আইনমন্ত্রী : মানবাধিকারের উন্নতি হওয়ায় র‌্যাব নতুন নিষেধাজ্ঞায় পড়েনি

আগের সংবাদ

পাহাড়ে সন্ত্রাসী-জঙ্গি একাকার : স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর যোগসাজস, দুর্গম হওয়ায় অভিযান চালানো কঠিন

পরের সংবাদ

নাশকতার শঙ্কায় সতর্ক আ.লীগ : ষড়যন্ত্র ঠেকাতে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ ক্ষমতাসীন দলের, ‘পাল্টা কর্মসূচি’তে অস্বস্তি বিএনপির

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : পাল্টে যাচ্ছে রাজনীতির হাওয়া। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দিন দিন উত্তপ্ত হচ্ছে রাজপথ। একদিকে ভোটের হাওয়ায় বাড়ছে জোটের আকার। অন্যদিকে নিত্য নতুন কর্মসূচি নিয়ে প্রতিনিয়ত মাঠ গরম করে চলেছে দলগুলো। কর্মসূচি-পাল্টা কর্মসূচিতে রাজপথে মুখোমুখি চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিএনপির অভিযোগ, তাদের কর্মসূচির দিন ‘পাল্টা কর্মসূচি’ দিয়ে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগ। আর ক্ষমতাসীনদের অভিযোগ, বিএনপি-জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে এক-এগারোর কুশীলবরা। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তারা। দেশের উন্নয়ন বারবার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। অনির্বাচিত সরকারকে তারা ক্ষমতায় আনতে চায়। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নয়, বিএনপির যে কোনো নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা রাজপথে মোকাবিলা করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস ক্রমেই বাড়ছে- যা দানা বাঁধতে শুরু করে গত বছরের ডিসেম্বরে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ সামনে রেখে দলটির নেতা আমান উল্ল্যাহ আমান সরকারকে হুমকি দিয়ে বলেন, ওইদিনের পর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়। তার এই বক্তব্যের সূত্র ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে কানাঘুষা শুরু হয় সরকারের বিরুদ্ধে বড় কোনো পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। এরই মধ্যে বিএনপির আগ্রাসী কর্মসূচির পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও অর্থায়নের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপর থেকেই সতর্ক অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ। রাজধানীতে বিএনপির বড় কোনো কর্মসূচি থাকলেই ওইদিন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে ক্ষমতাসীন দলও।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচন বানচালে পুরনো ষড়যন্ত্রে সক্রিয় বিএনপি-জামায়াত। ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো সহিংস রাজনীতির ছক কষছে তারা; পেট্রল বোমায় মানুষ মারার ষড়যন্ত্র করছে। আর তাদের টাকা আসছে দুবাই থেকে। তবে বিএনপি-জামায়াতসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দলের

সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটির যৌথ সভায় আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি করেন সরকারপ্রধান। এজন্য সারাদেশের নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ যে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল, তার প্রমাণ সদ্য বিদায়ী বছরেও মিলেছে। বিরোধীদলগুলো রাজপথে আন্দোলনে নেমেও টিকতে পারেনি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দক্ষতার কারণে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রাজপথে আওয়ামী লীগের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকার কারণে জনগণের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়নি।
তবে বরাবরের মতোই বিএনপির অভিযোগ, সরকারি দলের পাল্টা কর্মসূচির কারণে একদিকে তাদের কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে জনভোগান্তি হচ্ছে। সাবেক বিএনপি নেতারা বলছেন, আমরা যখন এই সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন শুরু করি, তার প্রথম থেকেই একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি, আমাদের প্রতিটি আন্দোলনের দিনে আওয়ামী লীগ একটা পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। সেই কর্মসূচি দেয়ার সময়ে তারা যে ভাষা ব্যবহার করেছে, এই ভাষাগুলো সম্পূর্ণভাবে অগণতান্ত্রিক, সন্ত্রাসী ভাষা। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ ‘পাল্টা কর্মসূচি’ দিয়ে একটা সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করছে। বিএনপির কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগকে ‘পাল্টা কর্মসূচি’ না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির সব দায় আওয়ামী লীগ ও সরকারকেই বহন করতে হবে। কারণ তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিরোধী দলকে উসকানি দিয়ে একটা ট্র্যাপের মধ্যে ফেলা এবং যাতে করে একটা সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। সেই পরিস্থিতি যাতে না ঘটে বিএনপি অত্যন্ত সচেতনভাবে, অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে আসছে।
আর ক্ষমতাসীনরা বলছেন, আমরা রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে ঘায়েল করতে কোনো ব্যবস্থা নিইনি। রাস্তাঘাটে কেউ যদি অপরাধ করেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সরকারের দায়িত্ব। কারণ জনগণকে আইনের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব সরকার নিয়েছে। তাদের মতে, বিএনপি আন্দোলনের নামে সহিংসতার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে না। কর্মসূচির নামে বিএনপি নাশকতার উসকানি দিলে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না। সহিংসতার চেষ্টা হলে তাদের সমুচিত জবাব দেয়া হবে। 
দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষায় আওয়ামী লীগ রাজপথে আছে এবং থাকবে। বিএনপির সঙ্গে সংঘাত করার কোনো ইচ্ছা আওয়ামী লীগের নেই। আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয় না। আওয়ামী লীগের অবিরাম কর্মসূচি দেয়া আছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করার অধিকার সব রাজনৈতিক দলের রয়েছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপির অতীত আন্দোলন সুখকর নয়। তারা জ¦ালাও-পোড়াও করেছে। এখনো আন্দোলন করছে। কিন্তু জনগণ সম্পৃক্ত নয়। ফলাফল শূন্য। সরকারের উচিত বিএনপির শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিক আন্দোলনে সহযোগিতা করা। তবে অযৌক্তিক ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে জনগণের পাশে দাঁড়ানোই সরকারের কর্তব্য। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগও নৈরাজ্য ঠেকাতে মাঠে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়