উগ্র মৌলবাদের বিরুদ্ধে গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের কর্মসূচি

আগের সংবাদ

গৃহায়ণ ও রাজউকের ১১ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে

পরের সংবাদ

রাজশাহীর জনসভায় শেখ হাসিনা : আ.লীগ কখনো পালায় না

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, ঢাকা ও রাজশাহী : স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আবারো নৌকায় ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, গত নির্বাচনে নৌকা মার্কায় আপনারা ভোট দিয়েছেন। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আগামী নির্বাচন এই বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে। উন্নয়নের জয়যাত্রা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আবারো নৌকায় ভোট দিন। উপস্থিত জনতার কাছে ওয়াদা চেয়ে তিনি বলেন, আমরা উন্নয়ন করেছি। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন কিনা- ওয়াদা চাই। এ সময় উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে নৌকায় ভোট দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন আগামীতে আবার দেখা হবে।
রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে গতকাল রবিবার বিকালে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামালের সভাপতিত্বে ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এবং রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারার যৌথ সঞ্চালনায় জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলির সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ মজুমদার, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ পালানোর সুযোগ পাবে না- বিরোধী জোটের নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দল অনেক কথাই বলে। তারা আমাদের আবার নোটিস দেয়। বলে, আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। আমি এই বিএনপি-জামায়াত জোট যারা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞেস করি পালায় কে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। পিছু হটে না। এমনকি আমি, ওই জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিল আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি বাধা অতিক্রম করেই দেশে ফিরেছিলাম। আবার ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে, তখনো বিদেশে গিয়েছিলাম, আমার ছেলের বউ অসুস্থ ছিল। তার বাচ্চা হয়েছিল, অপারেশন হয়েছিল, তাকে দেখতে।

