ইকুয়েডর রুখে দিল ডাচদের

আগের সংবাদ

১০ দফা দাবিতে নৌশ্রমিক ধর্মঘট : সারাদেশে পণ্য পরিবহন বন্ধ

পরের সংবাদ

কাদের সঙ্গে ডায়লগ করব? মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না সেটি সেই রাজনৈতিক দলের ইচ্ছা- এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র। নির্বাচন কমিশন রয়েছে। যাদের ইচ্ছা নির্বাচন করবে। আর যদি নির্বাচন করার মতো শক্তি কারো না থাকে, তারা হয়তো করবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন করবে। তারা ভোট দেবে। আর ভোট চুরি করলে তারা মেনে নেয় না। গতকাল শনিবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহিলা আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই ভোটচোররা ভোট চুরিই করতে জানে। ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামিয়েছিল। বলেছিল, তিন তিনবার ক্ষমতায় আসছে। দেড় মাসও থাকতে পারেনি। ৩০ মার্চ জনগণের আন্দোলনে খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন, ভোট চুরির অপরাধে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই বলেন ডায়লগ করতে হবে। আলোচনা করতে হবে। কাদের সঙ্গে? ওই বিএনপি খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, যারা সাজাপ্রাপ্ত আসামি? যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। খালেদা জিয়া বক্তৃতা দিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রিত্ব তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনোদিন হবে না, হতে পারবে না। আর আওয়ামী লীগ একশ বছরেও ক্ষমতায় যাবে না। আল্লাহ তায়ালা এ ধরনের গর্বভরা কথা পছন্দ করেন না। বাংলাদেশের মানুষ একেবারেই পছন্দ করে না। সেজন্য খালেদা জিয়ার মুখের কথা তার বেলায়ই লেগে গেছে। তিনি বলেন, ওই দুর্নীতিবাজ, সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, অর্থ পাচারকারী, অস্ত্র পাচারকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, আইভি রহমানের হত্যাকারী, জিয়াউর রহমান ছিল আমার বাবার হত্যাকারী। আর এদের সঙ্গে ডায়লগ করতে হবে, আলোচনা করতে হবে। আবার মানবাধিকারের কথাও বলে- এটা কেমন ধরনের কথা? সেটাই আমি জিজ্ঞেস করি।
মানুষ পুড়িয়ে মারলে একটাকেও ছাড়ব না : আন্দোলনের নামে আর কোনো মানুষকে পুড়িয়ে মারা হলে একটাকেও না ছাড়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা- এটা কোনো মানুষের কাজ? এটাই হচ্ছে বিএনপির আন্দোলন। এজন্য আমরা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছি- আপনারা আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন, মিছিল করেন, মিটিং করেন। কোনো আপত্তি নেই। যদি কোনো মানুষকে পুড়িয়ে মারা, বা বোমা মারা, বা গ্রেনেড মারা বা ওই ধরনের কোনো অত্যাচার করতে যায়

