উগ্র মৌলবাদের বিরুদ্ধে গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের কর্মসূচি

আগের সংবাদ

গৃহায়ণ ও রাজউকের ১১ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে

পরের সংবাদ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন : পুরনো কৌশলে জাতীয় পার্টি > বিএনপির উপর নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে সরব হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। চলছে নামসর্বস্ব ও ব্যক্তিনির্ভর জোট রাজনীতির ছড়াছড়ি। সাম্প্রতিক সময়ের আলোচনায় পিছিয়ে নেই জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও (জাপা)। কারণ হঠাৎই সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরব হন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ কয়েকজন নেতা। তাদের এমন ভূমিকায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বত্র আলোচনার খোরাক হয় দলটি। আলোচনায় প্রশ্ন উঠে- তাহলে কি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির গাঁটছড়ার ইতি ঘটতে যাচ্ছে? জাপা কি বিএনপির সঙ্গে জোট করতে যাচ্ছে? নাকি আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে? এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সম্পর্ক কেমন হবে- এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে দলটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো একই কৌশল অবলম্বন করতে পারে।
জাপা সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে, তা এখনি বলা মুশকিল। কারণ নির্বাচনের এখনো প্রায় এক বছর বাকি। এর মধ্যে রাজনীতির মাঠে কী ঘটে সেদিকে নজর রাখতে চায় দলটির শীর্ষ নেতৃৃত্ব। অর্থাৎ রাজনীতির মাঠ পরিস্থিতি বিবেচনায় সময়ের সিদ্ধান্ত সময়ে নেয়ার কৌশল অবলম্বন করবে দলটি। দলটির নেতারা বলছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে রাজপথে আন্দোলনে সরব হয়েছে বিএনপিসহ সমমনা প্রায় ৫৪ দলীয় পৃথক জোট ও মঞ্চ। ইতোমধ্যে এসব জোট ও মঞ্চ বিএনপির সঙ্গে মিলে যুগপৎ আন্দোলনও শুরু করেছে। ফলে সামনের দিনে এই আন্দোলন কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে সিদ্ধান্ত নিতে চায় দলটি। অর্থাৎ আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে সমঝোতা হতে পারে জাপার। আর যদি বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে, তাহলে জাপা একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো তিনশ’ আসনে প্রার্থী দিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মাঠে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবে।
এসব বিষয়ে জাপার শীর্ষ এক নেতা ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি এখন কোনো জোটে নেই। ফলে আমরা আমাদের মতো করে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেব। নির্বাচনের সময় এখনো অনেক বাকি। দেখা যাক কী ঘটে। জাতীয় পার্টি সময়ের সিদ্ধান্ত সময়েই নেবে। দেশে অনেক জোটের হিসাব-নিকাশ চলছে, সেক্ষেত্রে জোট-মহাজোটের হিসাবে আগামী নির্বাচনে আপনাদের ভূমিকা কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাপা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। একই সঙ্গে দেশে গণতন্ত্র সমুন্নত থাকুক, আমরা সেটাই চাই। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবে আমাদের দল। একটু অপেক্ষা করুন। সময় হলে সব পরিষ্কার দেখতে পাবেন।

এদিকে সম্প্র্রতি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেন জাপার চেয়ারম্যানসহ দলটির শীর্ষ নেতারা। তখন তাদের অবস্থানেরও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া জাপার জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের মধ্যে টানাপড়েন দেখা দেয়। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে ওঠে। জাতীয় পার্টির এই অবস্থান নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেও ভাবিয়ে তোলে। অর্থাৎ একদিকে জাপায় গৃহবিবাধ, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজপথে সরব অবস্থান। এ অবস্থায় জাপাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলটি। পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজনীতির মাঠে জাপার ভূমিকা যাই হোক না কেন, নির্বাচনে সংসদের বিরোধী দলটিকে ছাড়তে চায় না তারা। তাদের সঙ্গে নিয়েই দ্বাদশ নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় আওয়ামী লীগ। সে অনুযায়ী আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এবং দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। জাপার শীর্ষ দুই নেতার বৈঠকে এসব আলোচনা-সমালোচনার অনেকটাই ইতি ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে জাতীয় পার্টিকে আরো শক্তিশালী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি জাতীয় পার্টিকে আরো স্ট্রং দেখতে চান। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আরো কঠিন সংকট পাড়ি দিতে হবে বলেও তাদের সতর্ক করেছেন। প্রস্তুতি নিতে বলেছেন নির্বাচনের জন্য। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় পার্টি স্ট্রং ভূমিকা রাখবে আমি সেটাই প্রত্যাশা করি। এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টি তার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর এবং জাতীয় পার্টি এ লক্ষ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদ ও সংসদের বাইরে গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাবে। তিনি বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচনে আমরা অংশ নেব। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদও এ সময় একমত পোষণ করেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা বলেন, জাপার বড় অংশই আওয়ামী লীগের অনুগত থেকেই রাজনীতি করতে চায়। একই সঙ্গে তারা সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবেও সংসদ কিংবা রাজপথে ভূমিকা রাখতে চায়। আসলে অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই জাপা এখন বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে হবে। এ বাস্তবতায় জাতীয় পার্টির জন্য বিরোধী দল হিসেবে টিকে থাকাই বড় লড়াই। যেহেতু বিএনপি আন্দোলন করছে, সেজন্য জাতীয় পার্টি সরকারবিরোধী মনোভাব দেখিয়ে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে। যাতে বিএনপি বিরোধী দল হিসেবে একক কর্তৃত্ব না করতে পারে। এটি জাতীয় পার্টির একটি পাতানো খেলা। দ্বাদশ নির্বাচনে জাপার ভূমিকা কিংবা কৌশল কেমন হতে পারে, এমন প্রশ্নে এই নেতা বলেন, জাপা আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে। তবে যেহেতু জাপা আমাদের সঙ্গে জোটে নেই, সেহেতু আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন নিয়ে সমঝোতা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের যেসব নির্বাচনী আসনে শক্ত প্রার্থী রয়েছে, সেসব স্থানে কিছুটা ছাড় দেয়া হতে পারে। জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের রাজপথের আন্দোলনের দিকে তাকিয়ে আছে জানালে এই নেতা বলেন, জাতীয় পার্টির চরিত্র নিয়ে আমরা সন্দিহান। তারা কখন, কী বলে, সেটা বোঝা আসলে মুশকিল। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক আসলে কতটুকু উষ্ণ, কতটুকু শীতল, তা নির্বাচনের আগে ছাড়া বোঝার উপায় নেই।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সাল থেকেই আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির ঐক্য। তখনকার মহাজোটের অন্যতম শরিক দল ছিল জাতীয় পার্টি। ২০০৮ সাল এবং ২০১৪ সালের জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ সরকারের শরিক ছিল। দুই মেয়াদেই জাতীয় পার্টির নেতারা মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে ১৪ দলকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয়। জাতীয় পার্টি পৃথকভাবে অংশ নেয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়