যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যার মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

বিদেশিদের নজর ঢাকার দিকে : ব্যস্ত সময় পার করলেন ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র যোগাযোগ অবকাঠামো- পাতাল রেল

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গতিময় বাংলাদেশের টুপিতে আরেকটি পালক জুড়লেন। ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে তিনি ঢাকা শহরের মানুষকে যানজট থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য পাতাল রেল নির্মাণের উদ্বোধন করেছেন। মাত্র ক’দিন আগেই তিনি মেট্রোরেলের একাংশের উদ্বোধন করেছেন। মেট্রোরেল চালুর ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে যে আশা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়, তার রেশ কাটতে না কাটতেই পাতাল রেল নির্মাণযজ্ঞ চালু করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এখন থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে (৮, অক্টোবর ২০১৮) দৈনিক সমকালে লিখেছিলাম ‘বাসযোগ্য টেকসই ঢাকার জন্য চাই পাতাল রেল।’ নিঃসন্দেহে এই চাওয়া ছিল এক বিরাট স্বপ্ন। আমার মতো আরো অনেকেই হয়তো এমন বড় স্বপ্ন দেখে থাকেন। আমার বিশ্বাস ছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের এমন বড় বড় স্বপ্ন বাস্তবায়নের সক্ষমতা রাখেন। কিন্তু চলমান বিশ্ব সংকটের মাঝেও যে তিনি দেশবাসীকে স্বস্তি দিতে সত্যিই এমন একটি বৃহৎ স্বপ্নের মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করে বসবেন, সেটি কিন্তু ভাবিনি।
এখানেই নেতৃত্বের পরম্পরার সন্ধান মেলে। বঙ্গবন্ধুও ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের পথে দিল্লিতে যাত্রাবিরতির সময় একজন সাংবাদিককে বলেছিলেন ‘শান্তি, প্রগতি ও সমৃদ্ধির’ বাংলাদেশ গড়তে চান। যেই কথা সেই কাজ। হাতে এক ডলারও নেই। কিন্তু স্বপ্ন তার আকাশজোড়া। কাল বিলম্ব না করে নেমে পড়েন স্বদেশ পুনর্নির্মাণে। গড়ে তুললেন নতুন কেন্দ্রীয় প্রশাসন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চালু করলেন ভেঙে পড়া অবকাঠামো। লক্ষ্য একটিই- ‘বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক, … বেকার কাজ পাক, … বাংলার মানুষ সুখী হোক।’ সেই স্বপ্ন পূরণের অংশ হিসেবেই তৈরি করলেন গণমুখী এক সংবিধান। আরো তৈরি করলেন সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য পূরণের উন্নয়নের রূপরেখা প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কাঠামোর আলোকে। শত বাধা ডিঙ্গিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ হাঁটতে থাকে তার স্বপ্নের সমৃদ্ধির পথে। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকদের নির্দয় হস্তক্ষেপে খুন হয়ে যান আমাদের ইতিহাসের বরপুত্র। খুন হয় তার সমৃদ্ধির স্বপ্ন। এরপরের কাহিনী আমরা সবাই জানি। স্বদেশ হাঁটতে থাকে উল্টো দিকে ‘অন্ধকার’ পানে। অনেক ত্যাগ ও তিতিক্ষার পর বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ফিরে এসেছে সমৃদ্ধির পথরেখায়।
