সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের উদ্বেগ

আগের সংবাদ

কেন এত ভবন বিস্ফোরণ? : সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব, সামর্থ্যরে ঘাটতি আছে রাজউকের

পরের সংবাদ

সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্ট বিস্ফোরণ : নিয়ম না মেনেই চলছিল অদক্ষ-অনভিজ্ঞ জনবলে

প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টটি চলছিল। অদক্ষ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনভিজ্ঞ জনবল দিয়ে অক্সিজেন প্ল্যান্টের কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো এবং প্রতিষ্ঠানটির ৮টি ক্যাটাগরির মধ্যে ৬ সংস্থার কোনো অনুমোদন ছিল না। প্রাথমিক তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এদিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৭ জনের প্রাণহানির ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মামলা প্রক্রিয়াধীন। কবে নাগাদ মামলা রেকর্ড হবে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি বিস্ফারণের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। বিস্ফোরণের ঘটনার পর মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। আমাদের সঙ্গেও কেউ যোগাযোগ করেনি। প্রাথমিক তদন্ত শেষে হতাহতের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে এ বিষয়ে পুলিশ অথবা নিহতের স্বজনরা বাদী হয়ে মামলা করবে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস, কলকারখানার পরিদর্শক অধিদপ্তর ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে অপরিকল্পিতভাবে জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। ফায়ার সেফটি ছিল না। দুর্ঘটনা ঘটলে,

সবার যে অ্যাসেম্বলি পয়েন্ট- সেগুলোও ছিল না। নাইট্রোজেন অক্সাইড ও কার্বন ডাই অক্সাইড মজুতের কোনো অনুমোদন নেই। ছিল না পরিবেশের ছাড়পত্র, বিদ্যুৎ বিভাগ, বয়লার পরিদর্শক দপ্তর ও জেলা প্রশাসন অফিসের অনুমতিও। অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ জনবল দিয়ে প্ল্যান্টটি চালানো হচ্ছিল।
বিস্ফোরক অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিদর্শক এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট পরিদর্শন করে আমরা নাইট্রোজেন অক্সাইড ও কার্বন ডাই অক্সাইডের ব্যবহার পেয়েছি। অথচ এসব মজুতের কোনো অনুমোদন ছিল না। এছাড়া অদক্ষ কর্মচারীরা প্ল্যান্টটি পরিচালনা করত। তারা সেফটি ভাল্ব, পরিচালনার কাজের জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্রের ব্যবহারের কোনো কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি।
এদিকে সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে অক্সিজেন ছাড়াও অনুমোদনহীন কার্বন ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের সিলিন্ডার পাওয়া গেছে। এছাড়া এই অক্সিজেন প্ল্যান্টের এয়ার সেপারেশন কলাম থেকেই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করছে তদন্ত কমিটি। পরিদর্শনের পর কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান জানান, অক্সিজেন প্ল্যান্টে এয়ার সেপারেশন কলাম (বায়ু পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া) থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়েছে ধারণা। আমরা প্রথম দফা বৈঠকে বসে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পর্যালোচনা করেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করছি। স্টাডি করার জন্য আমাদের যা যা উপাদান দরকার সেগুলো সংগ্রহ করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, একেবারে প্রাথমিকভাবে অক্সিজেন প্ল্যান্টে এয়ার সেপারেশন কলাম থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হতে পারে। তবে এর জন্য অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন হতে পারে। কাজ শুরু করেছি। প্ল্যান্টে অক্সিজেন সিলিন্ডারের পাশাপাশি কার্বন ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেনের সিলিন্ডারও আমরা দেখেছি যেগুলোর কোনো অনুমোদন ছিল না।’
সামগ্রিক বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেকানিক্যাল সেটআপে বিভিন্ন ধরনের সেফটি ম্যাজারস থাকে। অনেকগুলো শর্ত প্রতিপালনের বিষয় থাকে। পুরো বিষয়গুলো তারা কতটুকু প্রতিপালন করেছে কিংবা কতটুকু করেনি, পরিচালনার জন্য টেকনিক্যাল পারসন যারা ছিলেন তাদের এবং মালিকপক্ষের কোনো গাফেলতি ছিল কিনা- সেগুলো আমরা থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে সামনে এনে তদন্ত করছি। মূল বিষয়গুলো তুলে আনব। দুর্ঘটনার জন্য যাদের দায় তদন্তে প্রমাণ হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রভাষ লাল শর্মা (৫৫) নামে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের অপারেটর পদে চাকরি করতেন। বিস্ফোরণের ঘটনায় এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো সাতজনে। গত রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চমেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। নিহত প্রভাষ লাল শর্মা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার ভাটিয়ারি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মতিলাল শর্মার ছেলে।
মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রভাষ লাল শর্মার ছোট ভাই নয়ন জানান, ঘটনার দিন আমার ভাই মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাত পান। পরে তাকে আহতাবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে আনা হয়। ডাক্তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে আমার ভাইকে আইসিইউর ১৫ নম্বর বেডে ভর্তি করে দেন। রবিবার আমার ভাই তার দুই সন্তানকে এতিম করে চলে গেলেন। আমাদের এখন সংসার কীভাবে চলবে জানি না।
চট্টগ্রামের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তরের প্রধান আবদুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাত বলেন, সীতাকুণ্ডে ৫৫০টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট একটি। প্রতিষ্ঠানটিতে পরিদর্শন করে বেশ কিছু সমস্যা পেয়েছিলাম। পরে মৌখিকভাবে তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়। এমনকি চিঠিও দেয়া হয়। তারা তখন ৩ মাসের সময় চেয়ে বেশ কিছু সমস্যার মধ্যে কিছু সমস্যা সমাধান করে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আরেকটি ইনেসপেকশন হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে বিস্ফোরণ হয়। একই মালিকের আরেকটি প্রতিষ্ঠান অটোরিয়েওলিং মিলও অনেকগুলো সমস্যা পাওয়ার পর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তর বাদী হয়ে চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বিকাল ৫টার দিকে সীতাকুণ্ডের কদমরসুলের কেশবপুর এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে কয়েক কিলোমিটার এলাকা। ঘটনাস্থলের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিটকে পড়ে বিস্ফোরিত ইস্পাতের টুকরো। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজন মারা গেছেন। আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো ১৮ জন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়