যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যার মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

বিদেশিদের নজর ঢাকার দিকে : ব্যস্ত সময় পার করলেন ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

পাঁচজন শহীদের কথা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একাত্তরের পুরো মার্চটাই ছিল উত্তাল- সভা, শোভাযাত্রা, সেøাগান, মিছিল; অহরহ কারফিউ, কেউ মানত না কোনো কারফিউ। রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়া ছিল যেন পাকিস্তানি সেনা চলতে না পারে। ব্যারিকেড বানানো হতো সাধারণত রাস্তার ওপরে আড়াআড়ি ইট সাজিয়ে। তখন থাকতাম খালিশপুরে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের অফিসার্স কলোনিতে। ২৬ মার্চ সকালে নিত্যদিনের মতো মোটরসাইকেল নিয়ে মিলের বড় গেট পেরিয়ে ইপিআইডিসি রোড ধরে গেলাম বাজারে। বাজারে পৌঁছেই হতভম্ভ; সবাই ত্রস্তে ঝাঁপি নামিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালাচ্ছে- পাকিস্তানি মিলিটারি এসে গেছে। আমিও ছুটলাম। মোটরসাইকেলে যখন মাড়োয়ারী জুট মিল বরাবর ইপিআইডিসি রোডে উঠলাম, পেছন ফিরে দেখি পিঠে ভারী অস্ত্র ঝুলিয়ে খাকি পোশাকের বহু মিলিটারি রাস্তার ওপর থেকে ইটের ব্যারিকেড সরাচ্ছে। যে ইপিআইডিসি রোড প্রতিদিন ছিল মিছিলে সরব, আজ তা জনমানবশূন্য। নিউজপ্রিন্ট মিলের দিকে ফিরছি, পেছনে অস্ত্রধারী মিলিটারি, পিঠটা ছম ছম করছিল- যদি একটা গুলি এসে পিঠে লাগে! ঊর্ধ্বশ্বাসে নিউজপ্রিন্টের গেটের ভেতরে ঢুকে স্বস্তি পেলাম।
বাসায় পৌঁছলাম। কী হয়েছে জানার জন্য রেডিও শোনার চেষ্টা করলাম। ঢাকা রেডিওতে নিত্যদিনের মতো সেই জয় বাংলার উদ্দীপনাময় গান নেই। ৭ মার্চের হরতালের ঘোষণার পর থেকে কাজকর্ম ছিলই না। অফিসে নিয়মিত কেউ যেত না। আজ সব কিছু থমথমে। উৎকণ্ঠিত আমি। একসময় ঢাকা রেডিওতে ঘোষণা এলো- সন্ধ্যায় ইয়াহইয়া খান ভাষণ দেবেন। এই অস্বাভাবিক পরিবেশে দুপুরে বের হলাম, কলোনির ভেতরেই। খালিশপুরের প্রধান সড়ক ইপিআইডিসি রোডের পুব পাশ ঘেঁষে পরিত্যক্ত রেললাইন, তার পুবে উঁচু পাঁচিলঘেরা নিউজপ্রিন্ট মিল- বিশাল এলাকা; মিলের মূল ভবনের দক্ষিণ দিকে পাঁচিলঘেরা আবাসিক এলাকা। আবাসিক এলাকার পূর্ব প্রান্তে নদীর পাড়ে সিনিয়র অফিসার্স কলোনি, সিনিয়র কলোনির পশ্চিম প্রান্তে আমার বাসা। পশ্চিমের পাঁচিল পার হলে জুনিয়র কলোনি, খেলার মাঠ, তারপর মসজিদ, তার পশ্চিমে চারতলা দালানে শ্রমিকদের আবাস। চারতলা দালানের পশ্চিমেই পাঁচিল ঘেঁষে রেললাইন ইপিআইডিসি রোড। সিনিয়র কলোনির পাঁচিল পেরিয়ে ঢুকলাম জুনিয়র কলোনিতে। নানা জায়গায় বিক্ষিপ্ত জটলা। উৎকণ্ঠা সবার মাঝে। বিকাল ৩টার দিকে কলকাতা রেডিওতে ভেসে এলো, ‘আকাশবাণী কলকাতা, একটি বিশেষ সংবাদ, পূর্ববঙ্গে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে’- এরপর খানিক নীরবতা, তারপর ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ এই গানের এইটুকুই মাত্র। অনুষ্ঠানের মাঝে মাঝে ঘন ঘন এই সংবাদ, এই গান। কিন্তু কোথায় গৃহযুদ্ধ? সবারই প্রশ্ন- কোথায় গৃহযুদ্ধ? চারদিকে তো সব চুপচাপ। অস্বাভাবিক নীরবতা। শুধুই উৎকণ্ঠা। আমরা কোনো খবরই জানি না। আজ ঢাকা রেডিওতে অনুষ্ঠানও অস্বাভাবিক; কোনো সংঘর্ষ গুলি বা এমন কোনো খবর নেই। বাইরে যাওয়ার উপায় নেই- ইপিআইডিসি রোডে পাকিস্তানি আর্মি, অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত, পুরোদস্তুর কারফিউ।
