কুমিল্লাকে হারের স্বাদ দিল রংপুর

আগের সংবাদ

বাংলাদেশ-ব্রাজিল বাণিজ্য বাড়ানোয় জোর প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

টুঙ্গিপাড়ায় দলীয় বৈঠকে শেখ হাসিনা : অপকর্ম প্রতিরোধে সজাগ থাকবে আ.লীগের তৃণমূল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না- এই মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ চলবে। এই মাটিতে (টুঙ্গিপাড়ায়) বসে প্রতিজ্ঞা নিচ্ছি, বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি যাতে কেউ আর গতিরোধ করতে না পারে, সেজন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূলের প্রতিটি নেতাকর্মী সজাগ থাকবে, দৃঢ় থাকবে। তারা যে কোনো অপকর্ম প্রতিরোধ করবে। গতকাল শনিবার দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটির এক যৌথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দলটির নতুন নেতৃত্ব গঠিত হওয়ার পর এই প্রথম বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত টুঙ্গিপাড়ায় সভা অনুষ্ঠিত হলো। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আব্দুর রহমান, কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী, উপদেষ্টা ও জাতীয় কমিটির সদস্যরা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। তাদের ঘৃণা জানাতে হবে। তারা মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। হত্যা, খুন ও গুম জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। খালেদা জিয়া ও তার কুলাঙ্গার পুত্র মিলে ২১ আগস্ট থেকে শুরু করে এত মানুষ হত্যা ও অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। ভবিষ্যতে একটা মানুষকেও যদি তারা ক্ষতিগ্রস্ত করে- তাহলে যে হাত দিয়ে আগুন দিবে ওই আগুনে সেই হাত পুড়িয়ে দেয়া হবে। যে হাতে মানুষ খুন করবে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া হবে। এই কথাটা যেন সবার মনে থাকে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত আন্দোলন করলে বাধা দেব না। কিন্তু আন্দোলনের নাম করে যদি আবারো নাশকতা করে, দেশের ক্ষতি সাধন করতে চায়, আর্থসামাজিক ক্ষতি করতে চায় তাহলে উপযুক্ত জবাব জনগণ দেবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৩০ আসনে বিজয়ী হয়েছিল। এটা বোধহয় তাদের মনে থাকে না। ওই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল। পরে উপনির্বাচনে একটা পায়। এটাই ছিল তাদের শক্তি। সেজন্য তারা নির্বাচন চায় না বা ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসতে চায়।
উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ বলে আওয়ামী লীগ নাকি দেশের সর্বনাশ করেছে। তাহলে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কী তাদের সর্বনাশ করা? এগুলো কী মানুষের ক্ষতি সাধন করা? তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে ক্ষতিটা তারা দেখল কোথায়? একইদিন ১০০ সেতু ও ব্রিজ এবং ১০০টি সড়ক উন্নত ও উদ্বোধন করা কি সর্বনাশ? এগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরা উচিত। আমরা আছি জনগণের পাশে আর তারা আছে ধ্বংস করতে।
এরপর কোটালিপাড়ায় যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এরপর গোপালগঞ্জ যখন আসব,

তখন কোটালিপাড়ায় যাব। আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের নেতাদের বলব আপনারা টুঙ্গিপাড়া সফরে আসবেন। সবার দাওয়াত থাকল, যে কোনো দিন টুঙ্গিপাড়ায় আসতে পারেন। আমাদের আতিথেয়তা নিতে পারেন।
দিবসভিত্তিক কর্মসূচি চূড়ান্ত : এদিকে নতুন কমিটির প্রথম যৌথসভায় গতকাল চলতি বছরে বিভিন্ন জাতীয় দিবসভিত্তিক কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সেসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। সেজন্য প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হয়।
জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন : এর আগে বেলা ১২টায় টুিঙ্গপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও জাতীয় কমিটির নেতারা। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানান তারা। এরপর সেখানে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্ধোধন : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর টুঙ্গিপাড়া ও কোটালিপাড়ায় ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এসব প্রকল্পের মধ্যে ১৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) আর বাকি ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা ও গণপূর্ত বিভাগ এবং টুঙ্গিপাড়া পৌরসভা।
এর আগের দিন শুক্রবার সড়কপথে টুঙ্গিপাড়ায় আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। সেখানে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর সড়কপথে খুলনায় গিয়ে মায়ের নামে কেনা সম্পত্তি ঘুরে দেখেন। খুলনা থেকে আবার সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ফিরে নিজ বাসভবনে রাত্রিযাপন করেন। দুই দিনের কর্মসূচি শেষে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সড়কপথে ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত; গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে টানা দশমবারের মতো দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। এই সম্মেলনে টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। কাউন্সিলে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটি মনোনীত করেন শেখ হাসিনা। নতুন কমিটি গতকাল জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়