অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : বাংলাদেশের দিকে মনোযোগ আরো তীক্ষè ও গভীর হয়েছে বিভিন্ন বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগীদের। সম্প্রতি তাদের যাতায়াতও বেড়েছে। গত কয়েকমাসে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক ও জাঁদরেল কর্মকর্তারা ঢাকা সফর করছেন। গতকাল বুধবার ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা ঢাকায় দিনভর ব্যস্ত সময় পার করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অভাবনীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিশ্বসম্প্রদায়ের নজর কেড়েছে। বিদ্যমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর কাছে। এমন পরিস্থিতিতে সামনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। সঙ্গত কারণেই এই নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েছে দেখছে উন্নয়ন সহযোগীরা। কারণ আগামীতে কোনো দল ক্ষমতায় আসে তার ওপর দেশের বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক অনেকটাই নির্ভর করে। এ কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার তাগিদ রয়েছে প্রতিবেশি দেশ, বিভিন্ন পরাশক্তি ও উন্নয়ন সহযোগীদের। তাছাড়া নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মতভিন্নতা এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে অনেকের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এসব কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর শীর্ষ কূটনীতিকরা ঘন ঘন ঢাকায় আসছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশের ভোট নিয়ে যেমন উদ্বেগ আছে; তেমনি কে ক্ষমতায় আসছে তাও আঁচ করতে চায় বিদেশিরা। পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক কারণেও বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়েছে। একইসঙ্গে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ নিয়ে নানা পক্ষ গড়ে উঠেছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কি তাও জানতে চান বিদেশিরা। মূলত এসব কারণেই ভোটের বছরে বাংলাদেশের ওপর নজর পড়েছে বিদেশিদের। তবে নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন পরাক্রমশালী দেশের কূটনীতিকদের প্রকাশ্য মন্তব্য ও তৎপরতা বাংলাদেশ সরকারের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বন্ধুত্ব রক্ষা ও বাড়ানোর কূটনীতিতেও জোর দিতে হচ্ছে সরকারকে। সরকার কোনোভাবেই চাইছে না, ভোটের বছরে কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের যেন অবনতি না ঘটে। দেশের
অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরো নিবিড় করতে সংশ্লিষ্ট মিশনপ্রধানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল বুধবার ঢাকায় ছিলেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিঙ্কেনের উপদেষ্টা ডেরেক শোলে এবং দক্ষিণ কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্টের দূত এবং ভবিষ্যৎ কৌশলবিষয়ক সিনিয়র সচিব জাং সুং মিন। তারা গতকাল দিনভর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আলাদাভাবে দেশগুলোর চাওয়া-পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলের নেতৃত্বে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে। এ সময় নির্বাচন প্রসঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিলে আওয়ামী লীগ আবারো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আমি কখনোই ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাই না। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। আমি সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। পৃথক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করে ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বলেছেন, তার (প্রধানমন্ত্রী) নেতৃত্বের প্রতি ভারতের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দূত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ কীভাবে নির্বাচন করবে এবং গেল নির্বাচনে বিএনপি কীভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে তার ফিরিস্তি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। এর আগে গত ২০ জানুয়ারি ঢাকা এসেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ের ফেলিপ গঞ্জালেজ। গত ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। পাকিস্তানে তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সরকার পতনের পেছনে এই কূটনীতিক কলকাঠি নেড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইমরান খান। গত ৯ জানুয়ারি ঢাকায় চক্কর দিয়ে গেলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিন গ্যাং। আফ্রিকা যাওয়ার নিয়মিত রুট না হওয়ার পরও তিনি যাত্রাবিরতির কথা বলে ৫২ মিনিটের জন্য ঢাকায় নেমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। দায়িত্ব নেয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকায় এমন ঝটিকা সফর নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। এদিকে চলতি বছরের যে কোনো সময় বাংলাদেশ সফরে আসার কথা সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের। এ ছাড়াও এ বছর যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে নির্বাচনী এই বছরে ঢাকায় বিদেশিদের নজর বেড়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যেসব তৎপরতা শুরু হয়েছে তা নিয়েই বছরজুড়ে ব্যস্ত সময় কাটবে সরকারের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা এবং ওয়াশিংটন থেকে ডেরেক শোলের ঢাকা সফর গুরুত্ব থাকলেও বিশেষভাবে দেখার সুযোগ নেই। দিন যত যাবে এ ধরনের সফর তত বাড়বে। এ সমস্ত সফরের সঙ্গে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। তবু কূটনীতিকদের সফরকে অনেকে নির্বাচনী রং দিতে চান। কিন্তু সেটা মোটেও ঠিক নয় মন্তব্য করে এই অধ্যাপক বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আসছেন মূলত পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত নয়াদিল্লি সফর নিয়ে আলোচনা করতে। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আয়োজক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদানের কথা রয়েছে। অন্যদিকে ওয়াশিংটন থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলের আরো আগেই ঢাকা আসার কথা ছিল বলে উল্লেখ্য করেন ড. ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, তার সফরও একইভাবে গুরুত্ব থাকলেও বিশেষভাবে দেখার কিছু নয়। অর্থাৎ এগুলোর গুরুত্ব আছে বৈকি কিন্তু বিশেষভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের সফর দিন দিন আরো বাড়াবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন কাঠামো বা অর্থনৈতিক চাকা দিন দিন বাড়ছে। ফলে এটা যত বেশি বাড়বে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সফরও তত বাড়বে। এগুলোকে একেবারে সাধারণভাবেই নেয়া দরকার। আমরা তাদের সফরকে যতটা গুরুত্ব দিচ্ছি, যারা সফর করে যান তারা নিজেরাও এতো গুরুত্ব দেন না।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচন বা সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বিদেশি কূটনীতিকদের ভিড় বাড়ে। কখনো কখনো তা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সীমা ছাড়িয়ে যায়। নির্বাচন যে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দেশ ঠিক করবে কীভাবে নির্বাচন হবে। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আমেরিকার নির্বাচনে কারা অংশ নেবে, কোন দল কোন নীতি অনুসরণ করবে সে বিষয়ে অবশ্যই কথা বলবেন না। তিনি কথা বললেও তা কোনো মার্কিন গণমাধ্যমে খবর বলে মনে হয় না। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলা দুঃখজনক এবং হস্তক্ষেপমূলক। কিন্তু বাংলাদেশে দেশে এটা প্রায়ই ঘটে।