২৬ মার্চ রাত ৮টার দিকে ইয়াহইয়া খানের ভাষণ। প্রচণ্ড উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনা নিয়ে শুনছি। এ কী শুনছি! শিহরিত হচ্ছি, কাঁপছি। এ কী বলছেন তিনি! তিনি বলছেন, পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন চলছে; আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করা হয়েছে; তিন সপ্তাহ ধরে তারা বৈধ কর্তৃপক্ষকে অমান্য করছে; তারা (পূর্ব পাকিস্তানিরা) জাতীয় পতাকার অপমান করেছে, জাতির পিতার ছবি পায়ে মাড়িয়েছে, সৈন্যবাহিনীকে হুমকি দিয়েছে; তারা সমান্তরাল প্রশাসন চালিয়ে যাচ্ছে; এই অপরাধ বিনা শাস্তিতে যাবে না; শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহযোগীরা দেশের শত্রæ … ইত্যাদি। এ কী কথা? পাকিস্তানের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী নিরঙ্কুশভাবে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দলকে ভোট দিয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দলই পাকিস্তানের প্রকৃত প্রতিনিধি। তারাই তো পাকিস্তান। তাদের সঙ্গেই তো ঢাকায় বসে ইয়াহইয়া খান আলোচনা করছিলেন। মাত্র ক’দিন আগে শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইয়াহইয়া খান। তাদের কী করে রাষ্ট্রের শত্রæ বলা হয়? বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে কী করে শাস্তির হুমকি দেয়া হয়! আমার ২৪ বছর বয়সের রক্ত টগবগ করছে, থর থর করে কাঁপছি। ফিরোজা বেগমকে বললাম, দেশে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে। বেরিয়ে এলাম। কোথায় যাব? নদীর দিকে কোলাহল। সেখানে টেনিস কোর্টের পাশে অনেকে জড়ো হয়েছেন। অনেকের হাতে বন্দুক, অনেকের পিঠে বন্দুক। আমরা সবাই নিউজপ্রিন্ট আর হার্ডবোর্ড মিলের সাধারণ কর্মকর্তা। সবাই উত্তেজিত। সহকর্মী সেকেন্দার সাহেবের বাসা থেকে বন্দুক আর গুলি নিয়ে বের হলাম- তার হাতে বন্দুক, আমার হাতে আমার সব পকেটে সর্বত্র বন্দুকের গুলি ভর্তি। অস্থির সবাই ঠিক করলাম যে ইপিআইডিসি রোডে যাব, ওখানে পাকিস্তানি মিলিটারির সঙ্গে যুদ্ধ হবে। সবাই এগোলাম কিন্তু আমাদের গতি রোধ করলেন কয়েকজন বয়স্ক সহকর্মী; তাদেরও কাঁধে বন্দুক। ওরা সাবেক সৈনিক।
আমাদের পথ রোধ করে ওরা বলল, পাকিস্তানি আর্টিলারি বাহিনী নেমে গেছে, ওদের হাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র, এসব পাখি মারা বন্দুক নিয়ে ওদের সামনে দাঁড়াতে পারবে না, সবাই শেষ হয়ে যাবে, বোকামি করো না। আমরা ওদের ভাবলাম ভীরু কাপুরুষ! আমাদের নেতা বলেছেন- তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রæর মোকাবিলা করবা। এরা কীসের ভয় দেখায়? আমরা এগিয়ে চললাম। ওরা যেতে দিল না। উত্তেজিত সবাই। প্রশ্ন একটাই- কোথায় কীভাবে যুদ্ধ করব? সংগ্রাম কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান সাহেব রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকলেন। রাত ১১টা থেকে অবিরাম চেষ্টা। নেতাদের কাছ থেকে জানব কোথায়, কখন আমরা সবাই একত্রিত হবো, লড়ব। কিন্তু টেলিফোনে কাউকে পাওয়া গেল না। অবিরাম চেষ্টা কিন্তু কোনো সাড়া নেই। রাত ৩টার দিকে সবাই বাসায় ফিরলাম, সবাই একত্রিত হবো এই প্রত্যয়ে।
