কুমিল্লাকে হারের স্বাদ দিল রংপুর

আগের সংবাদ

বাংলাদেশ-ব্রাজিল বাণিজ্য বাড়ানোয় জোর প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

জলবায়ু পরিবর্তন : প্রাকৃতিক জটের কারণেই শীতের তীব্রতা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আয়েন উদ্দীন : নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে শীতের তীব্রতায় স্থবির জনজীবন। বিশেষ করে নগরীর ভাসমান মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। শীত আর কুয়াশার দাপটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দেশের ১৬টি জেলায় বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক জটের কারণে শীতের এই তীব্রতা ও কুয়াশার দাপট।
আবহাওয়াবিদদের মতে, গত ৩০ বছরের মধ্যে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড় তাপমাত্রা সবচেয়ে কম রেকর্ড করা হয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ওপরের বাতাসের (জেট উইন্ড) চলার গতি ধীর হয়ে গেছে। এক স্থানে আটকে আছে। আর এ কারণেই তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
বাংলাদেশে এ বছর তীব্র শীত পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ভোরের কাগজকে বলেন, জেট স্ট্রিম হলো ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার উচ্চতায় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রায় যুদ্ধ বিমানের গতিবেগে প্রবাহিত বায়ু। এই বায়ু সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। সাপের মতো করে আঁকাবাঁকাভাবে এই বায়ু পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে (উত্তর দিকে কিছু অংশ ও দক্ষিণ দিকে কিছু অংশ) এগিয়ে যায়। সাধারণভাবে এই জেট তরঙ্গ (জেট স্ট্রিম) খুব অল্প পরিমাণে আঁকাবাঁকা হয়ে দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যায়। কিন্তু কোনো কোনো সময় এই জেট তরঙ্গ কোনো স্থানে প্রাকৃতিক জ্যামে পড়ে দীর্ঘ সময় ধরে এক স্থানে আটকা পড়ে।
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই জেট স্ট্রিম ঘনঘন প্রাকৃতিক জটের মধ্যে পড়ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এই জেট তরঙ্গের শীর্ষ যে স্থানের ঊর্ধ্ব আকাশে অবস্থান করে তার পূর্ব দিকে ভূমিতে বায়ুর উচ্চচাপ বিরাজ করে। এই সময় ঊর্ধ্ব আকাশ থেকে খুবই ঠাণ্ডা ও শুষ্ক বাতাস ভূমিতে নেমে আসে। যার কারণে ভূমিতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে। এ রকম একটি জেট তরঙ্গ শীর্ষ ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৪ তারিখের পর থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারত ও উত্তর পাকিস্তানের ঊর্ধ্ব আকাশে অবস্থান করছিল। যার কারণে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ও জানুয়ারি মাসের গত ৭ দিনে উত্তর ও মধ্য ভারত এবং বাংলাদেশের ভূ-পৃষ্ঠে বায়ুর উচ্চচাপ অবস্থা বিরাজ করছে ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এই দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্ব আকাশ থেকে ঠাণ্ডা বাতাস ভূ-পৃষ্ঠে নেমে আসছে। ফলে তীব্র ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, ওপরের বাতাসের (জেট উইন্ড) নি¤œগামী হয়ে বয়ে না যাওয়া। সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠের ১২ হাজার থেকে ১৮ হাজার ফুট ওপর দিয়ে জেট উইন্ড বয়ে যায়। ঘণ্টায় এটি ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায়। এটি নিচে নেমে এসে প্রচণ্ড বাতাস সৃষ্টি করলে তার ধাক্কায় জলীয়বাষ্প সরে যায়।
আবাহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গতকাল খুলনার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনি¤œ ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের পাঁচ জেলার সব কটিতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থার উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, জেট তরঙ্গটি ৬ জানুয়ারি থেকে আবারো সচল হয়ে পূর্ব দিকে যাত্রা শুরু করেছে ও ১০ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করে পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এর ফলে ৯ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশের শৈত্যপ্রবাহ ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের সন্ধ্যা ৬টার বুলেটিনে বলা হয়, দেশের অন্তত ১৬টি জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় শুক্রবারের তুলনায় গতকাল দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য আরো কমে গেছে। ফলে শীতের অনুভূতি আরো বেড়েছে। গত কয়েকদিনের মতো আজও দেশের অধিকাংশ এলাকায় শীতের তীব্রতা থাকতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়