জাহাঙ্গীর কবির নানক : বিএনপির মানবতার শিক্ষা নেয়া দরকার

আগের সংবাদ

এপার ওপার সুড়ঙ্গ সংযোগ : কর্ণফুলীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধনের অপেক্ষায়

পরের সংবাদ

রাশিয়া নয়, পোল্যান্ডে পড়া ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইউক্রেন! সীমান্তের গ্রামে দুজনের মৃত্যু > পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ন্যাটো

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : রাশিয়ার তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রে পোল্যান্ডের ২ নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় উঠে এসেছে নতুন তথ্য। জানা গেছে, রাশিয়া নয়, ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্রেই প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডের দুজনের মৃত্যু হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্রকে রুখতে গিয়ে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। গতকাল বুধবার ওই ক্ষেপণাস্ত্র গিয়ে পড়ে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে পূর্ব পোল্যান্ডের গ্রাম সেবোদুফে। এই হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক উত্তেজনা তীব্র হয়েছে।
সীমান্তে বিস্ফোরণের বিষয়ে এক বিবৃতিতে পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে দেশটির ভূখণ্ডে ‘রাশিয়ার তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র’ এসে পড়ে। এতে সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে দুজন নিহত হন। তবে বিবৃতিতে কোন দেশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশের বাহিনীই রাশিয়ার তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে।
পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আঁন্দ্রে দুদা ওই ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার নিক্ষেপ করা কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তারপরও রাশিয়ায় তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র কেন এবং কীভাবে তাদের দেশে গিয়ে পড়ল, এর দ্রুত ব্যাখ্যা চেয়ে

