সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের উদ্বেগ

আগের সংবাদ

কেন এত ভবন বিস্ফোরণ? : সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব, সামর্থ্যরে ঘাটতি আছে রাজউকের

পরের সংবাদ

ইমরান খানের ভাষণ প্রচার নিষিদ্ধ : পাকিস্তানে ভাঙনের শঙ্কায় শেহবাজের জোট সরকার

প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : পাকিস্তানের জোট সরকার ভাঙনের মুখে পড়েছে। জোটসঙ্গী পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সিন্ধু প্রদেশের বন্যাদুর্গতদের দেয়া প্রতিশ্রæতি পূরণ করা না হলে তার দলের পক্ষে জোট সরকারে থাকা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। দেশটির প্রথম ডিজিটাল আদমশুমারি নিয়েও ক্ষমতাসীনদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ঘোষণা নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর তার বক্তব্য এবং সংবাদ সম্মেলন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
জোট গঠন করে ইমরান খানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়েছিল দেশটির বেশ কয়েকটি দল। পরে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে সরকারও গঠন করে তারা। এরপর বিরোধী নেতা হিসেবে ইমরান দেশটির ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিলেও এবার অসন্তোষ দেখা দিয়েছে খোদ জোট সরকারের ভেতরেই।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, প্রতিশ্রæতি পূরণ করা বা না করা নিয়ে পাকিস্তানের সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম শরিক পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) চেয়ারম্যান এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার যদি সিন্ধু প্রদেশের বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ দেয়ার প্রতিশ্রæতি পূরণ না করে তবে তার দলের পক্ষে ফেডারেল সরকারের অংশ হিসেবে থাকা খুব কঠিন হবে। করাচিতে গত রবিবার বন্যাকবলিত কৃষকদের জন্য বিআইএসপির অধীনে গমবীজে ভর্তুকি প্রদান প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে বিলওয়াল ভুট্টো কেন্দ্রীয় জোট সরকার নিয়ে এ মন্তব্য করেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সিন্ধু প্রদেশের খয়েরপুর জেলার বন্যাকবলিত পীর গুড্ডু এবং কোট ডিজি এলাকায় বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসন কাজ পরিদর্শন করেন এবং বন্যা দুর্গতদের জন্য ঘর নির্মাণের ঘোষণা দেন। রবিবার পিপিপি নেতা বিলওয়াল ভুট্টো তার তীব্র ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ফেডারেল সরকার বন্যার্তদের জন্য যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছে তা পূরণ করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে বন্যাকবলিত জনগোষ্ঠী কঠিন সময় পার করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত বন্যাদুর্গতদের অগ্রাধিকার দেয়া। তার ভাষায়,

