কুমিল্লাকে হারের স্বাদ দিল রংপুর

আগের সংবাদ

বাংলাদেশ-ব্রাজিল বাণিজ্য বাড়ানোয় জোর প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

চলতি মাসে ফের ঢাকায় আইএমএফ প্রতিনিধিদল : ৩৬ কোটি ডলারের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে মার্চে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৩৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তার প্রথম কিস্তি আগামী মার্চে পাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের জন্য বাজেট সহায়তা হিসেবে এই অর্থ দেবে আইএমএফ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনাসহ সংস্থাটির দেয়া বিভিন্ন শর্ত পরিপালন করতে গিয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে সরকার। এরই মধ্যে বেশির ভাগ শর্ত পূরণ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে ঋণ প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য ওয়াশিংটনের প্রধান কার্যালয়ে আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডে উপস্থাপন করা হবে। আশা করা হচ্ছে, ওই বোর্ড সভায় ঋণের চূড়ান্ত অনুমোদন হবে। এর আগে ফ্যাক্টফাইন্ডিং মিশনে আগামী ১৬ জানুয়ারি ঢাকায় আসছে সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্টোনেট মনসিও সায়েহের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। ৩ দিনের ওই সফরে প্রতিনিধিদলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে মিলিত হবেন। ঋণের অর্থে চলমান বৈশ্বিক সংকটের মুখে থাকা দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হবে বলে আশা  করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে বাজেট বাস্তবায়নে বিদেশি ঋণ গ্রহণ করছে সরকার। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছ থেকে সাধারণত এ  ধরনের সহায়তা নেয়া হয়। তবে করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, চলমান বৈশ্বিক সংকট এবং জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবার আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। গত নভেম্বর মাসে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক এই সংস্থা। ওই সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও সফরকালীন সংস্থাটির মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিল। সম্প্র্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগের প্রশাসন ও সমন্বয় অনুবিভাগের বৈঠকেও আইএমএফের ঋণ ও ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়ার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চান অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
বৈঠকে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৩৬ কোটি (৩৬০ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার পাওয়া যাবে। বিষয়টি নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। ফেব্রুয়ারি নাগাদ আইএমএফের বোর্ড মিটিংয়ে অনুমোদনের পরই ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে। অর্থ বিভাগের বিদায়ী অতিরিক্ত সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার সেই সভায় জানান, এরই মধ্যে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সম্প্র্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাওয়ার আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। বাজেট সহায়তা  ও জলবায়ু বিষয়ক এই ঋণের প্রথম কিস্তি ৩৬০ মিলিয়ন ডলার আগামী মার্চ মাসে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে ঋণবিষয়ক অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সায়েহের চলতি মাসে বাংলাদেশ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিনিই আইএমএফের পরবর্তী বোর্ড সভায় সভাপতিত্ব করবেন। যেখানে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা এবং ঋণ দেয়ার যৌক্তিকতা বোর্ড সদস্যদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
সম্প্রতি ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের আশাবাদ ব্যক্ত করে জানিয়েছেন, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে তাদের দেয়া বেশির ভাগ শর্ত পূরণ করা হয়েছে। যেগুলো বাকি আছে সেগুলো আমাদের প্রয়োজনেই আমরা সংস্কার করব। তিনি জানান, সংস্থাটির ঋণ কার্যক্রমে আমরা একমত হয়েছি। এবার তা আইএমএফের বোর্ডে আলোচনা করা হবে। আশা করি, এ ঋণ অনুমোদন হলে শিগগিরই প্রথম কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, আইএমএফের দেয়া শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা, আদায়ের অযোগ্য ঋণ বিষয়ে আলাদা কোম্পানি গঠন করা, জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ফর্মুলা কার্যকর করা, আয়কর আইন সংসদে পাস করা, কর ছাড়ের ওপর বিস্তারিত নিরীক্ষা করা, বাজেটের নির্দিষ্ট অংশ সামাজিক ব্যয়ের (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি) জন্য রাখা এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়ানো।  
বাংলাদেশ এর আগেও আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। এবার সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের যে ঋণ, সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য ওয়াশিংটনভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার ১৩তম ঋণ। এর আগে বাংলাদেশ সর্বশেষ আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে ২০১২ সালে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ৩ প্রকার ঋণের মাধ্যমে আইএমএফের ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ পাবে। এগুলো হচ্ছে- এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স এন্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)। তবে আইএমএফ এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটির অধীনে ঋণ দেয়, যেসব  দেশ দীর্ঘসময় বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে। অর্থাৎ যেসব নিম্ন আয়ের দেশ রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি করে। আর সাধারণত যেসব দেশ অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে দীর্ঘসময় ধরে আমদানি আয় আর রপ্তানি ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতায় ভুগছে, তাদের আইএমএফ এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ঋণ দেয়। এ ঋণ সাধারণত সাড়ে ৪ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া রেজিলিয়েন্স এন্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির অধীনে আইএমএফ সাধারণত ঋণ দেয় নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোকে, যারা জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা ভাইরাসের মতো দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইসিএফের অধীনে বাংলাদেশ পাবে ১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি, ইএফএফের অধীনে ২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ও আরআসএফের অধীনে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। একবারে নয়, পুরো ৭ কিস্তিতে পুরো ঋণ পাবে বাংলাদেশ। এই ৩ ঋণের মধ্যে ইসিএফের অধীনে বাংলাদেশ যে ১ বিলিয়ন ডলার পাবে, তার জন্য কোনো সুদ দেয়া লাগবে না।  আগামী ২০ বছরের মধ্যে এসব ঋণের অর্থ পরিশোধ করবে সরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়