ওয়ারশে অবস্থিত রুশ দূতাবাসে খবর পাঠানো হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পোল্যান্ডে পড়া ক্ষেপণাস্ত্র কোনোভাবেই তাদের নয়। উল্টো উত্তেজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য পোল্যান্ডকে দায়ী করেছে ভøাদিমির পুতিনের দেশ। জি-২০ বৈঠকের মাঝে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
জরুরি বৈঠকে বাইডেন : ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ সম্মেলনে জন্য জড়ো হওয়া বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে পোল্যান্ডের বিস্ফোরণ নিয়ে গতকাল জরুরি বৈঠকে বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পরে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও এর ন্যাটো মিত্ররা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে। কিন্তু রাশিয়া থেকে ছোড়া কোনো ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সম্ভবত এমনটি হয়নি।
রয়টার্স বলছে, বাইডেনের এ বক্তব্যে অনেকগুলো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এর মধ্যে এ বিস্ফোরণে রাশিয়ার সম্ভবত কোনো দোষ নেই, বাইডেন এমনটি বুঝিয়েছেন কিনা তাও আছে।
বালির বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জার্মানি, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, জাপান, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নেতারা বাইডেনের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। শুধু জাপান বাদে এ দেশগুলোর সবাই ন্যাটোর সদস্য, এ প্রতিরক্ষা জোটে পোল্যান্ডও আছে।
যদি কখনো প্রমাণিত হয় যে রাশিয়া পোল্যান্ড বা অন্য কোনো ন্যাটো দেশে হামলার জন্য দায়ী, সে ক্ষেত্রে ন্যাটোর সদস্য দেশ হিসেবে সে দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে যৌথ প্রতিরক্ষা নীতির ভিত্তিতে বাকিদের সহায়তা চাইতে পারে। সেই নীতি অনুযায়ী, যে কোনো সদস্য দেশ আক্রান্ত হলে গোটা সামরিক জোট সে দেশের সামরিক সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাধ্য। ১৯৪৯ সালে ন্যাটো প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই সেই সুযোগ রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০০১ সালে তথাকথিত নাইন ইলেভেন হামলার পর শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, তার দেশ ন্যাটোর প্রতি ইঞ্চি রক্ষা করতে প্রস্তুত।
পোল্যান্ডের গ্রামে আঘাত করা ক্ষেপণাস্ত্রটি ইউক্রেন থেকে ছোড়া হয়েছে- প্রাথমিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে ৩ মার্কিন কর্মকর্তাও এমন আভাস দিয়েছেন। একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম যুক্তরাষ্ট্রের ওই তিন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্রটি ইউক্রেনীয় বাহিনী ছুড়েছে। একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্রকে ঠেকিয়ে দিতে ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল।
ইন্দোনেশিয়ায় জি-২০ সম্মেলন উদ্বোধনের দিনেই গত মঙ্গলবার ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন থেকে রুশ সেনাদের সরিয়ে নেয়ার কয়েকদিনের মধ্যে অন্যতম বড় এ হামলা চালানো হয়। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভেও হামলায় হয় এবং অন্তত একজন নিহত হওয়ার কথা জানান দেশটির কর্মকর্তারা। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র পশ্চিমাঞ্চলীয় লেভিভ শহরে আঘাত হেনেছে। শহরটির দূরত্ব পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে ৮০ কিলোমিটারেরও কম।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মুখপাত্র জানান, মঙ্গলবার রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে ৯০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে আর সেগুলোর মধ্যে ৭০টিকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে তারা। ইউক্রেনে রাশিয়ার তীব্র ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যেই পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার ঘটনাটি ঘটে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জোরদার করার নিন্দা করেছেন। সর্বশেষ হামলাকে ‘পুরোপুরি বিবেকবর্জিত’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
বাইডেন-দুদা ফোনালাপ : পোল্যান্ড সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এ বিষয়ে ‘পরবর্তী করণীয়’ ঠিক করতে ফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পোলিশ প্রেসিডেন্ট আঁন্দ্রে দুদা। দুজনে বলেন, তদন্ত এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে তাদের এবং তাদের টিমগুলোর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলা উচিত।
এদিকে পোল্যান্ডে প্রাণঘাতী বিস্ফোরণের ঘটনায় গতকাল বুধবার জোটের সদস্যদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডাকেন ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ। জরুরি বৈঠক ডেকেছে শিল্পোন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জোট জি-৭। এই জোটের দেশগুলো হলো- কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
একজন ন্যাটো কর্মকর্তা বলেছেন, বিস্ফোরণের খবর জোট খতিয়ে দেখছে এবং পোল্যান্ডের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সমন্বয় রক্ষা করে যাচ্ছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিস্ফোরণের বিষয়ে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আঁন্দ্রে দুদার সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে টুইট করেছেন ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ।
পোলিশ সরকারের মুখপাত্র পিওর মুলার বলেন, পোল্যান্ড সামরিক ইউনিটগুলোর প্রস্তুতি জোরদার করছে। আমাদের ন্যাটোর ‘আর্টিকেল ফোর’ সক্রিয় করতে হবে কিনা, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার প্রশংসায় রাশিয়া : পোলান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেছে রাশিয়া। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বাইডেনের মন্তব্যের প্রশংসা করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট সংযত এবং বেশ পেশাদার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।’
এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনে সর্বশেষ যে হামলা তারা করেছেন তা দেশের অভ্যন্তরেই হয়েছে এবং পোলিশ সীমান্ত থেকে অন্তত ৩৫ কিলোমিটার দূরে। রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্রই পোল্যান্ডে আঘাত হেনেছে, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র নয়। একজন রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তি বলেছে, রাশিয়ার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পোল্যান্ডের ভূখণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম নয়। বরং ইউক্রেনের এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা অস্বাভাবিক আচরণ করলে এ ঘটনা ঘটতে পারে।
পোল্যান্ডে বিস্ফোরণের পর ইউক্রেন যুদ্ধ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আরো বেড়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে সামরিক জোট হিসেবে ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি সংঘাত ঘটতে পারে। তবে চরম পদক্ষেপ নেয়ার আগে ঠাণ্ডা মাথায় গোটা বিষয়টি ভেবে দেখতে ন্যাটো সনদে ‘আর্টিকেল ফোরের’ আওতায় এক প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা রাখা আছে। সেই ধারা অনুযায়ী, কোনো সদস্য দেশ যদি নিজস্ব এলাকার অখণ্ডতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা বা নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করে, তখন বাকি সব সদস্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পোল্যান্ড সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়