প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
কাগজ ডেস্ক : দীর্ঘসময় ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ৮২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ফুটবল স¤্রাট পেলে। অসুস্থ থাকার সময় নিজের শেষযাত্রর কথা বলে গিয়েছিলেন তিনি। ফলে তার ইচ্ছা অনুযায়ী আজ তাকে সমাধিস্থ করা হবে মেমোরিয়াল নেক্রোপোল একুমেনিকাতে।
পেলের ইচ্ছানুযায়ী তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সাও পাওলো রাজ্যের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। এর আগে আইন রীতি অনুযায়ী, সমাহিতের জন্য মরদেহ প্রস্তুত করা হয় আলবার্ট আইনস্টাইন স্টেডিয়াম। সেখান থেকে গতকাল তার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় সান্তোস প্রাঙ্গণে। স্টেডিয়ামের মাঝমাঠে তাকে শ্রদ্ধা জানান সাধারণ মানুষ। শ্রদ্ধা জানানো শেষে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত সেখানে তার দেহ রাখা হবে। এরপর পেলের মরদেহ নিয়ে ‘শেষযাত্রা’ হবে সান্তোসের রাস্তায়। কফিন বহন করে নিয়ে যাওয়া হবে কেলেস্তের সড়ক দিয়ে, যেখানে পেলের মা থাকেন। শেষযাত্রা শেষে পেলেকে মেমোরিয়াল নেকরোপোল একিউমেনিকাতে আনা হবে। যেখানে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ৯ম তলায় সমাহিত করা হবে তাকে। সংবাদমাধ্যম মিরর জানিয়েছে, পেলের শেষ ইচ্ছা ছিল তার প্রিয় শহর সান্তোসের মেমোরিয়াল নেকরোপোল একিউমেনিকা সমাধিস্থলের নবম তলা তার শেষ বিশ্রামের জন্য বেছে নেয়া। সমাধিস্থলটি মূলত ১৪ তলা ভবন। সেখানে আছে ১৪ হাজার ভল্ট, একটি কৃত্রিম জলপ্রপাত ও একটি কার জাদুঘর। সমাহিত করার অনুষ্ঠানে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার থাকবে না।
নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন পেলে। সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল থেকে পেলের মরদেহ সান্তোসের মাঠে নেয়া হয়। গাড়িতে মরদেহ তোলার সময় ফুটবলের রাজার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে আতশবাজি ফোটানো হয়। স্টেডিয়ামের দিকে যাওয়ার সময় কফিন বহনকারী গাড়িতে কড়া পুলিশি প্রহরা ছিল। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্য অনুযায়ী, মেমোরিয়াল নেকরোপোল একিউমেনিকা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু উল্লম্ব সমাধিস্থল। ভবনের নিচতলার নিচে আরো আছে পাথরের তৈরি ভল্টের মতো একাধিক স্থান। যেখানে রয়েছে শেষকৃত্যানুষ্ঠান করার জন্য একটি কক্ষ। একটি শবদাহের স্থান ও একটি সমাধিস্তম্ভ। মূলত যেসব ব্যক্তির পরিবার তাদের স্বজনের মৃতদেহ আরো ব্যক্তিগত ও বিশেষভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে চান তাদের জন্যই এই সমাধিস্থল তৈরি করা হয়েছে। বিশাল এলাকা নিয়ে তৈরি ১৪ তলা ভবনের এই সমাধিস্থলে একটি বাগানও আছে।
১৯৮৩ সালে স্থপতি পেপে আলস্টাট এই সমাধিস্থল নির্মাণ করেন। তবে নির্মিত হওয়ার পর এটির পরিসর আরো বেড়েছে। এখানেই থেমে নেই, এখন সমাধিস্থলটি একটি পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। সমুদ্রতীর ও পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় অনেক পর্যটকই দৃষ্টিনন্দন এই সমাধিস্থল দেখতে যান। সমাধিস্থলটির ওপর তলা থেকে ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামও দেখা যায়। এখানেই ক্যারিয়ার শুরু করা পেলে যে পরে ‘ফুটবল রাজা’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন।
ফুটবল মহাতারকা পেলের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের মিনাস জেরাইসের ট্রেস কোরাকোয়েসে শহরের এক বস্তিতে। ১৫ বছর বয়সেই সান্তোস ক্লাবের ‘বি’ দলে সুযোগ পেয়ে যান পেলে। একবছর যেতে না যেতেই যোগ দেন সান্তোসের মূল দলে। এরপর ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাইয়ের পেলের আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয়। তখন তার বয়স ছিলো ১৬ বছর ৯ মাস। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচে গোল করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার রেকর্ড গড়েছিলেন পেলে।
পেলেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সান্তোসে যান ফিফা প্রেসিডেন্ট। সঙ্গে যান ব্রাজিলের তারকা খেলোয়াড় নেইমার। পেলের মৃত্যুতে শোকবার্তা জানিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের ফুটবল তারকারা। মহা রাজার মৃত্যুর খবরে হৃদয়ছোঁয়া বার্তায় তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার জুনিয়র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেইমার লিখেছেন, ১০ শুধু একটি সংখ্যা ছিল। যা আমি আমার জীবনে কোথাও না কোথাও পড়েছি। আমি বলব, পেলের আগে ফুটবল ছিল শুধু একটি খেলা। পেলে সবকিছু বদলে দিয়েছেন। তিনি ফুটবলকে শিল্পে, বিনোদনে রূপান্তরিত করেছেন। তিনি ফুটবল ও ব্রাজিলের মর্যাদা উন্নীত করেছেন, রাজাকে ধন্যবাদ! তিনি চলে গেছেন, তার জাদু রয়ে গেছে। পেলে চিরদিনের জন্য। মেসি লিখেছেন, শান্তিতে ঘুমান পেলে। বিশ্বকাপ জয়ের পর এ মেসিকেই ভালোবাসার বার্তা পাঠিয়েছিলেন পেলে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো লিখেছেন, ব্রাজিলের জন্য আমার গভীর সমবেদনা। বিশেষ করে এডসন অ্যারান্টেস ডো নাসিমেন্তো পরিবারের প্রতি। তিনি কখনো বিস্মৃত হবেন না। আমাদের মতো ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতিতে তিনি সবসময় থাকবেন। শান্তিতে ঘুমান রাজা। এমবাপ্পে লিখেছেন, ফুটবলের রাজা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তবে তার কীর্তি আমাদের ছেড়ে যাবে না। নিজের রেকর্ড ভাঙতে দেখে এমবাপ্পেকে ভালোবাসার বার্তা পাঠিয়েছিলেন পেলে। পেলে তার ২১ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে ১৩৬৩ ম্যাচ খেলে রেকর্ড ১২৮১ গোল করেন পেলে। এর মধ্যে ব্রাজিলের হয়ে ৯২ ম্যাচে ৭৭টি আন্তর্জাতিক গোলও রয়েছে তার।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।