কুমিল্লাকে হারের স্বাদ দিল রংপুর

আগের সংবাদ

বাংলাদেশ-ব্রাজিল বাণিজ্য বাড়ানোয় জোর প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ অনেক, প্রত্যয়ী আ.লীগ : অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা > সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরা ও অপপ্রচারের জবাব দেয়া

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সংকট মোকাবিলা করেই বিদায়ী বছরটি পার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। চলতি নির্বাচনী বছরে জাতিকে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই দলীয় কর্মপরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ধারণায় ই-নথি ব্যবস্থা, স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম, অনলাইন শ্রমশক্তি, ক্যাশলেস সোসাইটি এবং পেপারলেস যোগাযোগব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। ২০৪১ সাল নাগাদ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের অঙ্গীকারই তুলে ধরা হয়েছে দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে। এক্ষেত্রে চলতি বছরকে কঠিন চ্যালেঞ্জের বছর হিসেবেই দেখছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। নির্বাচনকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন তারা। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল হিসেবে অংশগ্রহণমূলক ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করা, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরে আগামী বিজয় নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আবারো ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ- এমনটাই দাবি নেতাদের।
নতুন বছরটি আরো বেশি চ্যালেঞ্জের হবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এজন্য দলীয় নেতৃত্বেও তেমন পরিবর্তন আনা হয়নি। বিশ্বব্যাপী আসন্ন সংকটে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ তো আছেই। একই সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ও সংগ্রাম মোকাবিলা করে জাতীয় নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হবে দলটির জন্য। সাম্প্রদায়িক শক্তি, সন্ত্রাসী শক্তি, জঙ্গিবাদী শক্তি বিশ্বকে সব সময় একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করায়। সেই অপশক্তি, অপরাজনীতি এবং দেশবিরোধী শক্তির হাত থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ রক্ষা করাও অন্যতম চ্যালেঞ্জ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা চ্যালেঞ্জিং বছর। সামনে আরো কঠিন চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ২২তম সম্মেলন করেছি। যে কোনো চ্যালেঞ্জ

মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। মেট্রোরেলের ফার্স্টফেজ, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। কর্ণফুলী টানেলও উদ্বোধনের পথে। শত সেতু করেছি, শত রাস্তা করেছি। সামনে অনেক কাজ আছে। সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা অভিমুখে আমরা এগিয়ে যাব- এটি আমাদের অঙ্গীকার।
এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরের মতো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। অন্যদিকে বিএনপিও পনেরো বছরের খরা কাটাতে মরিয়া। গত বছর দেশব্যাপী গণ সমাবেশ, গণ মিছিলের মতো নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়েছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ চেষ্টা করছে ইমেজ সংকট কাটাতে। দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থান উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজনীতির মাঠে। চলতি বছর রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় থাকবে জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম থাকবে সেটিকে কেন্দ্র করেই। আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ চায় ক্ষমতাসীনরা। তাদের বিশ্বাস, মুখে যাই বলুক না কেন আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। তবে রাজপথে বিএনপির সব ধরনের সহিংসতা কঠোরভাবে দমন করা হবে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা শেষমুহূর্ত পর্যন্ত সর্বোচ্চ চেষ্টা করব- যাতে বিএনপি নির্বাচনে আসে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। দলীয়ভাবে না এলেও বিএনপির একাংশ নির্বাচনে আসতে পারে। অন্যান্য দলও নির্বাচনে আসবে। মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি দেশে আবারো অরাজকতা তৈরির সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। আন্দোলন সংগ্রামের নামে ২০১৪-১৫ সালের মতো সহিংসতার পুনরাবৃত্তি কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। তাদের কোনো হরতাল অবরোধ করতে দেয়া হবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, দেশে-বিদেশে সরকারবিরোধী অপপ্রচার প্রতিরোধ করা, দল ও সরকারের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করা, তৃণমূলে হানাহানি ও কোন্দল নিরসন করে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, বিগত নির্বাচনে দেয়া প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রশ্নে উন্নয়ন সহযোগীদের আস্থা ও সমর্থন আদায় করা- ভোটের বছরে মোটা দাগে এগুলোই আওয়ামী লীগের প্রধান চ্যালেঞ্জ। জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, শুধু সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলেই উন্নয়ন হয় না। উন্নয়ন দর্শন প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের এই উন্নয়ন দর্শন রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জন-সাফল্য জনগণের সামনে তুলে ধরাই বড় চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয়ত, ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এবার ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হবে না। সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন হবে বলে আমার বিশ্বাস। ফলে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি বাড়াতে হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রুখে দেয়া এবং উপযুক্ত জবাব দেয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অজয় দাশগুপ্ত ভোরের কাগজকে বলেন, ক্ষমতাসীন দল হিসেবে অংশগ্রহণমূলক ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করা আওয়ামী লীগের বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন মানেই একাধিক পক্ষ থাকবে। ক্ষমতার বাইরে যারা থাকে, তাদের চেষ্টা থাকে ক্ষমতায় আসার। ইতোমধ্যেই বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ২৭ দফা দিয়েছে। যদিও রাষ্ট্র মেরামতের কিছু নেই। রাষ্ট্র উন্নত করার, বিশ্বসারিতে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা। এখানে বিএনপির কোনো কর্মসূচি নেই, আওয়ামী লীগের কর্মসূচি রয়েছে- স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচি। এর পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করা। এছাড়া সাম্প্র্রদায়িকতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দুদিন পরপর সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এটি নিয়ন্ত্রণ রাখা চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের জবাবে পাল্টা জবাব, অপপ্রচার রোধ করে সাফল্য তুলে ধরাও বড় চ্যালেঞ্জ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়