প্রিন্সের অভিযোগ : বেছে বেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে

আগের সংবাদ

অর্থনীতির সাত চ্যালেঞ্জ : বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ > ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন > খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ > মূল্যস্ফীতি > বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ > কর্মসংস্থান > দেশীয় শিল্পে সংকট

পরের সংবাদ

আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব : সামনে নির্বাচনসহ ৪ চ্যালেঞ্জ > অগ্রাধিকার পেয়েছেন নির্বাচন পরিচালনায় অভিজ্ঞরা > জাতীয় নির্বাচনের পর বিশেষ সম্মেলন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উত্তাপ বইতে শুরু করেছে। নতুন বছরে এই উত্তাপ আরো বাড়বে। ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসেবে ২০২২ সালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে। বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অতৎপরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, সুশীল সমাজের একটি অংশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী কিছু মহলের নানা চ্যালেঞ্জ। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো গত শনিবার। সম্মেলনে টানা দশমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর টানা তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। সেই সঙ্গে সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ও উপদেষ্টা পরিষদে বড় ধরনের পরিবর্তন না এনে পুরনোদেরই প্রতি আস্থা রেখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি চান করোনা মহামারিসহ নানা সংকটে বিগত তিন বছর যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের নিয়েই আগামী জাতীয় নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে। সেই অনুযায়ী বর্তমান কমিটি করেছেন তিনি। যা সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলরদের থেকে অনুমোদনও করে নিয়েছেন।
অন্যান্য বছর সম্মেলনে কমিটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হলেও, এবার যে খুব একটা পরিবর্তন আসছে না- তা আগে থেকেই বলে আসছিলেন নীতি-নির্ধারকরা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এবার কাউন্সিলের বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। তবে জাতীয় নির্বাচনের পর দলের একটি বিশেষ সম্মেলন হবে। সেই সম্মেলনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কমিটি ঘোষণায় দেখা গেছে তার

প্রতিফলন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরনোদের কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। যারা বিগত কয়েক মেয়াদে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাদের মধ্যে টানা পাঁচবার সভাপতিমণ্ডলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলী ও উপদেষ্টা পরিষদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন- এমন অনেকেই আছেন। তারা সাংগঠনিকভাবে দলকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। এবারো তাদেরই একই পদে রাখা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনাতেও তাদের অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই বর্তমান বৈশ্বিক সংকটসহ আগামী নির্বাচনের আগে নানা চ্যালেঞ্জ যেমন বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির অপতৎপরতাসহ দেশি ও আন্তর্জাতিক নানা মহলের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা তাদের দিয়েই করা হবে। সেইসঙ্গে তৃণমূল থেকে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কাজেও তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। হঠাৎ নতুন কাউকে দায়িত্ব দিলে তাদের জন্য কিছুটা কঠিন হতে পারে। সেই বিচেবনায় পুরনোদের প্রতিই আস্থা রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে পুরনোদের বড় একটি অংশ বর্তমান কমিটিতে বহাল থাকলেও সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তা, নানা অনিয়মের অভিযোগ ও শারিরীক অসুস্থতাজনিত কারণে কয়েকজনকে মূল কমিটিতে রাখা হয়নি। তাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর তিন সদস্য সাবেক পানি সম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুল মান্নান খান। তাদের রাখা হয়েছে দলের উপদেষ্টা পরিষদে। কমিটি গঠনে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, আর্থিক ও নারীঘটিত নানা কেলেঙ্কারীর অভিযোগে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে সাখাওয়াত হোসেন শফিককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে দলের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। দলের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক হারুন অর রশীদ এবং শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে হাবিবুর রহমান সিরাজকে উপদেষ্টা পরিষদে নেয়া হয়েছে। আর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য থেকে বাদ দেয়া হয়েছে সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ফরিদপুরের আলোচিত-সমালোচিত মোশাররফকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বাদ দেয়া নিয়েও নানা আলোচনা হচ্ছে।
এদিকে বর্তমান কমিটিতে পুরনো নেতৃত্বকে রাজনৈতিক সংকট, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে নিজ সংগঠনকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে নির্বাচনমুখী করার পাশাপাশি নির্বাচনে দলকে ক্ষমতায় আনা চ্যালেঞ্জ আছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচনের বছরে ঢুকে যাচ্ছে। আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরকম সময়ে কোনো রাজনৈতিক দলেই বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে না- এটাই স্বাভাবিক। তবে সম্মেলন যদি নির্বাচনী বছরের আরো দুই বছর আগে হতো, তাহলে পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা হয়তো আসতো। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও নির্বাচনে আগে বিশেষ কোনো কারণ না থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো বড় পরিবর্তনে যায় না। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
নতুন নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে ড. মজুমদার বলেন, তরুণ নেতৃত্ব আসলেও যে চ্যালেঞ্জ, নতুন নেতৃত্বের সামনেও সেই একই চ্যালেঞ্জ। সেগুলোর মধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলের তৎপরতা, সুশীল সমাজের একটি অংশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি প্রভাবশালী অংশ যে চ্যালেঞ্জগুলি ছুড়ে দিয়েছে, সেগুলো মোকাবিলা করা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়