‘যদি ফেডারেল সরকার বা প্রধানমন্ত্রী (শেহবাজ শরিফ) কোনো প্রতিশ্রæতি দিয়ে থাকেন, তাহলে সেগুলো পূরণ করতে হবে।’
সিন্ধু প্রদেশের ক্ষমতায় রয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। পিপিপি চেয়ারম্যানের মতে, সিন্ধুর ক্ষমতাসীন দল জাতীয় পরিষদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সামনেও বিষয়টি উত্থাপন করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ফেডারেল সরকার (প্রতিশ্রæতি পূরণের মাধ্যমে) তাদের উদ্বেগ দূর করবে।
এদিকে পাকিস্তানে চলমান দেশটির প্রথম ডিজিটাল আদমশুমারি নিয়েও ক্ষমতাসীনদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম এই ডিজিটাল আদমশুমারিকে ‘ত্রæটিপূর্ণ’ বলেও আখ্যায়িত করেন বিলাওয়াল ভুট্টো। একইসঙ্গে সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ চলমান আদমশুমারির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান তিনি।
অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় সিন্ধুতে আবাসন আদমশুমারির ফলাফলে ব্যাপক পার্থক্য ছিল উল্লেখ করে বিলাওয়াল বলেন, আমরা ২০১৮ সালের আদমশুমারির ফলাফলে আপত্তি জানিয়েছিলাম। ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকারের নাম উল্লেখ না করে বিলাওয়াল বলেন, ২০১৮ সালের সেই আদমশুমারি লক্ষ্য ছিল একটি ‘বাছাইকৃত’ দলকে ক্ষমতায় আনা। তার ভাষায়, ‘এমনকি আমি জানতামও না যে এবারের আদমশুমারি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে।’
বিলওয়াল বলেন, ‘যদি একটি বা দুটি প্রদেশে ভোট ভিন্ন আদমশুমারির ভিত্তিতে হয় এবং অন্য প্রদেশের নির্বাচন ত্রæটিপূর্ণ ডিজিটাল আদমশুমারির ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়, তবে তা পিপিপির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’ ফেডারেল সরকার এসব অভিযোগের কোনো প্রতিকার না করলে সিন্ধু সরকার ডিজিটাল আদমশুমারিকে সমর্থন করবে না বলেও ঘোষণা দেন পিপিপি চেয়ারম্যান।
পার্লামেন্টেবিরোধী জোটের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে গত বছরের ৯ এপ্রিল বিদায় নেয় ইমরান খানের পিটিআই সরকার। ১১ এপ্রিল পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফ। ১৯ এপ্রিল তিনি ৩৩ সদস্যের মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেন। এই সরকারের অন্যতম জোটসঙ্গী পিপিপি।
ইমরানের ভাষণ প্রচার নিষিদ্ধ : পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তব্য এবং সংবাদ সম্মেলন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি (পিইএমআরএ)। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আক্রমণ ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগ আনা হয়েছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। রবিবার পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরে এক বক্তৃতা দেয়ার পর এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ভাষণে ইমরান খান অভিযোগ করেন, গত বছরের এপ্রিলে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পেছনে সাবেক সেনাপ্রধান জাভেদ বাজওয়ার হাত ছিল।
পকিস্তান ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথোরিটি (পিইএমআরএ) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন- যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রতিকূল এবং জনসাধারণের শান্তি বিঘিœত করতে পারে।
এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ইমরান খানের ভাষণ এবং বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করল পিইএমআরএ। ঘোষণার ২ ঘণ্টা পর বেসরকারি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ‘এআরওয়াই নিউজ’-এর লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, লাহোরে ইমরানের বক্তব্য প্রচার করে আদেশ লঙ্ঘন করেছে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এআরওয়াইয়ের এক কর্মকর্তা।
গ্রেপ্তার এড়ালেন ইমরান খান : পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারে রবিবার লাহোরের জামান পার্কে তার বাসভবনে অবস্থান নেয় পুলিশ। তবে ইমরান খান গ্রেপ্তার এড়িয়ে গেছেন।
ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তোশাখানা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে টানা অনুপস্থিত থাকায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইমরান খানের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ইসলামাবাদের সেশন কোর্ট। আদালতের আদেশ কার্যকর করতে এদিন দুপুরে পাঞ্জাব পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ইসলামাবাদের ?পুলিশ ইমরান খানের বাসভবনে যায়। এদিকে দলীয় প্রধানকে গ্রেপ্তারে পুলিশ আসার খবরে পিটিআই নেতাকর্মী ইমরানের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। সে সময় পুলিশকে জানানো হয় যে, ইমরান খান বাসভবনে নেই।
যদিও এর আগে ইসলামাবাদের পুলিশ প্রধান বলেছিলেন, ‘ইমরান খানকে গ্রেপ্তার ছাড়া খালি হাতে ফিরে যাব না।’ তবুও শেষ পর্যন্ত তারা ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পিটিআই নেতাকর্মীর তীব্র বিক্ষোভের মুখে দুপুর দেড়টার দিকে ইমরান খানের বাসভবন ত্যাগ করে পুলিশ।
ইমরান খান তাহলে কোথায় আছেন? দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত এ নিয়ে তুমুল জল্পনা-কল্পনা চললেও, বিকাল ৫টার একটু আগে নিজ বাসভবন থেকে একটি টেলিভিশন পার্টি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন ইমরান খান। সে সময় তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়ার জন্য সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে রাষ্ট্রীয় উপহার কেনা ও বিক্রির তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে ইমরান খানের বিরুদ্ধে। যদিও সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়