৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে সংসদ অধিবেশন

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ অনেক, প্রত্যয়ী আ.লীগ : অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা > সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরা ও অপপ্রচারের জবাব দেয়া

পরের সংবাদ

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী : নির্বাচনের আগে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে > উদ্ভট ধারণা প্রশ্রয় দেবেন না

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো উদ্ভট ধারণাকে প্রশ্রয় না দিতে দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল-প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এমন কোনো উদ্ভট ধারণা প্রশ্রয় দিবেন না। ইন্ধন জোগাবেন না। তিনি বলেন, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বাংলাদেশে এই প্রথম আইন করা হয়েছে। সেই আইনের আওতায় সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে, ভবিষ্যতেও করবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে এ ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতার ও রেডিও স্টেশন প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করে। প্রায় ২৫ মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান শাসনামলের সঙ্গে বিএনপির শাসনামলের তুলনার পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অভূতপূর্ব সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
নির্বাচনের আগে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন। স্বাধীনতাবিরোধী, ক্ষমতালোভী, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী আর পরগাছা গোষ্ঠীর সরব তৎপরতা শুরু হয়েছে। এরা চায় ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। পেছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে দেশে-বিদেশে ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী ও বিবৃতিজীবী তারা নিয়োগ করেছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো, সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্তির চেষ্টা তারা করছে। এদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের দল, জনগণের শান্তি ও শক্তিতে বিশ্বাসী। জনগণ বিজয়ী করলে আমরা দেশ গড়ার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখব। যদি বিজয়ী না করে, জনগণের কাতারে চলে যাব। তবে, যেখানেই থাকি, জনগণের সেবা করে যাব। কিন্তু

ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সবাই সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমাল ও জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকেও সতর্ক থাকবেন।
সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সুফল জনগণ পেতে শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। নিজস্ব গ্যাস উৎপাদনের পাশাপাশি বর্ধিত চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত এখন মধ্যবিত্ত-নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারে গ্যাসের চুলায় রান্না হয়। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সড়ক পথে ঢাকা ও অন্য জেলার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। মেট্রোরেল চালু করে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করেছি। কিছুদিনের মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ- বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হবে। রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ২০১৮ সালের মে মাসে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি।
বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আরো এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের লক্ষ্য উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নানা অনুসঙ্গ ধারণ করে তরুণদের প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষিসহ সবক্ষেত্রে রোবোটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈব প্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সবক্ষেত্রে গবেষণার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। জাতির পিতা শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আসুন স্মার্ট দেশ গড়ার মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। এদেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাই।
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশকে এখন আর কেউ বন্যা, খরা, দুর্যোগের দেশ হিসেবে দেখে না। বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল। বিভিন্ন আন্তজার্তিক ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘসহ দুই ডজনেরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংগঠনে বাংলাদেশ সক্রিয় সদস্য। গত অক্টোবরে ৫ম বারের মতো বিপুল ভোটে আমরা জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করেছি। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা চুক্তি করে ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বন্দি জীবনের অবসান করেছি। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমানার শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকার ওপর স্বার্বভৌম অধিকার অর্জন করেছি। ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সরকারের অর্জনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম। ধান উৎপাদনে ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য়, স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে ২য়। ২ কোটি ১০ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেয়া হয়েছে। ১ কোটি কৃষক ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলেছেন। ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাংকে জমা হয়। সেচের জন্য সুলভমূল্যে বিদ্যুৎ ও কৃষিযন্ত্র ক্রয়ে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি পাচ্ছেন। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। অনেকগুলো অঞ্চলে দেশি-বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগ শুরু করেছে। অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন ও ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামের জনগণকে শহরের সব নাগরিক সুবিধা পৌঁছানোর কাজ চলছে। গ্রামেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেছে। ৩৫ লাখের বেশি মানুষকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর দেয়া হয়েছে। ২ কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্র্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে।
গত বছর ১০০ সেতু ও ১০০ সড়ক উদ্ধোধন দেশের উন্নয়নের ইতিহাসে এক অনন্য অর্জন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ও রেলযোগাযোগের জন্য প্রয়োজন ছিল প্রধান প্রধান নদীগুলোর উপর সেতু নির্মাণ করা। ১৪ বছরে আমরা পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু, তিস্তা সেতু, পায়রা সেতু, ২য় কাঁচপুর সেতু, ২য় মেঘনা, ২য় গোমতী সেতুসহ শত শত সেতু, সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ করেছি। তিনি বলেন, আমরাই প্রথম ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা, ঢাকা-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করি। ঢাকা-মাওয়া-জাজিরা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের প্রথম এ ধরনের মহাসড়ক। এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক, আরিচা মহাসড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এয়ারপোর্ট থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আগামী বছর যানবাহনের জন্য খুলে দেয়া হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা পর্যন্ত ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলযোগাযোগ স্থাপনের কাজ চলছে। যমুনা নদীর উপর রেলসেতু নির্মাণকাজও এগিয়ে যাচ্ছে। ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রায় ৭১৮ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০৩ মিটার সেতু নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ, ২১ হাজার ২৬৭ মিটার কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ঢাকায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওয়ার, কমলাপুর-শাহজাহানপুর ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভার, চট্টগামে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বদ্দারহাট ফ্লাইওভারসহ বহুসংখ্যক ছোটবড় ফ্লাইওভার আমরা নির্মাণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটানা ১৪ বছর সরকারে আছি। ১৬ বছর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ অর্থবছরে আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন আমাদের অবস্থান কোথায়- তা তুলে ধরে বিশ্লেষণের ভার জনগণের কাছে দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। জেন্ডার সমতা ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।
২০০১ সালে প্রহসনের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত ক্ষমতায় এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ এই ৫ বছর ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। হত্যা-গুম, ধর্ষণ, লুটপাট, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানে। জঙ্গিবাদের লালন-পালনসহ অপশাসন-কুশাসনে জোট সরকার মাইলফলক স্থাপন করেছিল, যা এদেশের মানুষ আগে কখনো দেখেনি। ওই সময় শুধু আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়ে। মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস, সাক্ষরতা হ্রাস জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলে।
মেয়াদ শেষে বিএনপি-জামায়াত নানা কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে স্বাভাবিক ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ষড়যন্ত্র করে তারা। দলীয় রাষ্ট্রপতিকেই প্রধান উপদেষ্টার পদ দিয়ে সরকার গঠন করে নির্বাচনের নামে প্রহসনের উদ্যোগ নেয়। জনগণ তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
অরাজক পরিস্থিতির মুখে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারাও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে শুধু ব্যর্থই হয়নি, নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কালিমালিপ্ত করে। তবে, শেষ পর্যন্ত ছবিসহ একটি সুষ্ঠু ভোটার তালিকা তৈরি ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সংস্কার সম্পন্ন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ২০০৯ সাল থেকে একটানা ১৪ বছর আমরা দেশ পরিচালনা করছি। এই সময়ে দেশ ও জনগণকে কী দিতে পেরেছি- তার বিচার-বিশ্লেষণ আপনারা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় বিশ্বব্যাপী মন্দাবস্থা চলছিল। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ছিল আকাশচুম্বী। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছিল নি¤œমুখী। বিদ্যুতের অভাবে দিনের পর দিন লোডশেডিং চলত। গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানার মালিকরা হাহাকার করত, চুলা জ¦লতো না মানুষের বাড়িতে। সারসহ কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্য ও জ¦ালানি তেলের অভাবে কৃষকের নাভিশ্বাস উঠেছিল। ঠিক সময় আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিই। নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করি। তা জনগণের সামনে তুলে ধরি। ইশতেহারের আলোকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিই। স্থবির অর্থনীতি সচল করতে কৃষি, জ¦ালানি, বিদ্যুৎসহ কয়েকটি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কয়েকটি ছোট বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করি। খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়াতে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই রাসায়নিক সারের দাম কমিয়ে দেই। এরপর আরো দু-দফায় সারের দাম কমিয়ে কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় আনা হয়। এমনিভাবে প্রতিটি খাতে পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিতের উদ্যোগ নিই। রূপকল্প ২০২১, ২০৪১ ও বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করি। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম। আজকে সন্তুষ্টচিত্তে বলতে পারি, আমরা সে প্রতিশ্রæতি পূরণে সক্ষম হয়েছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়