রাজউক : মুছে যাওয়া সাড়ে ২৬ হাজার নথি উদ্ধার

আগের সংবাদ

বাজারে ফের সিন্ডিকেটের থাবা! : কারসাজি করে বাড়ানো হচ্ছে দাম, নজরদারি জোরদারের তাগিদ বিশ্লেষকদের

পরের সংবাদ

৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচন : আ.লীগের গলায় ‘কোন্দল’ কাঁটা

প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** কোন্দল নিরসনে ২৮ সদস্যের মনিটরিং টিম ** লিটনের পক্ষে মাঠে নেই ডাবলু সরকার ও তার অনুসারীরা ** গাজীপুরে বাধা জাহাঙ্গীরের মা **

ঝর্ণা মনি : বিএনপিবিহীন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ফুরফুরে আমেজে বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন নৌকার মাঝিরা। তবে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত তৃণমূলে বিনা বাধায় ফসল তোলার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যেই তিন সিটিতে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। নিজস্ব বলয় আর পেশিশক্তির বাইরে এসে দলীয় প্রার্থীকে জেতানো চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীনরা। বিপর্যয় ঠেকাতে ইতোমধ্যেই আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নামছেন তারা। বহুল আলোচিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে ২৮ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন পর্যন্ত সক্রিয় থাকবে এই টিম। আর রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছে রাজশাহীর ১৪ দলীয় জোট। বাকি তিন সিটি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মূলত, প্রকাশ্যে বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে গাজীপুর ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। তবে মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ অনেকেই প্রকাশ্যে, আবার কেউ গোপনে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গাজীপুর সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা। শেষমেষ বাছাই পর্বে ঋণখেলাপির দায়ে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বৈধ হয়ে যায় তার মায়ের মনোনয়ন। এক্ষেত্রে গাজীপুরে জাহাঙ্গীর ইস্যু বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এছাড়া সিলেট ও বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে এবার বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে আওয়ামী লীগ। এ তিন সিটিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী বা অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। প্রকাশ্যেই অনেকে নৌকার বিরোধিতা করছেন। আবার বিদ্রোহীরাও শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
অন্যদিকে খুলনা ও রাজশাহীতে দলীয় প্রার্থীরা সহজেই বিজয়ী হবেন বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীনরা। সিলেটে নতুন মুখ প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর অবস্থান অপেক্ষাকৃত ভালো থাকলেও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থী হওয়া বিষয়টি দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। মেয়র আরিফ প্রার্থী হলে নৌকা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই। প্রায় একই চিত্র বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও। মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করায় বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহকে ঘিরে একটি বলয় তৈরি হয়েছে। ওই বলয়কে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করানো দুরূহ ব্যাপার। এছাড়া গত মে দিবসে নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত এবং বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীদের পৃথক কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে দ্ব›দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়।
এদিকে কোন্দলমুক্ত নয় রাজশাহীও। মহানগর আওয়ামী

লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও তার অনুসারীদের বাদ রেখেই রাসিক নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। ডাবলু সরকার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। গত মঙ্গলবার বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জমান লিটনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের রাজশাহী শাখা। খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলগতভাবেই আমরা মোকাবিলা করতে চাই। যারা প্রার্থী হবেন, তাদের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেই নির্বাচনে জয়লাভ করতে চাই। আমরা জানি না, বিএনপি প্রার্থী দেবে কি, দেবে না। তারা এবারও অতীতের মতো কূটকৌশল প্রয়োগ করতে পারে। সে বিষয়ে সতর্ক থেকে আমরা নির্বাচনে জয়ী হতে চাই।
সূত্রমতে, দলীয় কোন্দলের কারণে সিলেট ও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হেরেছিলেন। এসব কারণে দলীয় কোন্দল নিরসনে কাজ করছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। গাজীপুর সিটি করপোরেশন সমন্বয় টিমের প্রধান, আওয়ামী লীগের সভপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচন দেশবাসীর জন্য, আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে আমরা মাথা ঘামাচ্ছি না। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়ার জন্য আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
যা বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা : এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে দলীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা এই নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখতে চাই। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকবে এটা প্রত্যাশা করি।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচনে জয় লাভই আমাদের লক্ষ্য। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সব সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দেয়। আমাদের লক্ষ্য ও ভরসার জায়গা হচ্ছে জনমত ও জনগণের প্রত্যাশা। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, এই নির্বাচনকে আমরা পরীক্ষামূলক নির্বাচন হিসেবে নিয়েছি। বিএনপিসহ দিনরাত অপপ্রচারকারীদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থীর বিজয়ের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়