২৭ মার্চ সকালে বের হয়ে আগের রাতের সেই জায়গায় কাউকে পেলাম না। বুঝলাম সবাই ইপিআইডিসি রোডের দিকে গেছেন, কারণ সেখানেই মিলিটারি। আমি মিলের মেইন গেটের দিকে যাচ্ছি। রাস্তায় তেমন কেউ নেই। হঠাৎ গুলির আওয়াজ, পশ্চিম দিক থেকে। বুঝতে পারছি, সবাই ইপিআইডিসি রোডের গায়ে মিলের যেসব বিল্ডিং আছে, সেখানে পজিশন নিয়েছে। দ্রুত হাঁটলাম। মাত্র কয়েক গজ দূরে আমার সহকর্মীরা পজিশন নিয়ে আছে। আবার গুলি। এগোচ্ছি। এমন সময় ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা- ইপিআইডিসি রোড থেকে গুলি আসছে, বৃষ্টির মতো গুলি, আগে কখনো শুনিনি এমন। তবুও এগোচ্ছি। মনে হচ্ছে যেন ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা গুলিগুলো আমার মাথার ওপর দিয়ে শোঁ শোঁ করে উড়ে যাচ্ছে। ভীষণ উত্তেজনা শিহরণ নিয়ে গুলিবৃষ্টির তলা দিয়েই এগোচ্ছি। গুলিগুলো কোথায় যাচ্ছে ভাবিনি, লাগলে কী হবে ভাবিনি। ভাবনা একটাই- ওরা আমাদের বলেছে ‘শত্রæ’, ওদের পরাস্ত করতে হবে। এমনি সময় প্রচণ্ড এক আওয়াজ-বুম। সে কী আওয়াজ! আমার বুকটা কেঁপে উঠল, এত বিশাল আওয়াজ যে পাশে নিউজপ্রিন্ট মিলের মূল ভবনটাও কেঁপে উঠল। থমকে গেলাম, থেমে গেলাম। হ্যাঁ, পেছনের নদী থেকে গানবোটের কামানের আওয়াজ। একের পর এক। সামনে মেশিনগানের গুলি, পেছনে গানবোটের কামান। আর কয়েক সেকেন্ড এগোলেই আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে মিলব, যারা মিলের মেইন গেটের পাশে দোতলা হাসপাতাল ভবনে অস্ত্র নিয়ে পজিশন নিয়ে আছে। হঠাৎ প্রচণ্ড একটা ধাক্কা, প্রায় পড়ে গেলাম। সামলে নিয়ে দেখি আমার প্রতিবেশী খলিল সাহেব ধাক্কা দিয়েছেন, সাবেক সৈনিক। আমাকে ধমক দিলেন, এগাবেন না, মারা যাবেন, মিলিটারি ভেতরে ঢুকে গেছে।
ইপিআইডিসি রোডের সঙ্গের রেললাইনের গায়ে বিভিন্ন ভবনের বারান্দা আর ছাদে যেসব বন্ধুরা বন্দুক নিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন, রাস্তায় টহলরত পাকিস্তানি আর্মির ট্রাক লক্ষ্য করে তারা বন্দুকের গুলি ছোড়েন। গুলিতে পাকিস্তানি সেনা আহত, রক্তাক্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে আর্মির ট্রাকের বহর থেমে যায়। মুহূর্তের মধ্যে সৈন্যরা ট্রাক থেকে লাফিয়ে পড়ে ইপিআইডিসি রোডের পশ্চিমের ঢালে পজিশন নিয়ে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে ফায়ার করতে থাকে- ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা অবিশ্রান্ত। সামনে পাকিস্তানি সেনাদের গুলি বৃষ্টি, পেছনে গানবোটের গোলা। এরই ছত্রছায়ায় পাকিস্তানি সেনারা ক্রলিং করে এসে উঁচু পাঁচিল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে মেইন গেট খুলে ফেলে। আমি তখন মেইন গেটের খুবই কাছে। খলিল সাহেব ধাক্কা দিয়ে ফিরিয়ে না দিলে শেষ হয়ে যেতাম। যেসব বিল্ডিংয়ে সহযোদ্ধারা পজিশন নিয়ে ছিল, সেসব স্থানে ভারী অস্ত্র নিয়ে সৈন্যরা পৌঁছে গেল। এমনকি শ্রমিক কলোনির চারতলা বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি দিয়ে চারতলায় উঠে গেল তারা। আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি, আমাদেরই দালানে সিঁড়ি বেয়ে ওরা উপরে উঠে আসবে আমাদেরই কাছে।