ঢাকায় আসা বিদেশি প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা, নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা নিয়ে মন্তব্য করছেন। দেশের রাজনীতিবিদরা যখনই সরকারের বাইরে থাকেন, তারা বিদেশিদের কাছে ‘অভিযোগ’ নিয়ে হাজির হন। আসন্ন নির্বাচনের জন্য অন্যান্য দেশের সহযোগিতা চেয়ে সরকারকে কার্যত বিব্রত করেছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এর সুযোগ নিচ্ছে বিদেশিরা। জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি, সাতাশ দেশের রাষ্ট্রদূতরা বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের অবস্থান স্পষ্ট, পশ্চিমারা অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মিট দ্য এম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে নয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন চায়। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব শুধু নির্বাচন কমিশনের নয়, দায়িত্ব সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের। ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন, ব্রিটেন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা চিন্তিত নন। তবে বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে কোনো সহিংসতা নেই, বরং তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখতে চায়। শুধু যুক্তরাজ্যই নয়, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা খোলামেলাভাবে আসন্ন সংসদ নির্বাচন অবাধ হবে কি হবে না, ভোট সুষ্ঠু হবে কি হবে না, ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ কেমন হবে এসব নিয়ে খোলামেলা কথা বলছেন। আবার অন্যচিত্রও দেখা গেছে। ঢাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক দূতাবাস রয়েছে, যাদের বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ নেই। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, আলজেরিয়া, ব্রাজিল, ভুটান, ব্রুনাই, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনাম।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, কূটনীতিকরা রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে পারেন। তবে এটি ব্যক্তিগতভাবে ঘটে। কিন্তু আমাদের দেশে এখন আর গোপনে কিছু করা হয় না। যিনি যখন বিরোধী দলে থাকেন, তখন রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে ক্ষমতাসীন দলকে বিব্রত করতে চান। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব ক্ষমতার ওপর আস্থা না থাকায় এমনটা হয় বলে মনে করেন তারা। বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিজেরাই সমাধান উচিৎ। গত ২৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের নিজস্ব সরকার বেছে নিতে পারে এাবং যুক্তরাষ্ট্র এটাই চায়। ২৮টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ১০টি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দেশের রাষ্ট্রদূতরা গত ২ অক্টোবর ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর, ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি একটি টুইটে একটি ছবি যোগ করে বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যু সম্পর্কে জানতে মিশন প্রধানরা ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের নিয়মিত বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন’। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। সবমিলিয়ে কূটনীতিকরা বোঝার চেষ্টা করছিলেন যে আসন্ন ২০২৩ সালের নির্বাচন কেমন হতে পারে, দলের কৌশল কী হবে, বেশির ভাগ বৈঠকে সমস্ত বিরোধীরা কোন ন্যূনতম পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যেতে পারে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের অধিকাংশই জনসভায় স্থানীয় রাজনীতি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে চান না। কিন্তু অন্য প্রভাবশালী সক্রিয় দেশগুলোসহ ভারত ও চীন এবং পাকিস্তান কূটনীতিকদের ব্যাকরুম রাজনৈতিক আলোচনা শোনা যায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় নতুন ধারার কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো বিশ্বকে এক জটিল সমীকরণের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশও সেই বাস্তবতার বাইরে নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতির এই দোলাচলে সব দেশের সঙ্গে সুষমভাবে সুসম্পর্ক রক্ষার বিষয়টিও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ যে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চায়, তা হচ্ছে ‘সম্পর্ক রক্ষা ও উন্নয়নের কূটনীতি’ যেখানে প্রাধান্য পাবে অর্থনৈতিক সুযোগ-সম্ভাবনা ও সংকটের বিষয়গুলো।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা বলছেন, অর্থনৈতিক কূটনীতিতে বাংলাদেশকে সফল হতে হলে বৈশ্বিকভাবে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন সহযোগী গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত এক যুগের অগ্রগতি ও উন্নয়নের সূচক বিবেচনায় বিশ্বের বহু পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের কাছে অর্থনৈতিক কূটনীতির জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এ সুযোগ বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজে লাগানো গেলে সম্পর্ক উন্নয়নের কূটনীতিতেও সফল হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী বছরে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দেয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, তা সময়োপযোগী এবং যথার্থ বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, এবারই নতুন নয়, বাংলাদেশ আরো আগে থেকেই অর্থনৈতিক কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কারণ, বিশ্ব কূটনীতির এখনকার মূল বিষয়ই হচ্ছে অর্থনৈতিক কূটনীতি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।