কাগজ প্রতিবেদক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা রাষ্ট্রদূতদের আবারো সতর্ক করে বলেছেন, প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, বিদেশি দূতরা কোড অব কনডাক্ট (আচরণ বিধি) না মানলে শক্তিশালী দেশগুলো চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু শক্তি না থাকায় বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটতে পারছে না। সময় হলে বাংলাদেশও অ্যাকশনে যাবে। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিদেশি দূতদের সতর্ক করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
গতকাল শনিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ গত নির্বাচনে রাশিয়ার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছে তাদের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য। ২০ থেকে ২১ জন কূটনীতিককে তারা বের করে দিয়েছে। তারা শক্তিশালী, সেজন্য এটি করতে পেরেছে। আমাদের সেই শক্তি নাই। সেজন্য এ পথে যাই না। সময় হলে আমরাও অ্যাকশনে যাব। তিনি বলেন, কিছু লোক বিদেশিদের কাছে গিয়ে চান, তারা একটা চাপ দিক। এটা খুবই দুঃখজনক। তারা হস্তক্ষেপ করলে কোথাও ভালো ফল আসে না। বিদেশিরা কখনোই মঙ্গলের কাজে আসে না।
উদাহরণ হিসেবে আফগানিস্তানসহ কয়েকটি দেশের কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, বিদেশিরা যখন স্বদেশের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তখন সেই দেশের মঙ্গল হয় না। আফগানিস্তান কী কষ্টে আছে এই বিদেশিদের জ্বালায়। চিলিতে পিনোশে (চিলির স্বৈরশাসক) কী একটা পপুলার গভর্নমেন্ট ছিল, বিদেশিদের জ্বালায় সে ধ্বংস হয়ে গেল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশিদের উপদেশ আমাদের প্রয়োজন নেই। তারা আমাদের বলতে পারেন, আমরা শুনতে পারি। একটা সিস্টেম আছে, শিষ্টাচার আছে। তারা যদি কিছু বলতে চান, তারা সরকারকে জানাতে পারেন।
এর আগে গত ২২ নভেম্বর সকালে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে জেলা সাহিত্য মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, অন্য কোনো দেশের মানুষ নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে জানতে চান না। এখন কিন্তু আমরা কলোনিয়াল দেশ না, আমরা কলোনি না। সুতরাং তাদের (রাষ্ট্রদূতদের) সেটি মনে রাখতে হবে। তারা তাদের রীতি অনুযায়ী, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত যে রীতি, সেটা মেনে চলবেন।
গত ২১ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রদূতরা শিষ্টাচার সম্পর্কে অবগত এবং এ কারণে এটি গ্রহণযোগ্য নয়। এখন আমরা পরাধীন দেশ বা কলোনি নই এবং এটি তাদের মনে রাখা উচিত। তারা রীতি অনুযায়ী ব্যবহার করবে- এটাই কাম্য।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ফরেন অফিস স্পাউসেস এসোসিয়েশনের (ফোসা) উদ্যোগে দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক চ্যারিটি বাজার’ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চ্যারিটি বাজার থেকে আয় করা অর্থ মানুষের কল্যাণে ব্যয় হবে। সেজন্য আমরা গর্বিত।
এ সময় পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, তার সহধর্মিণী ও ফোসা সভাপতি ফাহমিদা জেবিন সোমা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খোরশেদ আলম, সচিব (পশ্চিম) সাব্বির আহমেদ চৌধুরী, সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস, ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা, আমন্ত্রিত অতিথি, ফোসার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ফোসা পরিবারের সদস্যরা এবং দর্শনার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এ আয়োজনে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বুটিক পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রি করা হয়। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর মাধ্যমে সংগৃহীত অন্যান্য দেশের পণ্যসামগ্রীও চ্যারিটি বাজারে স্থান পায়। ঢাকার বিদেশি দূতাবাসগুলোর মধ্যে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান, রাশিয়া, তুরস্ক, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের দূতাবাসও এই চ্যারিটি বাজারে অংশগ্রহণ করে। ফোসার সামাজিক ও কল্যাণমূলক উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। চ্যারিটি বাজার থেকে অর্জিত আয় আর্তমানবতার সেবায় ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।