আমাকে দেশে ফিরতে দেবে না। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস দেয়া হয়েছিল। আমি বলেছি, আমি যাব। এই কেস মোকাবিলা করব। বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে আমি দেশে ফিরে এসেছি। আজকে যারা বলে পালানোর সুযোগ পাবে না আওয়ামী লীগ, আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আওয়ামী লীগ পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই।
বিএনপি নেতৃত্বের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি কাকে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে? দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তাদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে? যে নাকি ২০০৭-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল, আর কোনোদিন রাজনীতি করবে না। এই মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল। সে কথা কি বিএনপি নেতাদের মনে নাই? দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা, তারেক টাকা পাচার করেছিল মানিলন্ডারিং করে। তাদের পাচার করা ৪০ কোটি টাকা আমরা বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি। এর জবাব কি তারেক দিতে পারবে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। এই সংগঠন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখনই ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দারিদ্র্যসীমা ৪০ ভাগ থেকে নামিয়ে আমরা ২০ ভাগে এনেছি। বিধবাভাতা, বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযুদ্ধ ভাতাসহ সমস্ত ভাতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। মা-বোনদের মাতৃত্বকালীন ভাতা দিচ্ছি। এমনকি, কর্মজীবী মা সন্তানকে যাতে বুকের দুধ খাওয়াতে পারে সেজন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের এই দেশে একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষকে বিনা পয়সায় ২ কাঠা করে জমি দিয়ে বিনা পয়সায় ঘর করে দিচ্ছি। যারা বাকি আছে, তাদেরও করে দেব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। কোনো মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে না- সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
রাজশাহীর উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রাজশাহী সবসময় অবহেলিত ছিল। বিগত মেয়র নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছিলেন। বিভিন্ন এলাকায় নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করেছিলেন। ২০০৯ থেকে এই ১৪ বছরে শুধু জেলা ও মহানগরে ১০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা বিভিন্ন প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করেছি। তার মধ্যে শুধু রাজশাহী মহানগরে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করেছি। আজকে (গতকাল) ১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকার ২৬টি প্রকল্প উদ্বোধন করলাম। ৩৭৫ কোটি টাকার ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম। এই প্রকল্পগুলো আপনাদের আমি উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করি। এই রাজশাহীর কী অবস্থা ছিল। একবার চিন্তা করে দেখেন। ২০০১ সালের কথা চিন্তা করে দেখেন। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায়। প্রতিনিয়ত রাজশাহীতে খুন, হত্যা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন। এই রাজশাহীর ফাহিমা, মহিমা, রাজুফার ওপর কীভাবে পাশবিক নির্যাতন করেছে ওই বিএনপি ক্যাডার বাহিনী এবং জামায়াত জোট। মা-বাবা নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলে একটা বাচ্চা মেয়েকে গ্যাং রেপ করা হলো!
নৌকার ওপর এত রাগ কেন- সেই প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট না দিলে দেশ স্বাধীন হতো না। দেশ স্বাধীন না হলে তাদের নেতা জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল প্রমোশন পেত না। এটা তারা ভুলে যায়। আর দেশ স্বাধীন না হলে কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারতো না খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রীও হতে পারত না। আর সেই নৌকার ওপর এত রাগ কেন? অথচ নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ কী পায়? আজকে খাদ্যে নিশ্চয়তা পাচ্ছে। পরনে কাপড় পাচ্ছে। রোগে চিকিৎসা পাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। বাড়ির কাছে মা-বোন হেঁটে গিয়ে চিকিৎসা পেতে পারেন। বিনা পয়সায় ৩০ প্রকার ঔষধ দেয়া হচ্ছে। আগামীতে সেখানে যেন ডায়বেটিস, প্রেসার পরীক্ষা করা যায়। ইনসুলিন দেয়ারও ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সেইভাবে আমরা মানুষের সেবা করে যাচ্ছি।
ধর্মীয় বিষয়ে সরকারের নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মসজিদ-মন্দির ধর্মভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সব জায়গায় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা ব্যবস্থা নিয়েছি ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে। আমরা ইমাম, মুয়াজ্জিনদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়ে সেখানে সীট মানি দিয়েছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছি। ডিজিটাল কুরআন শরীফ যেখানে আরবিতে লেখা থাকবে, বাংলায় উচ্চারণ সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি উচ্চারণ তরজমাসহ থাকবে। সেই ডিজিটাল কুরআন শরীফ আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। ৫৬০টি মডেল মসজিদ এবং ইসলামী কালচারাল সেন্টার করে দিচ্ছি। ধর্ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য যেন মানুষ জানতে পারে সেখানে ইমাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সমস্ত সুব্যবস্থা থাকবে। একেবারে লাশ দাফন-কাফন সমস্ত ব্যবস্থা রেখে ৫৬০টা মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ আমরা শুরু করেছি। বিএনপি ছিল, খালেদা জিয়া, এরশাদ, জিয়া কেউ করেনি। করেছে একমাত্র আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কাজ নিজেরা লুটেপুটে খাবে। যখন জিয়াউর রহমান মারা গেল। এখন তো অনেকেই আপনারা জানেন না। তখন দেখানো হলো কী? জিয়া কিচ্ছুই রেখে যায়নি। একটা ভাঙা সুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া। এখন ভাঙা সুটকেস কোথায়? খালেদা জিয়া সেই মূল্যবান শাড়ি ফ্রান্স থেকে কিনে আনে। তারেক জিয়াদের সেই কোকো-১, কোকো-২ লঞ্চ, তাদের ইন্ডাস্ট্রি, তাদের টাকা এবং এত টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে যে এখন যান, আপনারা দেখবেন, তারা কীভাবে আয়েশী জীবন যাপন করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সেই ডিজিটাল মাধ্যমে আমাদের গিবত গায়, আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। আর মানুষকে উসকানি দেয়। এটাই তাদের কাজ। বাংলাদেশের মানুষের কোনো ভালো তারা সহ্য করতে পারে না- এটাই হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে ওয়াদা দেই, সেই ওয়াদা রক্ষা করি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বলেছিলাম, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন করব। আল্লাহর রহমতে আমরা তা করেছি। ২০২০ এ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আর ২০২১ সালে স্বাধীনতা সূবর্ণজয়ন্তী করে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। আগামীতে বাংলাদেশকে আমরা আরো উন্নত করতে চাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়