আরো এক মামলায় রফিকুল মাদানীর বিচার শুরু

আগের সংবাদ

নাশকতার শঙ্কায় সতর্ক আ.লীগ : ষড়যন্ত্র ঠেকাতে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ ক্ষমতাসীন দলের, ‘পাল্টা কর্মসূচি’তে অস্বস্তি বিএনপির

পরের সংবাদ

নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস চাইলে দামও দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী > পৃথিবীর কোনো দেশই গ্যাস আর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয় না

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ থেকে ঋণ নেয়ার কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে না বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন সংসদনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আইএমএফ তখনই ঋণ দেয় যখন ওই দেশ ঋণ দেয়ার যোগ্যতা থাকে। আমরা বিদ্যুৎ ও গ্যাসে এখনো ভর্তুকি দিচ্ছি। কিন্তু পৃথিবীর কোনো দেশই গ্যাস আর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয় না। জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান তিনি।
চুন্নু প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান- আইএমএফের ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ দেশে আলোচিত। এই ঋণ পেতে কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে। এই ঋণের কারণে ইতোমধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ঋণের কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। এতে কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে উৎপন্ন পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতির উপর চাপ বাড়বে। এই চাপ সরকার কীভাবে মোকাবিলা করবে? এর জবাবে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, এখানে আমরা তেমন কোনো শর্ত দিয়ে ঋণ নিইনি।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায়, তাহলে যে মূল্যে কিনে আনব, সেই মূল্যই তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কত ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকিটা দেবে, সেটা জনগণেরই টাকা। গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে যদি ৪০, ৫০ ও ৬০ হাজার কোটি টাকা আমাকে ভর্তুকি দিতে হয়, তাহলে সেটা কী করে দেব?
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারাবিশ্বে জ্বালানির বাজার চড়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ইংল্যান্ডে ১৫০ ভাগ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে এই ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর। আমরা মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ালাম আর বাল্কে কিছু গ্যাসের দাম। এলএনজি আমরা যেটা ৬ ডলারে স্পট প্রাইসে কিনতাম, সেটা এখন ৬৮ ডলার। তিনি বলেন, পণ্যের দাম সারা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের কারণে বেড়ে গেছে। তারপরও সব মানুষ যাতে কম দামে খাদ্যপণ্য পায় সে ব্যবস্থা করেছি। যারা কিছুই করতে পারে না তাদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষিতেও ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। সরকারপ্রধান বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়েনি; শিল্প পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ ঠিক মতোই সেবাখাতের বিল দেয় আর বিত্তশালীরা লাভবান হয়। 
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী আছেন, এখানেও (সংসদে) আছে, তাদের আমি তো স্পষ্ট বলেছি, গ্যাস আমি দিতে পারব, কিন্তু যে মূল্যে গ্যাস আমরা বাইরে থেকে কিনে নিয়ে এলাম, সেই মূল্য যদি আপনারা দেন, আমরা গ্যাস দিতে পারব। যত মূল্য কম থাকে, তাতে আমাদের বিত্তশালীরা লাভবান হন। বিত্তশালীরা আরাম-আয়েশ করবে, আর স্বল্পমূল্যে পাবে, তা কী করে হয়? সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা নিচ্ছি। এই সংকটকালে সবাইকে জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনে বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। এভাবে যদি সবাই উদ্যোগ নেয়, তাহলে বিদ্যুৎ ব্যবহার সাশ্রয়ী হতে পারে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নি¤œ আয়-মধ্যম

ায়ের যারা, তাদের জন্য টিসিবির ফেয়ার প্রাইস কার্ড দিয়ে দিয়েছি। যেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারে। তেল, চিনি, ডাল সীমিত আয়ের মানুষ ন্যয্যমূল্যে কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি। এর থেকে যারা নি¤œ আয়ের, তাদের জন্য ১৫ টাকায় চাল আমরা দিচ্ছি। সেই সঙ্গে তেল, ডাল ও চিনিও দেয়া হচ্ছে। আর একেবারে হতদরিদ্র, যারা কিছুই করতে পারে না। তাদের বিনাপয়সায় খাদ্য সরবরাহ করছি। স্বল্পআয়ের মানুষ যাতে কষ্টে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রেখে এই ব্যবস্থা করছি। সংকটের গভীরতা বোঝাতে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ হচ্ছে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি। এটা একটা উন্নত দেশের কথা বললাম। পৃথিবীর সব দেশে এই অবস্থা বিরাজমান। বাংলাদেশ এখনো সেই অবস্থায় পড়েনি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে এম এ লতিফের মৌখিক প্রশ্নের দীর্ঘ ১৭ পৃষ্ঠার জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে উত্তর দেয়ার একপর্যায়ে বাকি অংশ পঠিত বলে গণ্য করার অনুরোধ করেন তিনি- যা গৃহীত হয়। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্য সংকটের আশঙ্কার পরিস্থিতিতে দেশে যেন সংকট সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে সরকারের নেয়া বিস্তারিত ব্যবস্থাও তুলে ধরেন তিনি।
রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। যার ফলাফল হবে মাথা পিছু আয় ১২ হাজার মার্কিন ডলার। স্বাক্ষরতার হার এখন ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে এক কোটি কর্মসংস্থান হবে। এসব অঞ্চলে ৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য উৎপাদিত হবে। সরকারপ্রধান বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধিশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে সরকার জোর দেয়ার কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। প্রধানমন্ত্রী জানান, স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ প্রতিষ্ঠার জন্য এখন থেকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ হিসেবে কাজ করবে। স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ চারটি স্তম্ভের আলোকে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য বাস্তবায়নে কানেক্টিভিটি (অবকাঠামো উন্নয়ন), মানব সম্পদ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ, ফ্রিল্যান্সারদের উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ এবং ইভেন্ট ও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।  

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়