মেইন গেটের পাশে হাসপাতালের করিডোরে বারান্দায় তারা ত্রস্তে খোঁজাখুঁজি করতে লাগল। মিলের হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের যেসব সহযোদ্ধা অস্ত্র হাতে স্থান নিয়েছিল, পাঞ্জাবীদের ভারী অস্ত্র আর নারকীয় হিং¯্রতা দেখে তড়িত গতিতে তারা গোপন জায়গা খুঁজে নিল, সঙ্গে রইল নিশ্চিত মৃত্যুর আতঙ্ক। হাতে বন্দুক নিয়ে যেসব বাঙালি সহকর্মী মিলের শ্রমিক কলোনির চারতলার ঝুলবারান্দায় ইপিআইডিসি রোডের দিকে বন্দুক তাক করে তৈরি ছিল, মিলিটারিরা সেই চার তলায় উঠে ঘরের ভেতর দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দু’হাত দূর থেকে গুলি করে তাদের বুক ঝাঁজরা করে দিল, তাতেও ক্ষান্ত হয়নি, বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। পাখি মারা বন্দুকধারীরা শুধু দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিং¯্র আর্টিলারির সামনে বুক পেতে দিল। একে একে বিভিন্ন ভবনে পাঁচজনের বুক ঝাঁজরা হয়ে গেল। কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে পাঁচটি প্রাণ নিজেদের ঘরের বারান্দায় শোণিত প্রবাহে নিঃশেষিত হলো। প্রতিপক্ষের অস্ত্র-ক্ষমতা আর নৃশংসতা সম্পর্কে ধারণাবিহীন দেশপ্রাণ সাধারণ মানুষের এমনই ছিল আত্মাহুতি। এই আত্মাহুতি দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ লড়াইয়ের সূচনা।
ঘটনার এমন আচমকা পরিণতিতে ভীত-বিহ্বল সবাই। উত্তেজনা আর কল্পনার চেয়ে যুদ্ধের প্রথম মুহূর্তের বাস্তবতা ছিল ভয়াবহ। ঘরে প্রতীক্ষায় রইলাম। একসময়ে সামনের বাসার সাঈদ সাহেব এলেন। সাঈদ সাহেব সিকিউরিটি অফিসার, দীর্ঘদিন ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি সেনা ও বিমানবাহিনীতে ছিলেন। তার শরীরের সামনের ভাগ, বুকের সাদা জামা রক্তে লাল। তিনি এবং তার মতো আরো কয়েকজন মিলে লাশগুলো নামিয়েছেন, মসজিদের কাছে দাফন করেছেন। মৃতদেহ সমাধিস্থ করার রীতিনীতি পালনের প্রশ্নই আসেনি, সরঞ্জাম মেলেনি- অবরুদ্ধ চারিধার, নিশ্চল গৃহবাসী। এই পাঁচজন শহীদের নামও মুছে গেছে। কোনো স্বীকৃতি বা উপাধি মেলেনি তাদের। তাদের পরিবার কোনো সহায়তা পেয়েছেন বলেও শুনিনি। কেউ তাদের মনে রাখেনি। সেদিন খালিশপুর ইপিআইডিসি রোডের পাশের অন্যান্য জুট মিলে, দৌলতপুরে, ফুলতলায় এমনই ঘটনা ঘটেছে। একসময়ে আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে উঁচু থেকে উঁচুতে উঠেছে, দূর থেকে আরো দূরে। রেললাইন আর রাস্তার পাশে দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের যেসব ঝুপড়ি ঘর ছিল তার বাসিন্দাদের নির্বিচারে হত্যা করা হলো; আগুন লাগানো হলো তাদের কাঁচা ঘরগুলোতে যেন মিলিটারি চলার পথ নিষ্কণ্টক হয়। সমান্তরাল প্রশাসনের শাস্তি এই।
এই পাঁচজনের মতো লাখ লাখ শহীদ মিশে আছে এ মাটিতে- গ্রামগঞ্জে, শহরে-বন্দরে। কী পেলাম!! ‘বীরের এ রক্ত¯্রােত, মাতার এ অশ্রæধারা/ এর যত মূল্য সে কি ধরার ধুলায় হবে হারা?/ . . বিশ্বের ভান্ডারী শুধিবে না এত ঋণ?’

এ এফ এম মাহবুবর রহমান
নজরুল গবেষক ও লেখক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়