কাগজ প্রতিবেদক : প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কা নারী দলের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ নারী দল। লঙ্কানদের মাটিতে চলছে ওয়ানডে সিরিজ। গতকাল কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়ামে গতকাল লড়াই করার কথা ছিল দুই দলের। তবে গতকালের ম্যাচেও বিঘœ সৃষ্টি করেছে বৃষ্টি। প্রথম ম্যাচে এক ইনিংস খেলা চালানো গেলেও এবার মাঠেই নামতে পারেনি কোনো দল। শেষ পর্যন্ত টস না করেই দুই দলকে পয়েন্ট ভাগ করে দেয়া হয়।
আইসিসি নারী চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্গত এই সিরিজের দুই ম্যাচসহ এই নিয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতিদের টানা চার ম্যাচ পরিত্যক্ত হলো। আগামী ৪ মে একই ভেন্যুতে সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। সেই ম্যাচটিই হবে সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচ। পি সারা স্টেডিয়ামের ড্রেসিং রুমে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দলের খেলোয়াড়রা প্রস্তুত ছিলেন একে অপরের বিপক্ষে লড়াই করার জন্য। বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা খেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু করার সময় পিছিয়ে দেয়া হয়। একদিকে মাঠে চলতে থাকে ঝুম বৃষ্টি, আরেকদিকে অপেক্ষার বোঝা ভারি হতে থাকে খেলোয়াড়দের কাছে। শেষ পর্যন্ত টস হওয়ার আগেই পরিত্যক্ত করা হয় ম্যাচটি।
এর আগে গত শনিবারও লঙ্কান-টাইগ্রেসদের চলমান সিরিজের প্রথম ম্যাচ পরিত্যক্ত করা হয়। টস হেরে বোলিং আক্রমণে যায় টাইগ্রেসরা। দাপট দেখিয়ে লঙ্কান নারীদের আটকে দেয়ার পথে ছিল তারা। তবে শেষ পর্যন্ত তাদেরই আটকে দেয় বৃষ্টি। জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার পরিবর্তে জাহানারা-জ্যোতিরা পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ থেকে বিদায় নেন।
উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা জাতীয় নারী ক্রিকেট দল। ফলে বোলিং আক্রমণ সাজিয়ে জয় তুলে নেয়ার ছক আঁকেন টাইগ্রেস অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। অন্যদিকে জাহানারাদের চার-ছক্কায় ভাসিয়ে বড় সংগ্রহ গড়ার মিশন নিয়ে ক্রিজে আসেন মাধবী এবং ভিশ্মি গুণারতেœ। দুই ওপেনারের বিপরীতে বোলিং আক্রমণ শুরু করেন জাহানারা আলম। প্রথম বলেই সফলতা পান বাংলাদেশের এই প্রতিনিধি।
তার দুর্দান্ত বল বুঝতে না পেরে লেগ বিফোরের ফাঁদে পা ফেলেন মাধবী। গোল্ডেন ডাক মেরে তিনি সাজঘরের দিকে ফিরে যান। এরপর ক্রিজে আসেন বামহাতি ব্যাটার চামেরি আতাপাত্থু। তিনি প্রথম বল ডিফেন্স করে পরের বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শ্রীলঙ্কার রানের খাতা খোলেন। ওভারের পঞ্চম বলে তিনি এক রান নিয়ে স্ট্রাইক পরিবর্তন করেন যেন পরের ওভারে তিনি স্ট্রাইকে থাকতে পারেন। দ্বিতীয় ওভারে বোলিং আক্রমণে আসেন সুলতানা খাতুন। ওভারটিতে সুলতানার দুর্দান্ত বোলিয়ে এক রানও নিতে পারেননি আতাপাত্থু। তৃতীয় ওভারে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে আসেন জাহানারা। নিজের দ্বিতীয় ওভারে তিনি উইকেট তুলতে না পারলেও রান খরচে ছিলেন যথেষ্ট কৃপণ। সুলতানা তার প্রথম ওভারে সর্বোচ্চ সফলতা দেখালেও দ্বিতীয় ওভারে এসে প্রথম দুই বলই দেন ওয়াইড রেঞ্জে। এই অতিরিক্ত রান দেয়ার পর তার দ্বিতীয় বৈধ বলকে ছক্কায় ভাসান আথাপাত্থু। ওভারের শেষ বলে একটি চারও হাঁকান লঙ্কান ব্যাটার। জাহানারা-সুলতানার স্পেল থেকে উইকেট পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন অধিনায়ক জ্যোতি। ষষ্ঠ ওভারে বোলিং আক্রমণে পরিবর্তন এনে তিনি বল করতে পাঠান নাহিদা আক্তারকে। এরপর ফের সফলতা পায় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের বোলিং ইউনিট। প্রথম তিন বলে কোনো রান খরচ করেননি নাহিদা। চতুর্থ বলে লেগ বিফোরে আউট হয়ে বিদায় নেন ওপেনার ভিশ্মি। সাজঘরমুখী হওয়ার আগে এই ওপেনার ১৭ বলে ১১ রান করেন। এই ইনিংস গড়ার পথে তিনি দুটি বাউন্ডারিও হাঁকান। তিনি আউট হওয়ার পর চারে ব্যাটিং করতে নামেন ইমেশা দুলানি। নাহিদার আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে ম্যাচের ষষ্ঠ ওভারে কোনো রানই যোগ হয়নি লঙ্কান নারীদের স্কোরবোর্ডে। ছয় ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হতে শুরু করে আথাপাত্থুর দল। তবে এই লঙ্কান অধিনায়ক হাল ছাড়তে নারাজ ছিলেন। নিজের অবস্থান শক্ত করে তিনি নির্ভয়ে ব্যাট চালিয়ে যেতে থাকেন। ছক্কা হাঁকাতে না পারলেও তিনি চার মেরে রানে গতি দিচ্ছিলেন। তাকে থামাতে টাইগ্রেসদের চেষ্টা চালাতে হয় ম্যাচের একাদশ ওভার পর্যন্ত। নাহিদার বলে রান খরায় ভোগতে থাকেন দুলানি। এক রান নিয়ে তিনি স্ট্রাইক দেন অধিনায়কের কাছে। ফিফটির দ্বারপ্রান্তে থাকা অধিনায়ক আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে গিয়ে ধরা পড়েন ফারজানা হকের হাতে। নাহিদার কবলে পড়ে বিদায় নেয়া এই ব্যাটার ৩৭ বলে ৪৭ রানের ইনিংস গড়েন। এই ইনিংস গড়ার পথে আথাপাত্থু ৮টি চার এবং ২টি ছক্কা হাঁকান। তিনি আউট হওয়ার পর চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে বোলিং ইউনিটে সফলতার মুখ দেখে জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। এমন পরিস্থিতিতে নিলাকশি ডি সিলভা আউট হন ৯ বলে ২ রান করে ও ইমেশা দুলানি সাজঘরের পথ ধরেন ৩০ বলে মাত্র ১০ রান করে। তারা দ্রুত ফিরে গেলে একশর আগেই ৫ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। শতরান পেরোনোর পর প্রাসাদানি ভিরাক্কোডিকে ফিরিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম উইকেট নেন অভিষিক্ত সুলতানা খাতুন। প্রাসাদানি প্রতিরোধ গড়ে ৪৮ বলে ২৪ রানের ইনিংস গড়ে দলের হাল ধরার চেষ্টা চালান। এই ইনিংস গড়ার পথে একটি বাউন্ডারিও হাঁকিয়েছিলেন এই নারী ক্রিকেটার। তিনি ফিরে যাওয়ার পর রক্ষণাত্মক ক্রিকেট খেলতে থাকেন কাভিশা দিলহারি এবং ওশাদি রানাসিংহে। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে লঙ্কানদের স্কোরবোর্ডে ৩৫ রান যোগ হয়। এরপরই বিঘœ ঘটায় বৃষ্টি। এরপর আর খেলা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়ে দুই দল।