যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যার মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

বিদেশিদের নজর ঢাকার দিকে : ব্যস্ত সময় পার করলেন ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর থেকেই, যা বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন এবং পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে তাৎক্ষণিক কোনো ঘোষণা না দেয়া হলেও বাংলাকে অবমূল্যায়ন করার একটি প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে গঠিত ‘পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিস’ ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ শীর্ষক একটি পুস্তিকায় বাংলাকে পূর্বপাকিস্তানের শিক্ষার বাহন ও আইন-আদালত ও অফিসাদির ভাষা করার প্রস্তব করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ৫ ডিসেম্বর করাচিতে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করা হয়, যেখানে পাকিস্তানের তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান, মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার ও আবদুল হামিদ ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এ সংবাদ ৬ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে প্রকাশিত মর্নিং নিউজ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্রদের প্রতিবাদ সভায় প্রস্তাব গৃহীত হয়, বাংলাকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম করা হোক। এটিই রাষ্ট্রভাষার দাবি নিয়ে ছাত্রদের প্রথম সমাবেশ। ওই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন তমদ্দুন মজলিসের সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কাসেম। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। ওই অধিবেশনে কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারের পক্ষে একটি সংশোধনী প্রস্তব উত্থাপন করেন। তিনি যুক্তি প্রদর্শন করেন, পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লাখ জনগণের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ব বাংলার) ৪ কোটি ৪০ লাখ লোকের ভাষা বাংলা বিধায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের ভাষাই রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী তীব্র ভাষায় এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। দুঃখের বিষয়, মুসলিম লীগের কোনো বাঙালি সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে সমর্থন করে কথা বলেননি। পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনও উর্দুর পক্ষ অবলম্বন করেন। ১১ মার্চ গণপরিষদে প্রস্তাব পাস হয় যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের আচরণ বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘…১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ যখন করাচিতে গণপরিষদে এ মর্মে প্রস্তব পাস করা হলো যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, তখন থেকেই বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত। তখন কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত একা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। আমি অবাক হয়ে যাই, ওই সময় আমাদের বাঙালি মুসলিম নেতারা কী করেছিলেন?’ পশ্চিম পাকিস্তানের সংবিধান সভার বৈঠক চলাকালীন পূর্ব বাংলার ছাত্র ও সচেতন মহল বুঝতে পারল যে, বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে। গণপরিষদে বাংলা ভাষাবিরোধী সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে ঢাকায় ছাত্রসমাজ ২৬ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট পালন করে। বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি সভা আহ্বান করা হয়। কামরদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় ১১ মার্চ পূর্ব বাংলায় ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং দিনটিকে ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এ সভাতেই ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’-কে সর্বদলীয় রূপ দেয়া হয়। ১১ মার্চের কর্মসূচি সফল করার জন্য সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নেতারা জেলায় জেলায় সফরে বেরিয়ে পড়েন। তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর, যশোর হয়ে দৌলতপুর, খুলনা ও বরিশালে ছাত্রসভা করেন। ১১ মার্চ ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ উপলক্ষে পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ওইদিন ভোরে শত শত ছাত্র ইডেন বিল্ডিং, জিপিও ও অন্যান্য জায়গায় পিকেটিং শুরু করেন, যার ফলে পুরো ঢাকা শহর পোস্টারে ভরে গিয়েছিল, ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশ লাঠিচার্জ করে, নানা জায়গায় অনেক ছাত্র আহত হন, শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদসহ ৭০-৭৫ জন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়, ফলে আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। স্বাধীন পাকিস্তানে এটিই শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম গ্রেপ্তার।
