৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে সংসদ অধিবেশন

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ অনেক, প্রত্যয়ী আ.লীগ : অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা > সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরা ও অপপ্রচারের জবাব দেয়া

পরের সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে গুলি করে বাংলাদেশি ছাত্র হত্যায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ : আরিফের হাতে কোনো ছুরি দেখেননি, দাবি স্থানীয় এক নারীর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সৈয়দ ফয়সাল আরিফের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সেদেশের প্রবাসীরা। ‘হে কেমব্রিজ- আমরা বাঁচতে চাই’, ‘স্পিক আপ, স্ট্যান্ড আপ’, ‘জাস্টিস ফর ফয়সাল’, ‘স্টপ পুলিশ ব্রুটালিটি’- এমন সব স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছে বোস্টনের কেমব্রিজ শহর। পুলিশের গুলিতে যেভাবে এই নবীন শিক্ষার্থীর ?মৃত্যু হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না প্রবাসীরা। ফয়সাল আরিফের ?মৃত্যুকে তারা বর্ণনা করছেন ‘পুলিশি হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে।
যে যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের বাইরে কিছু ঘটলেই মানবাধিকারের জিগির তুলে বিভিন্ন দেশে অন্যায় হস্তক্ষেপ করতে চায়, সেই যুক্তরাষ্ট্রেরই ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনে অন্যায়ভাবে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটল। এর প্রতিবাদে বস্টনের কেমব্রিজ সিটি হল প্রাঙ্গণে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রবাসীরা প্লেকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাতে লেখা ছিল- জাস্টিস ফর সৈয়দ ফয়সাল, স্টপ পুলিশ ব্রুটালিটি প্রভৃতি। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, মানবাধিকারের নির্লজ্জ লঙ্ঘন করছে যে পুলিশ তাদের বিচার চাই। এদিকে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নিউ ইংল্যান্ড এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে এবং কেমব্রিজের মেয়র সুমবুল সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদ জানানোর কর্মসূচি নিয়েছে।
সিবিএস বোস্টনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার দুপুরে চেস্টনাট স্ট্রিটে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। পুলিশের কাছে হটলাইন ৯১১-এ ফোন আসে যে এক তরুণ একটি অ্যাপার্টমেন্টের জানালা ভেঙে বেরিয়েছে এবং তার হাতে রয়েছে ছোরা। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা সেখানে গিয়ে একটি ভবনের পেছনে ফয়সালকে পান। পুলিশ দেখে তিনি ছুরি হাতে

পালাচ্ছিলেন। মিডলসেক্সের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মারিয়ান রায়ান বলেন, পুলিশ ধাওয়া করে চেস্টনাট স্ট্রিটে তাকে ঘিরে ফেলে। তখন ফয়সালকে ছুরি ফেলে দিতে বলেন কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু তিনি ছুরি হাতে নিয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে আসছিলেন। তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ ফয়সালকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে নিজেদের কমিউনিটির সন্তান ফয়সালের এই মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড আখ্যায়িত করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন নিউ ইংল্যান্ডের বাংলাদেশিরা। তারা বলেন, ফয়সাল শ্বেতাঙ্গ পুলিশের বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন। সমাবেশে একজন বলেন, যে যুক্তরাষ্ট্র কথায় কথায় বিভিন্ন দেশে মানবাধিকারের ছবক দেয়, সেই যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ এরকম দিনে-দুপুরে বিনা কারণে গুলি করে নিরীহ ছাত্রকে মেরে ফেলবে তা মেনে নেয়া যায় না। আমাদের করের টাকায় চলা পুলিশের কাজ জীবন বাঁচানো, জীবন হরণ নয়।
কেমব্রিজ সিটি হল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সমাবেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছাড়াও আরিফের সহপাঠীরা অংশ নেন। সমাবেশে কম্যুনিটি লিডার ইকবাল ইউসুফ বলেন, বোস্টন হচ্ছে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষের সিটি। আমরা কখনো কোনো দাঙ্গায় লিপ্ত হইনি। তবু কেন আমাদের টার্গেট করা হয়েছে? কেন আমাদের নিষ্পাপ আরিফের বুক বিদ্ধ হবে পুলিশের বুলেটে?
মা-বাবার একমাত্র ছেলে ফয়সাল আরিফ বছর সাতেক আগে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। ২০ বছর বয়সি আরিফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের বোস্টন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ছিলেন। আরিফের বাবা মো. মুজিবউল্লাহ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, ও ছিল খুবই মেধাবি। আশা করেছিলাম সে ইঞ্জিনিয়ার অথবা ডাক্তার হবে। কিন্তু এখন সব আশা শেষ হয়ে গেল।
কেমব্রিজের পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টিন ইলো সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যে কোনো মৃত্যুই বেদনাদায়ক। আমরা আরিফের মৃত্যুকেও সহজভাবে নিচ্ছি না। সরজমিনে তদন্ত চলছে। যদি অন্যায়ভাবে গুলি চালানো হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় একটি টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওই এলাকার বাসিন্দা এক নারী বলেছেন, আরিফের হাতে কোনো ছুরি তিনি দেখেননি। এ পরিস্থিতিতে পুলিশ ও ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির পক্ষ থেকে সবার কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে পুলিশ গুলি করার সময় আরিফের হাতে আদৌ কোনো ছুরি ছিল কি না।
সিটি হল প্রাঙ্গণের প্রতিবাদ সমাবেশে কম্যুনিটি লিডার ইউসুফ বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে যে পুলিশের বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির মধ্যে অন্তত ৫টি বিদ্ধ হয়েছে আরিফের বুকে। এ অবস্থায় নীরব থাকার অবকাশ নেই। আমাদের সংঘবদ্ধ আওয়াজ ওঠাতে হবে এহেন বর্বরতার বিরুদ্ধে।
বোস্টন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ইকবাল ইউসুফ বলেন, পুলিশের এ ধরনের আচরণে তিনি ‘হতবাক’। বোস্টন হচ্ছে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষের সিটি। এখানে যদি পুলিশের গুলিতে মানুষের প্রাণ ঝরে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে কেউ নিরাপদ নন ভাবতে হবে।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নিউ ইংল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট পারভিন চৌধুরী, সেক্রেটারি তানভির মুরাদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ চৌধুরী, সেলিম জাহাঙ্গীর ও আশরাফউদ্দিন তালুকদারও প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন। কেমব্রিজের মেয়র সুমবুল সিদ্দিকী বিদেশ থেকে ফিরবেন সোমবার। সেদিন বিকালে কম্যুনিটির নেতাদের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়