উকিল আবদুস সাত্তারকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি

আগের সংবাদ

মন্দা মোকাবিলায় দুই চ্যালেঞ্জ : ডলারের দাম যৌক্তিক জায়গায় রাখা > মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা

পরের সংবাদ

র‌্যাবের তৎপরতা : হিজরতকারী সেই ৯ জন ফিরে গেল পরিবারে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মায়ের স্মার্টফোন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলেন তাজকিয়া তাবাসসুম নামে এক শিক্ষার্থী। ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের ইসলামি পোস্টে লাইক-কমেন্টস করতেন। ইসলামের বিভিন্ন খণ্ডিত আলোচনা তুলে ধরে জিহাদে আহ্বান জানানো একটি গ্রুপ থেকে তার পরিচয় হয় আরেক তরুণীর সঙ্গে। মূলত ওই তরুণীর মাধ্যমেই কথিত হিজরতে ঘর ছাড়তে উদ্বুদ্ধ হন তাজকিয়া। একপর্যায়ে ধর্মের অপব্যাখ্যায় মুগ্ধ হয়ে নির্জনে ইবাদত করতে বান্দরবানের উদ্দেশে হিজরতও করেন। পরে র‌্যাবের মাধ্যমে নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। শুধু তাজকিয়াই নয়, ধর্মের অপব্যাখ্যায় হিজরতে যাওয়া মোট ৯ তরুণ-তরুণীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে র‌্যাব।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দপ্তরে বাহিনীটির মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন ‘নব দিগন্তের পথে’ নামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওই তরুণ-তরুণীদের নিজ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেন। অন্যরা হলেন- আবু বকর সিদ্দিক, ফয়সাল হোসেন, মো. ফারুক হোসেন, মো. আলিফ খান, মুফলিয়া আক্তার, জান্নাতুল ফেরদৌস, রুনা আক্তার ও কানিজ ফাতিমা ইফতি। এ সময় ৯ জনকে পৃথকভাবে ১০ হাজার টাকা, বই ও ফুলের তোড়া উপহার দেয়া হয়। র‌্যাব বলছে, এখন পর্যন্ত তারা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ২ হাজার ৯০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আর আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।
পরিবারের কাছে ফেরা তাজকিয়া বলেন, ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে ইসলামের খণ্ডিত বিভিন্ন আলোচনা পোস্ট করা হতো। সেখানে লাইক-কমেন্ট করতাম। এক পর্যায়ে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত হই। গ্রুপে ইসলামের বিভিন্ন আলোচনা করা হতো। সেখান থেকেই হিজরত সম্পর্কে জানতে পারি। গত ২২ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে বের হওয়ার তিন দিন আগে জায়গা নির্ধারণ করা হয়।
তিনি নির্ধারিত দিনে আমরা ৫ জন মেয়ে মহাখালীতে একত্রিত হই। সেখান থেকে আমরা বাসে করে চট্টগ্রামে যাই। চট্টগ্রামে যাওয়ার পরে আমাদের সঙ্গে আরো ৪ জন ছেলে যুক্ত হন। সবাই মিলে বান্দরবান যাই, তবে সেখানে ভালো স্থান না পেয়ে আমরা আবার চট্টগ্রামে ফিরে আসি। সেখান থেকে ঢাকায় আসার জন্য বাসের টিকেট কেটেছিলাম। কিন্তু এই সময়ে আমাদের সঙ্গে থাকা এক তরুণী অসুস্থ হয়ে যায়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপর হাসপাতাল থেকে যখন ছাড়া পাই, তখন বাস ছেড়ে দেয়। আমরা এসে বাস পাইনি। পরে চট্টগ্রামের এক হোটেলে উঠি। সেখান থেকেই র‌্যাব আমাদের উদ্ধার করে। পরে তারা আমাদের বাড়ি ছাড়ার পেছনে ধর্মের অপব্যাখ্যা ও ভুল ধারণা সম্পর্কে বোঝালে আমরা সঠিক পথে আসতে উদ্বুদ্ধ হই।
হিজরত থেকে ফেরা তরুণ-তরুণীদের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশসেবায় অংশ নেয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে র‌্যাব ডিজি বলেন, জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি ডিরেডিক্যালাইজেশনের মতো নতুন পন্থা অনুসরণ করে পথভ্রষ্টদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে এনে তাদের বিভিন্ন পুনর্বাসনের মাধ্যমে সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
র‌্যাবের এডিজি (অপারেশন্স) কামরুল হাসান বলেন, গত ২২ ডিসেম্বর ওই ৯ তরুণ-তরুণী কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়েছিল। তাদের অনেকের পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। অনেকে র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে আমরা চট্টগ্রাম থেকে ৯ জনকে আমাদের হেফাজতে নেয়। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদের আমরা কাউন্সিলিং করেছি। পরে সবাই ভুল বুঝতে পেরে পরিবারের কাছে ফেরত যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন।
অভিযান আমাদের সামগ্রিক কার্যক্রমের একটি ক্ষুদ্র অংশ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, যাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছি তাদের উদ্দেশে বলব- ব্যক্তিগতভাবে আমরা একজন ব্যক্তি হতে পারি, কিন্তু পরিবারের কাছে আমরা কিন্তু গোটা পৃথিবী। পিতার কাছে একজন সন্তান, স্বামীর কাছে স্ত্রী বা স্ত্রীর কাছে স্বামী অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমরা যদি পরিবারের কাছে থাকতাম তাহলে কখনো ভুল ধারণা থেকে বিপথগামী হতাম না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়