১১ মার্চের আন্দোলন ও ধর্মঘটের প্রস্তুতির জন্য শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্য নেতারা আগেই ঢাকায় চলে এসেছিলেন, ১০ মার্চ রাতে ফজলুল হক হলে রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের এক সভা হয়, সভায় কয়েকজন বক্তার আপসকামী মনোভাব দেখে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সরকার কি আপস প্রস্তাব দিয়েছে? নাজিমুদ্দিন সরকার কি বাংলা ভাষার দাবি মেনে নিয়েছে? যদি তা না হয়ে থাকে, তবে আগামীকাল ধর্মঘট হবে, সেক্রেটারিয়েটের সামনে পিকেটিং হবে, শেখ মুজিবুর রহমানকে সমর্থন দিয়েছিলেন অলি আহাদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, মোগলটুলীর শওকত আলি ও শামসুল হক সাহেব। অলি আহাদ তার ‘জাতীয় রাজনীতি-৪৫ থেকে ৭৫’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘সেদিন (১০ মার্চ) সন্ধ্যায় যদি মুজিবুর রহমান ভাই ঢাকায় না পৌঁছতেন, তাহলে ১১ মার্চের হরতাল, পিকেটিং কিছুই হতো না।’ আন্দোলন যাতে ঝিমিয়ে না পড়ে সেজন্য ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্র সমাবেশ ডাকা হয়। ওই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। বিখ্যাত আমতলায় এটিই শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম সভা। তিনি আন্দোলনের কিছু দিকনির্দেশনা দেন। যেসব শর্তের ভিত্তিতে সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে সরকারের আপস হয়েছে, সেসব মেনে চলতে হবে। তবে সভা খাজা নাজিমুদ্দিন কর্তৃক পুলিশি নির্যাতনের যে তদন্ত হবে, তা মানতে রাজি নয়। শেখ মুজিবুর রহমান বললেন, ‘ঠিক আছে, আমরা প্রস্তাবটি শুধু পরিবর্তন করতে অনুরোধ করতে পারি, এর বেশি কিছু না,’ সিদ্ধান্ত হলো শোভাযাত্রা করে আইন পরিষদে গিয়ে খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে এ দাবি পেশ করে চলে আসবে। কিন্তু ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবুর রহমানের কথা মানেনি। দিনভর অনেক ছাত্র-জনতা আইন পরিষদের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে, পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে, ছাত্র-জনতাকে নিবৃত্ত করতে শেখ মুজিবুর রহমান আবারো সেখানে ছুটে যান এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জের মুখোমুখি হতে হয়।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন শুধু ঢাকায়ই সীমাবদ্ধ ছিল না, দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলা পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ ভাগ লোকের মাতৃভাষা। তাই বাংলাই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। তবুও আমরা বাংলা ও উর্দু দুইটা রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করেছিলাম।’ পশ্চিম পাকিস্তানে সংবিধান সভার বৈঠক চলাকালীন পূর্ব বাংলার ছাত্র ও সচেতন মহল বুঝতে পারল যে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে। গণপরিষদে বাংলা ভাষাবিরোধী সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে ঢাকায় ছাত্রসমাজ ২৬ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট পালন করে, বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২ মার্চ ফজলুল হক হলে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি সভা আহ্বান করা হয়েছিল, কামরউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় ১১ মার্চ পূর্ব বাংলায় ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল এবং দিনটিকে ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এ সভাতেই ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’-কে সর্বদলীয় রূপ দেয়া হয়। ১১ মার্চের কর্মসূচি সফল করার জন্য সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নেতারা জেলায় জেলায় সফরে বেরিয়ে পড়েন, তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর, যশোর হয়ে দৌলতপুর, খুলনা ও বরিশালে ছাত্রসভা করেন। ১১ মার্চ ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ উপলক্ষে পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ওই দিন ভোরে শত শত ছাত্র ইডেন বিল্ডিং, জিপিও ও অন্যান্য জায়গায় পিকেটিং শুরু করেন। পুরো ঢাকা শহর পোস্টারে ভরে যায়। ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশ লাঠিচার্জ করে, নানা জায়গায় অনেক ছাত্র আহত হন, শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদসহ ৭০-৭৫ জন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়, ফলে আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। স্বাধীন পাকিস্তানে এটিই শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম গ্রেপ্তার। রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন শুধু ঢাকায়ই সীমাবদ্ধ ছিল না, দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলা পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ ভাগ লোকের মাতৃভাষা। তাই বাংলাই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। তবুও আমরা বাংলা ও উর্দু দুইটা রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করেছিলাম।’ পাকিস্তÍন প্রতিষ্ঠার প্রায় ৭ মাস পর ১৯ মার্চ পাকিস্তানের জাতির পিতা গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা সফরে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। তার ঢাকা ত্যাগ করার পর ছাত্রদের মধ্যে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে কিছুটা দ্বিধা ও হতাশার জন্ম হয়েছিল। কারণ পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানেই জিন্নাহর গ্রহণযোগ্য ভাবমূর্তি ছিল। ছাত্রসমাজের এ দ্বিধাদ্ব›েদ্ব সময় কেউ কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে জিন্নাহর অবস্থানকে সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের দূরদর্শিতা লক্ষ্য করা যায়। তিনি বলেন, ‘নেতা অন্যায় করলেও ন্যায়ের স্বার্থে তার প্রতিবাদ করতে হবে। বাংলা ভাষা শতকরা ৫৬ জন লোকের মাতৃভাষা, পাকিস্তান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সংখ্যাগুরুদের দাবি মানতেই হবে, রাষ্ট্রভাষা বাংলা না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব।’ সাধারণ ছাত্ররা শেখ মুজিবুর রহমানকে সমর্থন করলেন, এরপর ভাষার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন, শোভাযাত্রা অব্যাহত থাকে। ১৯৪৮ সালের ৬ এপ্রিল পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের অধিবেশন বসে, প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন বাংলাকে পূর্ব বাংলার সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন যদিও প্রস্তাবটি বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব ছিল না, তথাপি এর পর থেকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলন কিছুটা স্থিমিত হয়ে আসে, যদিও ১৯৫০ ও ১৯৫১ সালে যথারীতি ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবসরূপে পালন করা হয়।
১৯৪৯ সালের ১১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের উদ্যোগে ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় মওলানা ভাসানী, শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতা করেন। এরপর খাদ্যের দাবিতে এক ভুখা মিছিল বের করা হয়। পুলিশ মিছিলে আক্রমণ করে। শেখ মুজিবুর রহমান কৌশলে গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান ৩১ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় এলে উল্লিখিত জনসভায় সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রদানের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং একটানা ২৬ মাস রাজনৈতিক (নিরাপত্তা) বন্দি হিসেবে জেলে আটক রাখে। বঙ্গবন্ধু তাদের জোর করে নল দিয়ে তরল খাবার দেয়া হলো। এদিকে শেখ মুজিবুর রহমানের অনশনের বিষয়টি ২০ ফেব্রুয়ারি তদানীন্তন বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য আনোয়ারা খাতুন মুলতবি প্রস্তাব হিসেবে উত্থাপন করলে মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীন নির্লজ্জভাবে এর বিরোধিতা করেন। এরই মধ্যে ঢাকায় ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টার দিকে মাইকে ১৪৪ ধারা জারি করে আগামী এক মাস ঢাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। ঢাকা বেতারেও এ খবর প্রচারিত হয়। এ খবর প্রচারিত হওয়ার পরই সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের নেতারা ৯৪, নবাবপুরের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জরুরি সভায় বসেন। সভায় অলি আহাদ ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে যুক্তি দেখালেও কর্মপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা বিপক্ষে ভোট দেন। তবে ওই রাতেই ফজলুল হক হলের পুকুরপাড়ে ছাত্রনেতাদের বৈঠকে পরদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সভায় উপস্থিত ছিলেন গাজীউল হক, হাবিবুর রহমান শেলী, মোহাম্মদ সুলতান, এম আর আখতার মুকুল, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মমিন, এসএ বারী এটি, সৈয়দ কামরুদ্দিন শহুদ, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। সাধারণ ছাত্র ও ছাত্রসমাজের বৃহত্তর অংশ ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে ছিলেন। একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমা হতে থাকেন, বটতলায় দাঁড়িয়ে ছাত্রনেতারা বক্তৃতা দেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মতিন জ¦ালাময়ী বক্তৃতায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তাব দেন, সহ¯্র কণ্ঠ গর্জে উঠল ১৪৪ ধারা মানব না, মানব না, সিদ্ধান্ত মতে ১০ জন করে ছাত্র মিছিল করে অ্যাসেম্বলি ভবনের দিকে যেতে থাকেন। পুলিশ ছাত্রদের প্রথম দলটিকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ছাত্ররা দলবদ্ধ হয়ে স্লোগান দিয়ে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গেট থেকে বের হতেই পুলিশ বাহিনী তাড়া করে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে, বেলা প্রায় সোয়া ৩টার সময় এমএলএ ও মন্ত্রীরা মেডিকেল কলেজের সামনে দিয়ে পরিষদ ভবনে আসতে থাকেন, পুলিশ বেপরোয়াভাবে ছাত্রদের ওপর আক্রমণ চালায়, বাধ্য হয়ে ছাত্ররা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পুলিশ ছাত্রদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই রফিকউদ্দিন, আব্দুল জব্বার শহীদ হন এবং আরো ১৭ জন গুরুতর আহত হন। রাতে আবুল বরকত মারা যান। গুলি চালানোর সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকাসহ সারাদেশের পরিস্থিতি পাল্টে যায়। অফিস-আদালত, সেক্রেটারিয়েট ও বেতার কেন্দ্রের কর্মচারীরা অফিস বর্জন করে বেরিয়ে আসেন। অ্যাসেম্বলি কক্ষে বিরোধী দলের সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীনের কাছে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর কৈফিয়ত দাবি করেন। মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ বলেন, ‘যখন আমাদের বক্ষের মানিক, আমাদের রাষ্ট্রের ভাবী নেতা ছয়জন ছাত্র রক্তশয্যায় শায়িত, তখন আমরা আরামে পাখার নিচে বসে হাওয়া খেতে থাকব, তা আমি বরদাশত করব না।’ তিনিসহ আরো কয়েকজন সদস্য পরিষদ বর্জন করে বেরিয়ে আসেন এবং ছাত্রদের কাছে এসে মাইকে বক্তৃতা করেন। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে গায়েবি জানাজায় লাখো
মানুষের সমাবেশ ঘটে। শহরে সেনাবাহিনী তলব করা হয়। জানাজা শেষে শোভাযাত্রা বের হলে হাইকোর্টের সামনে পুনরায় গুলিবর্ষণে বেশ কয়েকজন হতাহত হন। একই দিন বংশাল রোডে সরকার সমর্থকরা দৈনিক সংবাদ অফিসে হামলা চালায়। সেখানে পুলিশের গুলিতে আবদুস সালাম নিহত হন, নওয়াবপুরে পুলিশের গুলিতে মারা যান হাইকোর্টের কর্মচারী শফিউর রহমান, ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি ঠিক কতজন ছাত্র-যুবক পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে আহত ও নিহত হয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো অজ্ঞাত। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে শেখ মুজিবুর রহমান জেলে বসে ঢাকায় ছাত্রদের ওপর গুলির খবর পেলেন। ফরিদপুরেও হরতাল হয়েছে। ছাত্ররা শোভাযাত্রা করে জেলগেটে এসে বিভিন্ন স্লোগান দেন ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘রাজবন্দিদের মুক্তি চাই’, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি চাই।’ বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লেখেন, ‘মুসলিম লীগ সরকার কত বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ করল। মাতৃভাষা আন্দোলনে পৃথিবীতে এই প্রথম বাঙালিরাই রক্ত দিল। দুনিয়ার কোথাও ভাষা আন্দোলন করার জন্য গুলি করে হত্যা করা হয় নাই। …আমি ভাবলাম, দেখব কিনা জানি না, তবে রক্ত যখন আমাদের ছেলেরা দিয়েছে তখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে উপায় নাই।’ অবশেষে ২৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তির ঘোষণা দিয়ে অনশন ভঙ্গ করানো হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু পিতা শেখ লুৎফুর রহমান তাকে নিয়ে যেতে জেল গেটে আসেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্মিত হয় শহীদ মিনার, একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদদের স্মরণে রচিত হয় কবিতা, গান। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলায় যে স্বাধিকার আন্দোলনের ভিত্তি রচিত হয়েছিল, তার পথ ধরেই চলতে থাকে পরবর্তী আন্দোলন, সংগ্রাম; যা ১৯৭১ সালে মুক্তিসংগ্রামে পূর্ণতা লাভ করে। এ থেকে এটাই প্রতিফলিত হয়, যে ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দেন, কিন্তু ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি রাজবন্দি হিসেবে জেলে বসেই আন্দোলনের নানা বিষয়ে পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন, যা আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ভাষাসৈনিক তাদের বক্তব্য ও লেখালেখিতে উল্লেখ করেছেন। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম বার্ষিকীতে ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে প্রভাতফেরি বের করা হয়েছিল, কালো পতাকা বহন করা হয়েছিল, ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করা হয়েছিল। এ মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এভাবে একুশের চেতনার ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু পরবর্তী আন্দোলনগুলোয়ও নেতৃত্ব দেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল।
বর্তমানে ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছরে এমন মাহেন্দ্রক্ষণে এ বছর (২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ) বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। এবারের মেলার প্রতিপাদ্য ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। তাই এ বছরের মেলা এক ভিন্নমাত্রা নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে। এর আগে জাতীয় সংগীত এবং অমর একুশের সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং আমরা সব সময়ই মন ও মননের প্রকাশ এবং সুচিন্তিত কর্মকে সাধুবাদ জানিয়ে সব রকম সহযোগিতা দিয়ে থাকি। মুক্তবুদ্ধির চর্চা, স্বাধীন মত প্রকাশ এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার জন্য বর্তমানে দেশে অত্যন্ত সুন্দর ও আন্তরিক পরিবেশ বিরাজ করছে। জ্ঞান চর্চা ও পাঠের বিস্তারে