নাইক্ষ্যংছড়ি : ডিজিএফআই কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় মামলা

আগের সংবাদ

তিন কারণে ভালো ফলাফল : সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, প্রশ্নপত্রে সুবিধা ও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের প্রভাবে পাসের হার বেড়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায়

পরের সংবাদ

১০ দফা দাবিতে নৌশ্রমিক ধর্মঘট : সারাদেশে পণ্য পরিবহন বন্ধ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র প্রদান, বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ ১০ দফা দাবিতে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছে পণ্য পরিবহনকারী নৌযান শ্রমিকরা। নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে ডাকা এই ধর্মঘটের কারণে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন রুটে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শনিবার রাত ১২টার পর থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এ কর্মবিরতি শুরু করে তারা।
চট্টগ্রাম বন্দর এবং বহির্নোঙর থেকে সারাদেশের নৌরুটে অন্তত এক হাজার লাইটারেজ জাহাজ পণ্য আনা-নেয়া করে। এসব জাহাজে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। আমদানি করা ভোগ্যপণ্য, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন খোলা পণ্য নিয়ে বহির্নোঙ্গরে আসা মাদার ভ্যাসেল (বড় জাহাজে) থেকে পণ্য খালাস হয় লাইটারেজ জাহাজে। এরপর নৌরুটে বিভিন্ন গন্তব্যে সেসব পণ্য নিয়ে যায় লাইটারেজ জাহাজগুলো। কর্মবিরতির ঘোষণায় কর্ণফুলী নদীর ১৭টি ঘাট এবং বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য ওঠানামা বন্ধ রাখেন নৌযান শ্রমিকরা। বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত ৫২টি মাদার ভ্যাসেলের মধ্যে ৩২টি থেকে পণ্য খালাস হওয়ার শিডিউল ছিল। কিন্তু রাত ১২টা থেকে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেয়ায় জাহাজগুলো অলস বসে আছে। কর্ণফুলী নদীতেও অলস বসে আছে শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ ও অয়েল ট্যাংকার। তবে শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
রবিবার বিকালে বাংলাদেশ লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাদাৎ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, ১০ দফা দাবির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মজুরি বৃদ্ধির দাবি। প্রতি পাঁচ বছর পরপর শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো পুনর্গঠনের কথা থাকলেও এখনো তা করা হয়নি। এ নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। শেষ পর্যন্ত গত সেপ্টেম্বরে মজুরি কাঠামো পুনর্গঠনের কথা ছিল। কিন্তু তাও হয়নি। গত দুই মাস ধরে বেশ কয়েকবার দাবি জানানো হয়। শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া হয়।
ভারতের বন্দরে ল্যান্ডিং পাসের বিষয়ে লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শেখ মোহাম্মদ ঈছা মিয়া বলেন, বাংলাদেশে ভারতীয় কোনো জাহাজ এলে নাবিক-শ্রমিকরা জাহাজ থেকে নেমে ইচ্ছেমতো ঘুরতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের জাহাজ ভারতের বন্দরে গেলে শ্রমিকদের জাহাজ থেকে নামতে দেয়া হয় না। শ্রমিকরা জাহাজের মধ্যে কারাবন্দির মতো করে দিন কাটায়। এজন্য আমরা ল্যান্ডিং পাস দাবি করছি যাতে

শ্রমিকরা জাহাজ থেকে ওঠানামা করতে পারেন। মজুরি ও মৃত্যুকালীন ভাতা পুনর্নির্ধারণ এবং ল্যান্ডিং পাস নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসে কোনো সিদ্ধান্ত না জানানো পর্যন্ত শ্রমিকরা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখবে।
শ্রমিকদের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদানসহ শ্রমিকদের সর্বনি¤œ মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, খাদ্য ভাতা ও সমুদ্র ভাতার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন, দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা। বালুবাহী বাল্কহেড ও ড্রেজারের রাত্রিকালীন চলাচলের উপরে ঢালাও নিষেধাজ্ঞা শিথিল। নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ। ভারতগামী শ্রমিকদের লান্ডিং পাস প্রদানসহ ভারতীয় সীমানায় সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করে সব লাইটারেজ জাহাজকে সিরিয়াল অনুযায়ী চলাচলে বাধ্য করা, চরপাড়া ঘাটে ইজারা বাতিল ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সব ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা।
এর আগে, লাইটার জাহাজের শ্রমিকদের ওঠানামায় ব্যবহৃত চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল, সাঙ্গু নদের মুখ খনন করে লাইটার জাহাজের নিরাপদ পোতাশ্রয় করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ১০ নভেম্বর ভোর ৬টা থেকে চট্টগ্রামে লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহনের কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল লাইটার জাহাজ শ্রমিকরা। পরে পতেঙ্গায় লাইটার জাহাজের শ্রমিকদের ওঠানামায় ব্যবহৃত চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু ও শ্রমিকদের কাছ থেকে ঘাটে টাকা না নেয়ার সিদ্ধান্ত আসায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে লাইটার জাহাজ শ্রমিকরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়