প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা : রাখী দাশ পুরকায়স্থ ছিলেন আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক

আগের সংবাদ

বধ্যভূমি দেখার দায়িত্ব কার : সারাদেশে ৫ হাজারের বেশি বধ্যভূমি, ২২ বছরে ২০টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ হয়েছে

পরের সংবাদ

চূড়ান্ত আন্দোলনের কৌশলই ঠিক করতে পারেনি বিএনপি : কর্মসূচি আসে লন্ডন থেকে, অন্ধকারে সিনিয়র নেতারা

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। এর আগেই আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে চায় বিএনপি। তবে ‘পদযাত্রা, মানববন্ধন কিংবা বিক্ষোভ সমাবেশ’- এসব কর্মসূচিতে কি সরকারের গদি নড়বে? এমন আলোচনা সর্বত্র। দলটির তৃণমূল থেকে ‘এক দফা’ আন্দোলনের জোর তাগিদ আসছে। কিন্তু কবে নাগাদ, কীভাবে, কোন ফরম্যাটে শুরু হবে এক দফার আন্দোলন- সেই কৌশলই এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি বিএনপি। যদিও নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রেখে নির্বাচনের কাছাকাছি গিয়ে বড় আন্দোলন গড়তে চায় বলে আভাস দিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতি হলো বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের খেলা। এতে টিকে থাকতে হলে সময়োপযোগী হতে হয়, সক্ষমতা ও সাহসের প্রমাণ দিতে হয়। থাকতে হয় প্রবল আত্মসমালোচনা। কিন্তু রাজনৈতিক কলাকৌশলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপি হেরে যাচ্ছে বারবার। এরই মধ্যে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসছে। কিন্তু বিএনপি এখনো তাদের আন্দোলন ও নির্বাচনী কৌশল ঠিক করতে পারছে না। দলটির আন্দোলনের গতি এখনো অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে।
গত বছরের জুলাই মাস থেকে বিএনপি ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে থাকলেও তা নিতান্তই সাদামাটা। বিভাগীয় গণসমাবেশ, গণবিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি, পদযাত্রা এবং শেষমেশ মানববন্ধন। বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে দেশব্যাপী আন্দোলনের যে উত্তাপ ছড়িয়েছিল; ১০ ডিসেম্বরের পর তা শীতল হয়ে গেছে। এরইমধ্যে দোনগোড়ায় রোজা-ঈদ। ঝড়বৃষ্টির দিনও এসে গেছে। এরপর শুরু হবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ক্ষণ গণনা। অথচ আন্দোলনের এই মোক্ষম সময়ে সংঘাতের ভয়ে বড় কর্মসূচি দেয়া থেকে বিরত থাকছে বিএনপি। এমনকি কর্মসূচির ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকেন দলটির স্থায়ী কমিটির গূরত্বপূর্ণ নেতারা। নতুন কর্মসূচির জন্য তারা অপেক্ষায় থাকেন লন্ডনের বার্তার। কখনো কর্মসূচির বিষয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্ত রাত পোহালেই পাল্টে যায়। চলতি মাসেই ‘ঢাকা চল’ কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা করেছিল বিএনপি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্তের পরদিনই সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়।
সরকার পতনে বিএনপির এক দফা আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, জনগণের বিরুদ্ধে যখন কোনো সরকার দাঁড়িয়ে যায় তখন কেবল নড়াচড়া নয়, ভূমিকম্প হয়। সেটা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফর্মে আসে। কখনো সেটা প্রতিবাদ সমাবেশ, সমাবেশ কিংবা ধর্মঘট, অবরোধের মধ্য দিয়ে আসে। সুতরাং বিএনপির সব প্রস্তুতিই রয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিস্থিতিই বলে দেবে কোন ফর্মে সেই আন্দোলন আসবে। যখন সরকার পড়তে বাধ্য হবে; তখনই এ আন্দোলনের সমাপ্তি হবে।
বিএনপির চলমান আন্দোলনে কিছুটা ভাটা পড়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাপারটি ঠিক তেমন নয়। এখানে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার রয়েছে। চলমান আন্দোলনে ১৭ জন কর্মী শহীদ হয়েছে। সিনিয়র নেতাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, ফলে মাঠের নেতাকর্মীরা অনেকটা চাপ অনুভব করছিল। তবে এখন নতুন কর্মসূচিগুলোতে কিন্তু নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, শত বাধা পেরিয়ে প্রথম ধাপের আন্দোলন কর্মসূচি সফল হয়েছে। এবার সরকারের ওপর চাপ তৈরির ভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা চলছে। যুগপৎ আন্দোলনে ধাপে ধাপে কঠোর কর্মসূচি আসছে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চলমান

আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতার বিকল্প নেই।
নেতাদের ভাষ্য- আমরা সংঘাত এড়িয়ে চলছি। কিন্তু ওরা যা কিছু করছে, সব উসকানিমূলক। শান্তি সমাবেশের নামে যে পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে, এটা পুরোপুরি সন্ত্রাসের উসকানি। আমরা চেষ্টা করছি সেটা ওভারকাম করতে। এরপরও যদি বাধে (সংঘাত), এর দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারের। তারা বলছেন, সরকারের হামলা মামলা উপেক্ষা করে আগের চেয়ে আরো বেশি প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে রাজপথে। ব্যর্থ হলে রাজপথে রক্ত ঝরানো, জীবন বিলিয়ে দেয়া কর্মীদের আত্মত্যাগ বৃথা হয়ে যাবে। দলকে দিতে হবে চরম মাশুল। তাই তো যে কোনো মূল্যে বিজয় পেতে প্রস্তুত করা হচ্ছে চূড়ান্ত আন্দোলনের ছক। সেই আন্দোলনে কর্মীদের নির্বাচন পর্যন্ত উজ্জীবিত রাখাই এখন বিএনপির প্রধান লক্ষ্য।
সরকার পতন আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ১০ দফা দাবি আদায়ে এক দফার আন্দোলনের কথাই ভাবছি। সেই কৌশল কী হবে তা আগেই বলা যাবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের রূপ পরিবর্তন হবে, যা নির্ভর করবে সরকারের আচরণের ওপর। তিনি বলেন, হাতে সময় আছে। বড় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি। নেতাকর্মীরা চাঙা থাকুক। তাছাড়া আগেও স্বৈরাচারী এরশাদকে হটিয়ে খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমরা জানি বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকে কীভাবে ক্ষমতা থেকে সরাতে হয়।
কর্মসূচির ধরন নিয়ে আলোচনা চলছে : সূত্র জানায়, ঢাকামুখী কর্মসূচির মাধ্যমেই চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি। লক্ষ্য অর্জনে যুগপৎ আন্দোলনে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন দলটির নেতারা। দাবি আদায়ে বিএনপির ১০ দফা ও গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফাকে সমন্বয় করে ৭ দফার যৌথ ঘোষণা দেয়া হবে। ঈদের পরই রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে ‘লংমার্চ’ বা ‘ঘেরাও’য়ের মতো কর্মসূচি আসতে পারে। যেখান থেকে সরকার হটানোর এক দফার আন্দোলন শুরু করার কথা ভাবছেন বিএনপির নেতারা। তবে এই কর্মসূচি কখন হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।
পাশাপাশি সমমনা দলগুলোর মাঠপর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলাপর্যায়ে সফর করে কমিটি গঠন ও পুনর্গঠন শুরু করেছেন। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী করতে সারাদেশে সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষ করেছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এসব বৈঠকে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে আন্দোলনের ব্যাপারে পারমর্শ না এলেও এলাকা ভিত্তিক দলের অভ্যন্তরীন দ্ব›েদ্বর চিত্র উঠে এসেছে। ফলে আন্দোলনের কর্মসূচি পালন ও অংশ নিতে ব্যর্থ ইউনিট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে। জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে ঘরোয়া বৈঠক, উঠান বৈঠক ও ধারাবাহিক মতবিনিময় চলছে। আন্দোলন ধাপে ধাপে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে বিভাগীয় গণসমাবেশ ও সভা-সমাবেশের পর দ্বিতীয় দফায় ইউনিয়ন পর্যায় থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু করেছে দলটি।
গ্রেপ্তার এড়ানোর পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের মুক্তির জন্যও নতুন কৌশলে মাঠে থাকার কথা জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, সাময়িকভাবে আন্দোলনের গতি কিছুটা ধীরে চললেও সামনের দিনে তা বাড়বে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পথ থেকে নেতাকর্মীরা যেন বিচ্যুত না হয়; সেদিকে খেয়াল রেখে সতর্কতার সঙ্গে আমাদের কর্মসূচিগুলো দিতে হচ্ছে। তবে সরকার পতনের কঠোর কর্মসূচি অবশ্যই আসবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়