সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল : শান্তিপূর্ণ গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৫ শতাংশ

আগের সংবাদ

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী : নির্বাচনের আগে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে > উদ্ভট ধারণা প্রশ্রয় দেবেন না

পরের সংবাদ

রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংসদে আবদুল হামিদের শেষ ভাষণ : সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ কাজ করার আহ্বান

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নতুন প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে বছরের প্রথম অধিবেশনে ভাষণে এই আহ্বান জানান তিনি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে এটিই সংসদে তার শেষ ভাষণ। দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পর আগামী এপ্রিলে তার বিদায় নেয়ার কথা। স্পিকার হিসেবে দীর্ঘদিন সংসদে ছিলেন মো. আবদুল হামিদ। গতকাল রাষ্ট্রপতি হিসেবে ভাষণ দেয়ার পর সংসদ লাউঞ্জে সাংবাদিকদের দেখা দেন তিনি।
চলমান একাদশ সংসদের একবিংশতম অধিবেশন শুরু হয় গতকাল। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকালে সংসদের বৈঠক বসে। অধিবেশনের শুরুতেই সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি। দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে ভাষণ শুরু করেন আবদুল হামিদ। বিরাজমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন তিনি।
এ সময় আবদুল হামিদ বলেন, জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ আমরা অতিবাহিত করছি। ২০২২ সাল আমাদের জন্য ছিল চ্যালেঞ্জের একটি বছর। সমগ্র বিশ্বই পার করছে এক কঠিন সময়। করোনা অতিমারি আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করে অর্থনীতির গতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হলেও রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে শ্লথ করেছে। তারপরও ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ১৪ শতাংশ বেড়ে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায় উন্নীত হওয়ার কথা বলেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের পটভূমি তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, স্বাধীন সার্বভৌম এ দেশে জনগণই সব ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সব প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণভাবে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাঙালি জাতিকে আরো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনারা জনপ্রতিনিধি, তাই জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। দেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মমর্যাদাশীল বঙ্গবন্ধুর সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার পথে। সরকারের যুগোপযোগী ও নারীবান্ধব কর্মসূচির ফলে নারীরা দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছেন বলেও ভাষণে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকর বাস্তবায়নের ফলে অর্থনীতিতে গতিশীলতা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যও ভাষণে তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রয়েছে এবং বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ১৪ লাখ মেট্রিক টন, যা সন্তোষজনক। এছাড়া এবার দেশব্যাপী আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ এর আওতায় ৬৪টি জেলায় প্রায় ৫ হাজার দুই শত তেষট্টি কিলোমিটার নদী, খাল এবং জলাশয় পুনর্খননের কাজ চলমান রয়েছে। ফলে ১০৯টি ছোট নদী, ৫৩৩টি খাল ও ২৬টি জলাশয় পুনরুজ্জীবিত হবে। এছাড়া, প্রধান প্রধান নদীসমূহে ড্রেজিং ও নদী ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। 
পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গ তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে স্বাক্ষরিত ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’র ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি ধারা ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হওয়ায় অনগ্রসর পার্বত্য অঞ্চল জাতীয় উন্নয়নে সংযুক্ত হয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে সকলের মধ্যে সৌহার্দ্য বিরাজ করছে এবং দেশে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি অটুট রয়েছে।
আবদুল হামিদ বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বে পরিচিতির লক্ষ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তথ্যপ্রবাহ ও সৃজনশীলতার ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সরকার আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন করছে। সরকার কর্তৃক সংবাদকর্মীদের কল্যাণার্থে সাংবাদিক ও সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ থেকে স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ। এরপর রাষ্ট্রপ্রধানের পদে পুনর্র্নির্বাচিত হন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়