বিশ্ব মহামারি, বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট, অভ্যন্তরীণ হতাশাবাদীদের তীব্র বিরোধিতা পায়ে দলে বঙ্গবন্ধুকন্যা এগিয়ে চলেছেন উল্কার বেগে গতিময় বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে। তিনি জানেন যে কৃষি খাদ্য নিরাপত্তা দিচ্ছে। কিন্তু সেই খাদ্য কেনার জন্য যে সক্ষমতা দরকার তা দিতে পারে কর্মসংস্থান। সেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব শিল্প ও সার্ভিস খাতে। এই তিন খাতের গতিময়তার জন্য দরকার উপযুক্ত সংযোগ। আর সেই সংযোগ দিতে পারে পরিবহন সম্পর্কিত অবকাঠামো। শুধু পদ্মা সেতু নয়, মহানগরের আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে তিনি সমান ব্যস্ত। মেট্রোরেল বাদেও গড়ে তুলতে চাইছেন পাতাল রেল। এই মেট্রোরেল ও পাতাল রেল মিলে ঢাকার শহরের পরিবহনে যে গতি আনবে তার প্রভাব অর্থনীতিতে নিশ্চয় পড়বে। দিল্লি তার জিডিপি ১৮.৫ শতাংশ বাড়িয়েছে তার মেট্রোরেল চালু করে। ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৩৮ লাখ কর্মঘণ্টা হারিয়ে যাচ্ছে অকল্পনীয় যানজটে। এ থেকে মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মুক্তি দিতে পারলে যে ঢাকা তথা দেশের অর্থনীতির উৎপাদনশীলতার বৈপ্লবিক উল্লম্ফন ঘটবে সে কথা বঙ্গবন্ধুকন্যা জানেন। আর সে কারণেই তিনি নানা সংকটের মাঝেও হতাশ হন না। বরং দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসেন। ভালো নেতৃত্বের এটিই আসল গুণ।
যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট অ্যাডামস মনে করতেন কেউ যদি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারেন এবং সেই স্বপ্নের আদলে তাদের উৎসাহী করতে পারেন তাহলে তাকে নেতা বলা যায়। সেই বিচারে বঙ্গবন্ধুর মতোই বঙ্গবন্ধুকন্যাও একজন আশা জাগানিয়া নেতা। বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘এই দিন থাকবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমাদের মাটি আছে, আমার সোনার বাংলা আছে, আমার পাট আছে, আমার গ্যাস আছে, আমার চা আছে, আমার ফরেস্ট আছে, আমার মাছ আছে, আমার লাইভস্টক আছে। যদি ডেভেলপ করতে পারি, ইনশা আল্লাহ এদিন থাকবে না।’
তার কথায় পূর্ণ বিশ্বাস রেখে বঙ্গবন্ধুকন্যাও এগিয়ে যাচ্ছেন তার ‘দিন বদলের সনদ’ হাতে নিয়ে। এবার তিনি উপস্থাপন করে চলেছেন আরো বড় স্বপ্ন। স্মার্ট বাংলাদেশ। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ সেøাগান রূপায়ণে যেভাবে বাংলাদেশের জনগণ ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণ করেছেন তাতেই ভরসা জাগে যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ আসন্ন। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের যে স্বপ্নের আদলে নানামুখী মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি তাতে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রযুক্তি প্রসার ও আরো বিকাশের জন্য বিনিয়োগ অপরিহার্য। আর সে লক্ষ্যেই আমরা ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ার জন্য বিনিয়োগের হার বাড়িয়ে চলেছি। তারই অংশ হিসেবে আমরা গতিময় পরিচ্ছন্ন স্মার্ট নগরায়ণের লক্ষ্য পূরণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সেই স্বপ্নের রূপায়ণে নিঃসন্দেহে বাহান্ন হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প ‘পাতাল রেল’ হতে যাচ্ছে আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। নিঃসন্দেহে ঢাকা শহরের যাতায়াত ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হলে শুধু বাস ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পরিবহনকে সুশৃঙ্খল করলেই তা সম্ভব নয়। চলমান মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি নির্মাণ শেষ হলেও দ্রুত প্রসারমান ঢাকা শহরে সবার যাতায়াতের গতি ও সুবিধা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিশ্চিত করা যাবে- এমন কথা হলফ করে বলা যাবে না। এ কারণেই চাই পাতাল রেল, যার মাধ্যমে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ চলাচল করবে, চাপ কমে যাবে ভূপৃষ্ঠের সড়কপথে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা