামর্শ দেয়। সেগুলো কীভাবে কম সময়ে বাস্তবায়ন করা যাবে, এগুলোও তারা পরামর্শ দেয়। তাই আমি মনে করি, এসব থেকে শেখার অনেক কিছু থাকে এবং আমরা সমৃদ্ধ হই। তিনি বলেন, আমরা এখন বিশ্বের সবার সঙ্গে সম্পৃক্ত। কেউ আলাদাভাবে বসবাস করার কোনো সুযোগসুবিধা নেই। আপনি যদি আমদানি করেন, তাহলেও কাউকে লাগবে, রপ্তানি করলেও কাউকে লাগবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, আমি গত বছরের বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলাম, কেউ যদি অপ্রত্যাশিত টাকা দেশে নিয়ে আসে, তাহলে সেই টাকার কোনো কর দিতে হবে না। গত বাজেটে এ সুযোগটি দেয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রত্যাশিত টাকা বাংলাদেশে আসেনি। তাই এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়নি।
বিদ্যুৎ-জ্বালানি ঠিকমতোই সরবরাহ করা হচ্ছে : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। জ্বালানি-বিদ্যুৎ মর্যাদার জায়গায় এসেছে। আমরা ভালো ভালো শিল্পকারখানা গড়ে তুলছি। জ্বালানি-বিদ্যুৎ ঠিকমতোই সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কোভিডের পর বিশ্ব সংকটে পড়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানিসহ সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। জ্বালানির উপকরণ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। দেশের অর্থনীতি বিবেচনা করে অনেক বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ইউরোপে মূল্যস্ফীতি বেশি। এশিয়ায়ও প্রভাব পড়েছে। সরকার কৌশলী ভূমিকায় থেকে কাজ করছে। এ কারণেই মূলত জ্বালানি-বিদ্যুৎ ঠিকমতো সরবরাহ করা হচ্ছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধিও ভালো।
আইএমএফের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আইএমএফের কাছে ঋণ চাইলে তারা ‘ম্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইভাল্যুয়েশন’ করে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যবস্থা ভালোভাবে চলছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে, আইএমএফ এটা বলেছে। দেশের অর্থনীতি ভালো, খাদ্য ঘাটতিও নেই। ১৪ বছরে দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা যায়নি। আমাদের আর্থিক ব্যবস্থা ভালো, আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
১৪ বছরে একজনও না খেয়ে মারা যায়নি : আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১৪ বছরে দেশে একজন মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি বলে দাবি করেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, আমাদের সরকার সব সময় দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে বাজেট দেয়। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। গত ১৪ বছরে একজন মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি। এর আগে আমরা পত্রপত্রিকায় প্রায়ই দেখতাম মঙ্গাকবলিত এলাকায় মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনে আমাদের সরকার এবারের বাজেটেও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এ বছরও দারিদ্র্য বিমোচনে ১ কোটি পরিবারকে ১৫ টাকা দরে চাল দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে বরাদ্দ বাড়ানো হবে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব সময় আমরা মানুষের কথা চিন্তা করেই দিই।
অন্যদের তুলনায় আমরা ভালো আছি : পণ্যের দাম বাড়লেও অন্যদের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা ভালো বলে মনে করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ সময় মন্ত্রী বলেন, সারা পৃথিবীর দিকে তাকালে দেখবেন, আমরা কোন অবস্থায় আছি। নি¤œআয়ের মানুষের কিছু কষ্ট হচ্ছে, এটা অর্থমন্ত্রীও বলেছেন। আমরা কিন্তু এটি মাথায় রেখে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে ডাল-চিনি দিয়েছি। পেঁয়াজের দাম যখন বেড়েছে আমরা কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। টিপু মুনশি বলেন, আমরা আশা করছি সামনে আরো ভালো কিছু হবে। তবে অন্যদের তুলনায় দেখলে আমরা ভালো আছি।
বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিয়ে সমস্যা তৈরি করে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেসব পণ্য আমদানি করি তার দাম যদি বাড়ে বাজারেও এর প্রভাব পড়ে। কোথাও কোথাও সমস্যা আছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিয়ে সমস্যা তৈরি করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়