যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যার মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

বিদেশিদের নজর ঢাকার দিকে : ব্যস্ত সময় পার করলেন ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

বিবেকহীন বিবেকের দোর্দণ্ড প্রতাপে বিপর্যস্ত মানবতা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইংরেজি প্রবাদটাই বাংলায় এভাবে বলা যায় যে, ‘টাকা পয়সা না থাকলে কিছু আসে যায় না। স্বাস্থ্য খারাপ হলে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর চরিত্র যার খারাপ তার কিছুই নাই।’ চরিত্র একটা মানুষ তথা জাতি গোষ্ঠীর পরিচয় বহন করে। এই চরিত্র এমনি এমনি ভালো হয় না। এটা গঠন করতে হয়। এর ভিত্তি ভূমি পরিবার তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেজন্য হয়তো নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে একটি সভ্য, শিক্ষিত জাতির জন্ম দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছি।’ আগেকার দিনে যৌথ পরিবারগুলোয় পরিবারের বয়ঃজ্যেষ্ঠরা পরিবারের চরিত্র গঠনে প্রধান ভূমিকা রাখতেন। তাদের কঠোর শাসনে ছেলেমেয়েরা সৎ, বিনয়ী অভ্যাসগুলো রপ্ত করে নিজেকে গড়ে তুলতেন। সেই সঙ্গে স্কুলে মাস্টার মশাইয়ের কঠোর নজরদারি একটা ছেলেমেয়ের বিদ্যা শিক্ষায় ভিত মজবুত হয়ে উঠত এভাবে। কালের পরিক্রমায় সেই যৌথ পরিবার, মাস্টার মশাইয়েরা যুগ প্রবাহে হারিয়ে গেছেন। এখন ছোট পরিবারগুলোয় দাদা, দাদির প্রাধান্য নেই বললেই চলে। বরং তারাই অনেক ক্ষেত্রে ছেলের অনুগ্রহের অনুদানের ওপর নির্ভর করে জীবন নির্বাহ করতে দেখা যায়। আধুনিক, অতি আধুনিকতার সংজ্ঞায় এতে করে পরিবারগুলো ছোট হতে হতে একা হয়ে যায়। ব্যস্ততম সময়ের স্রোতে বাবা-মার ব্যস্ততায় সন্তানেরা নিজেকে অনেক সময় সঠিক গাইড পায় না। সেখানে ছেলেমেয়েরা নিজের খেয়াল খুশিমতো জীবনকে এলিয়ে দেয় যুগের স্রোত ধারায়।
একটা ছেলেমেয়ে জন্মগ্রহণের পর তার চারপাশের উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি দেখতে দেখতে তার মধ্যে একটা উগ্র বাসনা জন্মে তৃতীয় প্রজন্মের গতি প্রবাহের দিকে। যেখানে নিচে তাকানোর সুযোগ নেই। তড়তড় করে কীভাবে উপরে ওঠা যায়। চাই-আরো চাইয়ের উগ্র বাসনা জন্মে মনে। আর ওই যে বললাম মাস্টার মশাইয়ের মৃত্যুর পর ঘুণে ধরা চেয়ারটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। পারিবারিক ও শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পর নিজের মনের মধ্যে উগ্র চাহিদাগুলো একসময় মাথা চাড়া দেয়। তখন চরিত্র নামক শব্দটার ব্যবচ্ছেদ ঘটিয়ে শুধু ‘চ’ এর সঙ্গে বসবাস করতে থাকে অধিকাংশ শিক্ষিতরা। তখন একদিন রাতের আঁধারে পরিচয় হয় ‘চ’ এর চৌর্যবৃত্তির অবয়বের সঙ্গে। হতে যায় দোস্তি। সমাজের অনেক বড় বড় পদ অলংকৃত করে থাকেন তারা। তাদের ওপর নির্ভর করে দেশ ও জাতি। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র থাকে। আমলার অর্থ রাজকর্মচারী। যাকে ব্যুরক্রেসি বলা হয়। মূলত এই আমলারাই দেশ চালায়। ধনতান্ত্রিক অথবা সমাজতান্ত্রিক উভয় ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র বিরাজমান। সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত তাদের হাত দিয়ে সব প্রকল্প পরিপূর্ণতা পায়। একটা প্রকল্প গ্রহণের সময় সবদিক বিবেচনা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় যাওয়া হয়। সেখানে কারিগরি দিক, দ্রব্যের মান, পরিবেশ, টেকসই সব কিছু বিবেচনায় নেয়া হয়। এরপর টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাওয়া হয়। একটা টেন্ডারে ওই কাজ সম্পন্নের সব রীতিনীতি নির্ধারিত থাকে। প্রকল্প মেয়াদ, কাজের উপকরণ, মান, সব শর্ত দেয়া থাকে টেন্ডারের মধ্যে। টেন্ডারগ্রহীতারা তারা সময় শর্ত মেনে সর্বনিম্ন দরে কাজটা নিয়ে থাকেন। এটাই নিয়ম। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে কাজ তাদরকির জন্য প্রকল্প পরিচালক তথা নির্ধারিত কর্মকর্তারা দেখাশোনা করে থাকেন। তবুও কি এক অদৃশ্য শক্তির কারণে বছরের পর বছর ধরে কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি চলে অবলীলায়। সেই সঙ্গে টাকার অঙ্ক বেড়ে যায় কয়েকগুণ। পরিশেষে নিম্নমানের কাজ ও একগাদা টাকা খরচ করলেও প্রকল্পের সুফল পায় না জনগণ। অথচ জনগণের রক্ত জল করা ট্যাক্সের টাকায় চলে এসব প্রকল্প। পক্ষান্তরে তৃতীয় পক্ষ যারা কালিকলমে পাকা তারা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। স্বাধীনতার ৫১ বছর পর যদি এই আলোকোজ্জ্বল বাংলাদেশে ভূতুড়ে কাণ্ড চলতে থাকে তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ কি। আমাদের পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থার এই কি চেহারা। চোর চোর এই খেলার গতি প্রবাহই বা আর কতদিন। করোনা মহামারির পর দেশ এখন সিন্ডিকেটের লুকোচুরির মহোৎসবে মেতে উঠেছে। এক জ্বালানি তেলের অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে তো বাড়ছেই। মনে হয় এসব দেখার কেউ নেই। এক ভোক্তা অধিকার বিভাগের ওপর দেখার দায়িত্ব দিয়ে সবাই মুখ লুকায়। আর পণ্যের দরের জ্বালায় প্রাণ যায় প্রান্তিক জনের। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুষ, দুর্নীতির অবাধ বিচরণ। সবাই ফাঁকফোকর খোঁজে অর্থ কামাইয়ের। তখন কবির শেখের মনে পড়ে, ‘লেখাপড়া করে যেই গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেই।’ ওরা বিদ্বেন, হাতে কলম, মগজে বুদ্ধি, কামাইতো ওরা করবেই। যত অসুবিধা আমাগো দিনমজুর, লাঙলওয়ালাদের। ছেলেটার চাকরি হয় না। টাকা চায় সবাই। টাকা নাই, চাকরিও নাই। আমাদের তো ধরার লোক নাই। কে দেবে চাকরি। এভাবে ভাগ্যের বিলাপে দিন চলে নিম্ন আয়ের মানুষের। রাত যায়, দিন যায় ওরা ক্ষেতে খামারে গতর খাটিয়ে রক্ত জল করে। আর ওদের রস রক্তের বিনিময়ে সাহেবরা এসি চালায়। হায়রে কপাল, ইংরেজ বেনিয়ারা চলে গেছে, তবে তাদের রেখে যাওয়া মগজগুলি এখনো হাতড়ে বেড়ায় সমাজের ঘরে ঘরে রক্ত চোষার মতো। তাই সংকীর্ণ গলিটার নোংরা পথটাতে সবারই নজর। এখানেই ওদের কদর। বাড়বে নাম, ডাক, যশ, খ্যাতি। দেশে এখন উচ্চবিত্ত ও নিম্ন বিত্তের বিশাল দেয়াল উঠে গেছে। কেউ দেখার নেই।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে সেদিন দেশমাতৃকার জন্য মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন, ধর্ষিত হয়েছেন, পিতৃহারা হয়েছেন, বিধবা হয়েছেন তারাতো এ বাংলাদেশ দেখতে চাননি। চেয়েছিলেন সুন্দর, স্বচ্ছ, সাবলীল এক বাংলাদেশ। যেখানে ক্ষুধা, দারিদ্র্য থাকবে না। মানুষ শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত জীবন পাবে। কিন্তু আজ তা উবে গেছে। বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় বলেছিলেন, আমি দেশ স্বাধীনের পর সোনার খনির পরিবর্তে চোরের খনি পেয়েছি। পিতা তুমি সত্যিই বলেছিলে। আজ সারাদেশে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ জনজীবন। ঘুষ, দুর্নীতি সমাজের পরতে পরতে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। বিবেকহীন বিবেকের দোর্দণ্ড প্রতাপে লণ্ডভণ্ড জনজীবন। মনে হয় কোথাও কেউ নেই। দেখার কেউ নেই। বিপর্যস্ত মানবতা বিবেকের বন্দি আর্তনাদে ডুকরে মরে। ত্রাতারা খিলখিলিয়ে হাসে। উপভোগ করে শরতের নদী তীরে সূর্যাস্তের চিলের ওড়াউড়ি শেষ খাবারের সন্ধান।

বিমলেন্দু রায়
কলাম লেখক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়