ঝালনাথ খানাল : পশ্চিমারা নিজেদের স্বার্থে হুকুমজারি করছে

আগের সংবাদ

কে পাচ্ছেন ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার

পরের সংবাদ

আ.লীগ-বিএনপি তুলনা নয় > কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী : জঙ্গি-সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলবে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আবারো নৌকায় ভোট চাইলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে জনগণের কাছে দোয়া চান সরকারপ্রধান। আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণ চায় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, বিএনপি দেশের মানুষের কল্যাণ চায় না, মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারে, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি একপর্যায়ের দল হয় কীভাবে- এমন প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ওই দুই বড় দল বলেন- তারা ভুল করেন। বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না। গতকাল শনিবার নিজের নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গারহাট তালিমপুর-তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি। সবশেষ ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা এই মাঠে বক্তৃতা দেয়ার চার বছর পর গতকাল একই মাঠে জনসমাবেশে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর কোটালীপাড়ার প্রবেশ পথের সড়কগুলোতে নির্মাণ করা হয় অসংখ্য তোরণ। দুই পাশে টাঙানো হয় ডিজিটাল পোস্টার-ব্যানার ও বর্ণিল পতাকা। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে সমাবেশস্থলে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছালে গগনবিদারী স্লোগান ও করতালির মাধ্যমে উপস্থিত জনতা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে এর উত্তর দেন।
যারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে এক করে দেখে তাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে অনেক কথা বলেন। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনা করেন। কেউ কেউ বলেন, বড় দুই দল। যারা দুই বড় দল বলবেন, তারা ভুল করেন। আওয়ামী লীগ মানুষের সংগঠন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। আর বিএনপির সময়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের সৃষ্টি হয়। দেশ

দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। তারা

মানুষকে কিছু দেয়নি। মানুষের অর্থ লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তাদের মাঝে গঠনতন্ত্র আছে, সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামি দলের নেতৃত্বে আসতে পারবে না। খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক দুই জনই সাজাপ্রাপ্ত। অথচ, তারাই সেই দলের নেতা। সুতরাং, সেই দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গঠন হয়েছে আওয়ামী লীগ। আর জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। বিএনপি মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়। তারা সন্ত্রাস করে। বিএনপি সরকারের আমলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, ৫০০ স্থানে একসঙ্গে বোমা হামলা, ৬৩ জেলায় বোমা হামলা, মানুষের অর্থ সব লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে, উচ্চ আদালতের রায় আছে। বিএনপি প্রতিষ্ঠিতই হয়েছে অবৈধভাবে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী হিসেবে। বিএনপি নিজেরা নিজেদের গঠনতন্ত্র মানে না।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের সেই নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০টি সিট ৩০০ সিটের মধ্যে। আওয়ামী লীগ মহাজোট করেছিল, বিএনপির ছিল ২০ দলীয় জোট; বিএনপির নেতৃত্বে পেল ৩০টি সিট আর বাকি আওয়ামী লীগ, তাহলে এই দুই দল একপর্যায়ের হয় কীভাবে?
কেউ অপবাদ দিলে মানব না : পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ, দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে আসিনি। জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি। তাই কেউ যখন মিথ্যা অপবাদ দেয়। বিনা দোষে সে অপবাদ নিতে আমি রাজি নই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক অপবাদ দিতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি বলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছি।
উৎপাদন ব্যয়ের অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছি: এ সময় সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শত সড়ক, শত সেতু চালু হয়েছে একদিনে। যা কোনো সরকার করতে পারেনি। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই তা করে দিয়েছে। দেশের একটি পরিবারও ভূমিহীন থাকবে না। কেউ বাদ পড়লে ঘর করে দেয়া হবে। এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে, খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে। বিশ্ববাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে; তারপরও দেশে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে তাই বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। লন্ডনে দেড়শ ভাগ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। আমরা কথা দিয়েছিলাম দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করব, সেটা আমরা করেছি। আমরা যে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি তার অর্ধেক মূল্যে মানুষকে দিচ্ছি। আর সেচ কাজের জন্য আমরা ২০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছি। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। দেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাব।
অভিযান অব্যাহত : জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সন্তানের দিকে খেয়াল রাখার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে সবাই সতর্ক থাকবেন। আপনাদের সন্তানরা যেন মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের মাঝেই তো আমি ফিরে পাই আমার হারানো বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। আপনাদের এই স্নেহ ভালোবাসাই আমার একমাত্র শক্তি। আপনাদের জন্য সব সময় দোয়া করি, আপনারাও দোয়া করবেন। এ বাংলাদেশকে যেন উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে যেন গড়ে তুলতে পারি।
এদিকে কোটালীপাড়ার জনসভা মাঠে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখান থেকে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে ৪৩টি নবনির্মিত উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।
কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও শাজাহান খান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহাবুব আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক জি এম শাহাবুদ্দিন আজম।
কোটালীপাড়ায় জনসভা শেষে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় যান। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো শেষে ঢাকায় ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, উদ্বোধনের পর ষষ্ঠবারের মতো পদ্মা সেতু দিয়ে নিজ জেলা গোপালগঞ্জ যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গাড়ি বহরের ১২টি গাড়ির জন্য ১১ হাজার ৬৫০ টাকা টোল দিয়ে সেতু পার হন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়