সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল : শান্তিপূর্ণ গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৫ শতাংশ

আগের সংবাদ

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী : নির্বাচনের আগে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে > উদ্ভট ধারণা প্রশ্রয় দেবেন না

পরের সংবাদ

৮ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : দেশের উত্তারাঞ্চলে শীতের দাপট অব্যাহত রয়েছে। রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ এলাকায় দিনের বেলাতেও চলছে কুয়াশার দাপট; ভরদুপুরেও মিলছে না রোদের দেখা। দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিম বাতাসে নাকাল হতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষকে। শীতের তীব্রতায় সন্ধ্যার পর জনশূন্য হয়ে পড়ছে শহর-বাজার। হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্তদের ভিড়। পঞ্চগড় থেকে

আবু সালেহ মো. রায়হান জানান, পঞ্চগড়ে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। বৃহস্পতিবার সকালে বাতাসের পরিমাণ কম থাকলেও ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় পথঘাট। ডায়রিয়া, জ্বর সর্দি, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন  বয়স্ক ও শিশুরা। প্রতিনিয়তই জেলার হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছেন রোগীরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়ায় ১০ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে শীতার্তদের জন্য ২৬ হাজার শীতবন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
নীলফামারী থেকে কামরুল আহসান কল্লোল জানান, রাতে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে জেলার মানুষ। এতে কাজ করতে না পারায় নি¤œ আয়ের পরিবারগুলো রয়েছে চরম দুর্ভোগে। দিনে সূর্যের আলো থাকলেও ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘœ ঘটছে।
গতকাল সৈয়দপুর আবহাওয়া কার্যালয় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলায় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮ কিলোমিটার। ওই কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, চলমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আরো দুই-একদিন থাকতে পারে। এ মাসের মাঝামাঝি বা শেষাংশে আরেকটি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩১ হাজার কম্বল। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, এসব কম্বল ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিতরণের জন্য বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। বিতরণ কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে।
পাবনা থেকে রফিকুল ইসলাম সুইট জানান, পাবনায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। স্থবিরতা দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্মে। দুপুরে ঘণ্টাখানেক রোদেও দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা কমেনি। শীতের তীব্রতায় সন্ধ্যার পর জনশূন্য হয়ে পড়ছে শহর-বাজার।
গতকাল পাবনা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক নাজমুল হক জানান, কয়েকদিন থেকে এ জেলার তাপমাত্রা নি¤œমুখী। বৃহস্পতিবার সকালে জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিভিল সার্জন ডা. মনিসর জানান, শীতে কিছুটা সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন জানান, শীত নিবারণে ইতোমধ্যেই ৪১ হাজার কম্বর বিতরণ করা হয়েছে।
রাজশাহী থেকে সাইদুর রহমান জানান, ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়েছে রাজশাহী। গত দুদিন থেকে মাত্রা বেড়েছে শীতের। গতকাল দুপুর ১২টায় রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়ায় স্বস্তি ফিরে পান নগরবাসী। কুয়াশার প্রভাবে সড়কে ধীরগতিতে চলাচল করে যানবাহন। হাড় কাঁপানো শীতে তাই অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গতকাল রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ ছিল ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশায় সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হয়। মহাসড়কের দূরপাল্লার যানবাহন চল ধীরগতিতে। সকালে দৃষ্টিসীমা ১০০ মিটারের নিচে নেমে আসায় সকালে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতেও দেখা গেছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, মূলত কুয়াশা কেটে গেলেই রাজশাহীতে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হবে। তখন রাজশাহীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা আবারো এক অঙ্কে নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।
যশোর থেকে আলমগীর কবীর জানান, টানা দুদিন পর সুর্যের মুখ দেখা না গেলেও বৃহস্পতিবার দুপুরের পর যশোরে দেখা মেলে সূর্যে। তবে এ অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। উত্তরে হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীতে কাঁপছে জনজীবন। গতকাল যশোরে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে এ অঞ্চলের ছিন্নমূল ও নি¤œ আয়ের মানুষ।
যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল যশোরে সর্বনি¤œ ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। শৈত্যপ্রবাহের কারণে হঠাৎ হাড় কাঁপানো এ তীব্র শীতে দুর্ভোগে পড়েছেন নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঠাণ্ডা-কাশিসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
দিনাজপুর থেকে মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, জেঁকে বসা শীতে কাঁপছে দিনাজপুর। বেলা বাড়ার পর তাপমাত্রা নেমেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। গতকাল জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া সহকারী আসাদুজ্জামান বলেন, চলতি জানুয়ারি মাসে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তেমন নেই। তবে শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।
কুষ্টিয়া থেকে নূরে আলম দুলাল জানান, কুষ্টিয়ায় হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু মানুষ। গত এক সপ্তাহ ধরে কুষ্টিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করে। শীতের দাপটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতজনিত রোগও বাড়ছে এই সময়ে। শীতজনিত বিভিন্ন রোগ নিয়ে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে শিশু-বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষ ভর্তি হয়েছেন। কুষ্টিয়া কুমারখালী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা অনুভূত হয়েছে। মাত্রা আরো কমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা থেকে মাহফুজ মামুন জানান, পৌষের শেষ দিকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে বয়ে যাচ্ছে। হিমেল বাতাস আর আকাশ কুয়াচ্ছন্ন থাকায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। ঠাণ্ডাজনিত কারণে দামুড়হুদায় দুদিনে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে।
সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভিড় বেড়েছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়