কুমিল্লাকে হারের স্বাদ দিল রংপুর

আগের সংবাদ

বাংলাদেশ-ব্রাজিল বাণিজ্য বাড়ানোয় জোর প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে : বঙ্গবন্ধু টানেলে কোন গাড়ির টোল কত হবে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ভেতর চলতে হলে কোন গাড়িকে কত টোল দিতে হবে, তার একটি তালিকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এই তালিকা অনুযায়ী গাড়িভেদে ২০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা দিতে হবে। সেতু কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবিত টোলের এই হার গত ২০ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুমোদন পেয়েছে। এখন তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
টানেলে দ্বিচক্র, তিন চাকার যান, গ্যাস সিলিন্ডারসহ বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থ বহনকারী গাড়ি ও পায়ে হেঁটে কোনো মানুষ পারাপার হতে পারবে না বলে জানা গেছে। সেতু কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রাইভেটকার, জিপ গাড়ি ও পিকআপকে ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসকে ২৫০, ৩১ কিংবা এর চেয়ে কম আসনের বাসকে ৩০০, বত্রিশ কিংবা তার চেয়ে বেশি আসনের বাসকে ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। পাশাপাশি পাঁচ টনের ট্রাককে ৪০০, পাঁচ থেকে আট টনের ট্রাককে ৫০০, আট থেকে ১১ টনের ট্রাককে ৬০০ টাকা টোল দিতে হবে।
এদিকে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেলের কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ইতোমধ্যে টানেলের সিভিল ওয়ার্ক শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু নিরাপত্তা বলয় তৈরি, বৈদ্যুতিক সংযোগসহ খুঁটিনাটি যেসব কাজ আছে তা শেষ করতে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ৬ লেনের টানেল সংযোগ সড়কের অন্তত চার লেনের রাস্তা টানেলের সঙ্গে খুলে দিতে রাত-দিন চলছে কর্মব্যস্ততা।
গত ২৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ প্রান্তের একটি টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন করা হয়েছে। এই উদযাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়লি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে টানেলের পুরো কাজ সম্পন্ন হবে। তবে কবে নাগাদ টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে- তার চূড়ান্ত দিনক্ষণ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত করবে মন্ত্রণালয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে টানেল যাতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া যায় সেরকম প্রস্তুতি চলছে। এই টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চল দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পাঞ্চলে রূপ নেবে বলে আশা অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তাদের। উন্নয়নের মাইলফলক এই টানেল চালু হলে সম্ভাবনার একটি নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে।
বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ ভোরের কাগজকে বলেন, দুটি টিউবের এই টানেলের টিউবসহ সব পূর্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ। সম্পন্ন কাজে যাতে কোনো ত্রæটি না থাকে সেগুলো চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। টানেলের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় এনে টানেলের দুপ্রান্তের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হচ্ছে অত্যাধুনিক স্ক্যানার মেশিন। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার প্রস্তুতি চলছে। তবে টানেল কখন উদ্বোধন হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
এদিকে ৪০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ লেনের টানেল সংযোগ সড়কের মধ্যে ৪ লেন ইতোমধ্যে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে সংযোগ সড়কের মাত্র ১ কিলোমিটার রাস্তার ফিনিশিং কাজ বাকি। এইটুকু কাজ শেষ হলে টানেল পর্যন্ত পুরো মহাসড়ক প্রস্তুত হয়ে যাবে। টানেলের মূল সড়কের কাজ শেষ করে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। মূল সড়কের ২১টি কালভার্টের মধ্যে যে দুটির কাজ অবশিষ্ট ছিল সেগুলোও শেষ পর্যায়ে। অন্যদিকে টানেল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতিও চলছে সমানতালে। নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল কর্ণফুলী নদীর তলদেশে মাল্টিলেন রোড টানেলটি নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
যোগাযোগে ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন : টানেলকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ইতোমধ্যে আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে সংযোগ সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প-কারখানা। টানেলকে ঘিরে পর্যটন, শিল্পায়নসহ অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। টানেল চালু হলে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিট। সময় বেঁচে যাওয়ায় অর্থনীতি গতি পাবে। টানেল নির্মাণের আগে ২০১৩ সালে করা সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী যানবাহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ ১ লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর্ণফুলী টানেল শুধু দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে তেমনটা নয়। এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্প-কারখানাসহ অর্থনৈতিক বিপ্লব হবে। এছাড়া পর্যটনশিল্পের জন্য বয়ে আনবে নতুন মাত্রা। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম প্রকৃত অর্থেই বাণিজ্যিক রাজধানী হয়ে উঠবে। এই টানেল একদিকে যেমন বাংলাদেশের মর্যাদাকে তুলে ধরবে, পাশাপাশি অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করবে। টানেল ঘিরে বৃহত্তম চট্টগ্রাম হবে একটি সমন্বিত বিজনেস হাব। সৃষ্টি হবে বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান। বড়বে বৈদেশিক বাণিজ্য।
কর্ণফুলীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। নদীর পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাশের সংযোগ সড়কসহ এই প্রকল্পের সর্বমোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। নদীর নিচে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮০ মিটার ব্যাসের দুটি টিউব। চট্টগ্রামে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে নদীর তলদেশ হয়ে টানেলটি চলে গেছে আনোয়ারার চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থানে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়