অমর একুশে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, জাতির মনন গঠনে এ বইমেলা সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখে চলেছে। পাশাপাশি বইমেলা আমাদের জীবনবোধ ও চেতনাকে প্রতিনিয়ত শাণিত করছে এবং বইয়ের মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলনের হাত ধরেই আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল, নানা লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভাষার সংগ্রাম পরিণত হয়েছিল আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রামে। এজন্য অমর একুশে আমাদের শেকড়ের সন্ধান দেয়, বাংলা ভাষা আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রাণে অনুরণিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি এখন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কানাডা প্রবাসী সালাম ও রফিকসহ কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ নেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এ বিষয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করে। ফলে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য আমি ইতোমধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাবি উত্থাপন করেছি। বিশ্বের সব ভাষাগোষ্ঠীর মাতৃভাষা সংরক্ষণ, বিকাশ ও চর্চার লক্ষ্যে আমরা ঢাকায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেছি। এখানে উল্লেখ্য, স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে প্রথমবারের মতো বাংলায় বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধু। আসলে বাংলায় বক্তৃতা করে বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলা ভাষাকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পরিচিত করাননি, বাঙালির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য এবং ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির আত্মত্যাগের বিনিময়ে মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বার্তাও পৌঁছে দেন। কিন্তু যে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য এত আন্দোলন, এত আত্মত্যাগ সেই ভাষা আজ কতটা টেকসই? শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই মাতৃভাষা ভুলে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আমাদের দেশের শিক্ষিত তরুণদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাকে ইংরেজির চেয়ে কঠিন মনে করে। ইংরেজি ভাষার আগ্রাসনের কারণে অনেক দেশের ভাষা-ই এখন অস্তিত্ব সংকটে। বর্তমান বিশ্বে অন্যতম উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে মাতৃভাষাকে টেকসই করতে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থানটা কি এ ব্যাপারে সরকারপ্রধান বলেন, ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে হলে ভাষাবিদদের পাশাপাশি রাষ্ট্র এবং প্রযুক্তিবিদদেরও সক্রিয় হতে হয়। মায়ের ভাষায় প্রযুক্তি ব্যবহার করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাংলা ভাষায় লেখাপড়া ও চর্চা এবং ভাষাকে টেকসই করার সরকারের চিন্তা এবং তার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টার বিশেষজ্ঞ জ্ঞান থেকে উৎসারিত সরকারি কিছু উদ্যোগ দেশকে আশাবাদী করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দরজা থেকে সেবাপ্রদানের প্ল্যাটফর্মের (জেলা তথ্য বাতায়ন) নাম বাংলায় রাখা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সর্ববৃহৎ প্ল্যাটফর্মটিরও নাম রাখা হয় ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’। এতে রয়েছে ৫২ হাজার ওয়েবসাইট, যা বাংলা ও ইংরেজিতে। ২০১২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মোবাইল ফোনে বাংলায় খুদেবার্তা (এসএমএস) চালুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করা হয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের ধারণাকে সামনে রেখে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার চর্চা হলেও এ মুহূর্তে বাংলায় ভালো কনটেন্টের অভাব রয়েছে। তাই দেশের ১৭ কোটির বেশি মোবাইল ফোন, ১৩ কোটিরও বেশি কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং ৫ কোটির বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখে মাতৃভাষায় ভালো ভালো কনটেন্ট ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হবে। আর তা করা হলে শুধু অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধি, জ্ঞানার্জন এবং তথ্য ও সেবা পাওয়া নিশ্চিত করবে না। মাতৃভাষাকে বাঙালির মাঝে চিরঞ্জীব করতে সহায়তা করবে। বর্তমান সরকার সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও জাতি গঠন, শিক্ষার মাধ্যম, আধুনিক জ্ঞান ও কর্মশক্তিতে বলিয়ান করাসহ বহু উদ্দেশ্য সামনে রেেখ শিক্ষার উন্নয়নে চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে এবং স্বাধীনতার পর থেেক শিক্ষা সংস্কারের নামে কমিশন জাতির সামনে নিয়ে এসেছে। এখন প্রয়োজন এগুলোর বাস্তবায়নে জাতীয় সমঝোতার।

ড. মিহির কুমার রায়
শিক্ষক ও কলাম ঔেষশ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়