তাহলে একটাকেও ছাড়ব না- এটা হলো বাস্তব কথা।
আঘাত সহ্য করেছি, এটা আমাদের দুর্বলতা নয় : শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ওপর যে আঘাত দেয়া হয়েছে। আমরা তা ভুলিনি। আমরা সহ্য করেছি দেখে কেউ যেন এটা মনে না করে- সহ্য করাটা আমাদের দুর্বলতা। দুর্বলতা নয়। বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। আমাদের সঙ্গে আছে। ওই খুনিদের সঙ্গে নেই। জিয়া খুনি, খালেদা জিয়া খুনি, তারেক জিয়া খুনি। শুধু খুনি না। অর্থ পাচারকারী, অস্ত্র পাচারকারী, মানুষ হত্যাকারী। ওদের কী অধিকার আছে এদেশের মানুষের কাছে দাঁড়ানোর আর মানুষের ভোট চাওয়ার বা রাজনীতি করার। তারপরও আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তারা শাস্তি পেয়েছে। এতিমের অর্থ পাচার করে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। অস্ত্র চোরাকারবারি, গ্রেনেড হামলা এবং অর্থ পাচারকারী হিসেবে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। তাদের নেতারা হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এটা প্রমাণিত। তারেকের বিরুদ্ধে আমেরিকা থেকে এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে। এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দেয়া মামলা। কাজেই এরা এই দেশে মানুষের কল্যাণে কী কাজ করবে?
বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচার আমরা ভুলব কীভাবে : আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াত আমলে একদিকে বিএনপির লেলিয়ে দেয়া গুণ্ডা বাহিনী; অন্যদিকে জামায়াত-শিবির আরেক দিকে পুলিশ বাহিনী। আমাদের নারীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করেছিল। রাস্তায় ফেলে কীভাবে মেরেছে, নির্যাতন করেছে, বুটের লাথি মেরেছে। পুলিশ স্টেশনে গিয়ে তাদের ওপর অত্যাচার করেছে। এমনকি সদ্যপ্রসূত বা অন্তঃসত্ত্বা কেউই রেহাই পায়নি। এইভাবে তারা অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। কই আমরা তো কিছু করছি না। তাদের মেয়েরা মিছিল করছে, আন্দোলন করছে, ¯েœাগান দিচ্ছে। তারা ইচ্ছামতো করতে পারছে। আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু যেভাবে তারা এই অত্যাচারগুলো করেছিল- সেটা আমরা ভুলব কীভাবে। সাধারণ মানুষ ভুলবে কীভাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মেয়েদের বলব ভোটের অধিকার সবার। যে কোনো নির্বাচনে আমাদের নারীরা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে। তারা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে। নির্বাচনে স্থানীয় সরকারের ৩০ ভাগ কোটা আছে। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ। সব জায়গায় মেয়েদের কোটা রাখা আছে। সেখানে মেয়েরা সরাসরি নির্বাচনও করতে পারে, কোটার ভিত্তিতেও করতে পারে। সেই সুযোগ করে দিয়েছি। কাজেই নারী-পুরুষ সবাই মিলে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।
গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছি : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এই দেশে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি। জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি চেয়েছিলেন এই দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করবেন। কিন্তু তাকে হত্যার পর খুনি আর যুদ্ধাপরাধীদের রাজত্ব। আওয়ামী লীগই একমাত্র এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। পরপর তিনবার ক্ষমতায় এসেছি। আজকে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে আমরা এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি।
সন্তান যেন বিপথে না যায়, সেজন্য বন্ধুর মতো মিশতে হবে : শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মেয়েদের বলব। যাদের নিজের সন্তান যেন কোনোরকম জঙ্গিবাদ, মাদক বা সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। প্রত্যেক মাকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। ছেলেমেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। তারা যেন নিজের মনের কথা মায়ের কাছে খোলা মনে বলতে পারে- সেই ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাহলে ছেলেমেয়ে কখনো বিপথে যাবে না। আর ছেলেমেয়ের খবরও রাখতে হবে। কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মেশে, কী করে, সেদিকেও নজর দিতে হবে। লেখাপড়ার দিকে মন দেবে, স্পোর্টস বা সাংস্কৃতিক কর্মসূচি- এ ধরনের কাজ যারা করে, তাদের ভেতর যে মেধা আছে। সেই মেধা বিকাশের যাতে সুযোগ হয়, সেই ব্যবস্থা করবে। তারা যেন বিপথে না যায়, সেজন্য মায়ের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সেই ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, মায়ের অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি। সন্তানের নামে আগে শুধু বাবার নাম থাকত। আমি মায়ের নামও তার সঙ্গে যোগ করে দিয়েছি। মা-বাবা দুজনের নামেই সন্তান পরিচিত হবে। কারণ মা ধারণ করে। মা লালন-পালন করে। আর মায়ের নাম নেই- এটা হতে পারে? পারে না। আমরা মায়ের অধিকারও নিশ্চিত করেছি।
মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া বেগমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃকের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রোজিনা রোজি।
এর আগে দুপুর সোয়া ২টায় কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। ২টা ৫০ মিনিটে সম্মেলনের মঞ্চে আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জবাবে নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানান তিনি। পরে ফুল দিয়ে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানো হয়।
এদিকে সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলে আসেন নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে উপস্থিতির সংখ্যাও। সম্মেলনকে ঘিরে পুরো উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন শোভা পাচ্ছিল। শাহবাগ চত্বর থেকে মৎস্য ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট চত্বর ছিল নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়