গেলে ঢাকাতেও পাতাল রেল নির্মাণ অসম্ভব হবে না। একই ধরনের প্রযুক্তি দুই ক্ষেত্রেই ব্যবহারযোগ্য। মনে রাখতে হবে, অন্যান্য সমমানের মেগাসিটিতে যেখানে গত এক দশকে জনসংখ্যা বেড়েছে ২০ শতাংশ; ঢাকা শহরে তা বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। আর এই জনচাপ কমার কোনো লক্ষণ দেখছি না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কর্মসংস্থানের সন্ধানে অনেকেই উপকূল, চর, হাওরাঞ্চল থেকে ঢাকার পানে ছুটছে। ঢাকার আশপাশের শহরগুলোকে যদি পরিবেশসম্মত স্মার্ট নগর হিসেবে গড়ে তোলা যেত এবং সেগুলোর সঙ্গে রেল, নদী ও সড়কপথের যোগাযোগ দ্রুত ও মসৃণ করা যেত, তাহলে হয়তো অনেকেই ওইসব সম্পূরক শহরে বাস করতেন। কাজের জন্য ঢাকায় এসে ফের চলে যেতেন। পদ্মা সেতু সে সুযোগ অনেকটাই সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। তবে তা সত্ত্বেও দিনের বেলা ঢাকা শহরে কাজের সন্ধানে আসা মানুষের ভিড় লেগেই থাকবে। সেই ভিড় কমাতে প্রয়োজন গতিময় গণপরিবহন। সে লক্ষ্য অর্জনের পথে এই পাতাল রেল হতে পারে একটি অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত নগরায়ণের এই রাজধানী শহরের নিচের পুরোটা জমিই সরকারের হাতে। ওই জমি নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। তা ছাড়া বর্তমানে মাটির নিচে ‘বোরিং’ প্রযুক্তি এতটাই উন্নত হয়েছে যে, খুব দ্রুতই মেশিন দিয়ে মাটি কেটে তা বস্তাবন্দি করে নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাবে। একই সঙ্গে ওই মেশিন দিয়েই মাটির নিচে রেল বসানোর আনুষঙ্গিক সব অবকাঠামো নির্মাণও করা যাবে। তাই কলকাতার পাতাল রেল নির্মাণের সময় প্রায় এক দশক ধরে যে জনভোগান্তি হয়েছিল, তা আর এখন হবে না। প্রযুক্তির কল্যাণে তাই নির্বিঘেœ এই মেগা প্রকল্পটি নির্মাণে মনোনিবেশ করা যায়। উল্লেখ্য, টোকিওর পাতাল রেল তিন স্তরে নির্মিত। গভীর ওই অবকাঠামো নির্মাণে আমাদের প্রবাসী প্রকৌশলীরাই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বেশ ক’বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়া নিবাসী বাঙালি প্রকৌশলী আওয়ালের সঙ্গে সানফ্রান্সিসকোতে আমার দেখা হয়। আমি সেবার প্রবাসী অর্থনীতিবিদদের একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য গিয়েছিলাম। তার কাছ থেকেই এসব গল্প শুনলাম। আমার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পালও ছিলেন। আমি ওই প্রকৌশলী দলকে ঢাকায় এসে এ বিষয়ে একটি উপস্থাপনা দেয়ার আমন্ত্রণ জানাই। তারা এসেছিলেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অফিসে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনাও দিয়েছিলেন। সেদিন তারা আমাদের জানিয়েছিলেন- মাত্র পাঁচ বছরে বিমানবন্দর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের পাতাল রেল স্থাপনে খরচ পড়বে পাঁচ বিলিয়ন ডলার। আর বর্তমানে যে পাতাল রেল প্রকল্পটি চালু হলো তারও প্রস্তাবিত খরচ পাঁচ বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি। এতে ৪.২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে জাপান।
চীন ও ভারতের মধ্যখানে গতিময় এক ত্রিভুজের নাম বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য জাপান এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিশেষ অর্থনৈতিক জোন, মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ, মেট্রোরেলসহ নানা প্রকল্পে জাপান বিনিয়োগ করছে। আমাগীতে আরো বেশি বিনিয়োগে তারা উৎসাহী। আর আমরাও নিজেদের সম্পদের একাংশ কেন এমন গুরুত্বপূর্ণ ও জনবান্ধব অবকাঠামোর জন্য ব্যয় করতে পারব না? সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমনটি বলেছেন- আমাদের প্রত্যেকেরই কর দেয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ‘কর দেয়া দেশপ্রেমের অংশ’- এমন সেøাগান সারাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিতে হবে। আজকাল ডিজিটাল প্রযুক্তি ও লেনদেন ব্যবস্থা বিপুলভাবে প্রসারিত হয়েছে এবং প্রত্যেকের হাতে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র; মোবাইল ফোন। প্রযুক্তি প্রসারের এই সুযোগ নিয়ে আমরা চাইলেই স্বদেশবাসীকে সমৃদ্ধ সবুজ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের সঙ্গে নিশ্চয় সংযুক্ত করতে পারি। আর সেই সংযুক্তির মাধ্যমেই স্বদেশ গড়ার জন্য প্রত্যেককে তাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় অভ্যন্তরীণ সম্পদ সমাবেশের কর্তব্য পালনে উৎসাহিত করতে পারি।
জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার লাখ লাখ মানুষ এখন নগরপানে ছুটছে। তাদের থাকা-খাওয়া, বাসস্থান, চিকিৎসা, পরিবহন, নিরাপত্তা এবং তাদের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির চ্যালেঞ্জ এই নগর পরিচালকরা কীভাবে গ্রহণ করবেন? এই নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কতটা পরিবেশসম্মত? এই নগরের সাংস্কৃতিক পরিবেশ কতটা জনবান্ধব? এসব প্রশ্নের মুখোমুখি আমাদের হতেই হবে। নিঃসন্দেহে দেশ এগিয়ে চলেছে। তবে শুধু সংখ্যায় নয়, জীবন চলার সুযোগগুলো কতটা জনবান্ধব, কতটা আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব- সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্যই দূরদর্শী নেতৃত্বকে জনগণের চাহিদার ধরনগুলো বুঝতে হবে, ধরতে হবে। সেই আলোকে উপযুক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। আশার কথা বাংলাদেশ সেই পথেই হাঁটছে। তবে সেই পথে বাধাও বিস্তর। দুর্নীতি, বাস্তবায়নে অপচয় ও শ্লথগতি এবং অকল্পনীয় সমন্বয়হীনতা আমাদের চলার গতিকে প্রায়ই থমকে দিচ্ছে। পথের এসব পাথর ডিঙিয়েই আমাদের চলতে হচ্ছে। চলতে হবে।
আমাদের সামনে যে সমৃদ্ধ আগামীর পথনকশা রয়েছে তা ধরে এগিয়ে যেতেই হবে। এ জন্য প্রধানত ভোগনির্ভর প্রবৃদ্ধির (৬৫%) ওপর ভর করে এগোতে হবে। একই সঙ্গে জনসম্পদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বিশেষ করে আইসিটির ক্ষেত্রে তরুণ জনগোষ্ঠীকে যথোপযুক্তভাবে বিনিয়োজিত করতে হবে। কৃষি অর্থনীতির রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ও আরো পরিবেশবান্ধব কৃষির বিকাশের পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে আমাদের যে সম্ভাবনা রয়েছে তাও কাজে লাগানো চাই। রপ্তানি বহুমুখীকরণের দিকেও দেয়া চাই সমান মনোযোগ। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে নিজেদের আরো বেশি করে ‘ইন্টিগ্রেটেড’ করতে হবে। আর দরকার জ¦ালানি নিরাপত্তা। সেই জ¦ালানির বড় অংশ সবুজ করা গেলে আরো ভালো। সেজন্য দরকার হবে সবুজ অর্থায়ন। আইএমএফের ঋণের মধ্যে ১.৪ বিলিয়ন ডলার সবুজ অর্থায়ন। তাই সবুজ জ¦ালানির বিকাশে আমাদের মনোযোগী থাকতেই হবে। আর এসব কিছুর জন্য যে উপযুক্ত পরিবেশ বা ‘এনাবলিং এনভায়রনমেন্ট’ দরকার তার একটি মুখ্য উপাদান হলো কার্যকর যোগাযোগ অবকাঠামো। পদ্মা সেতুসহ দেশব্যাপী শক্তিশালী সেতু নেটওয়ার্ক, এক্সপ্রেস ওয়ে, মেট্রোরেল- এর পর এবার পাতাল রেলের নির্মাণ কাজ শুরুর মাধ্যমে আমরা ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র উপযুক্ত যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে ওঠার সংকেতই পাচ্ছি।

ড. আতিউর রহমান
লেখক, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়