জাহাঙ্গীর কবির নানক : বিএনপির মানবতার শিক্ষা নেয়া দরকার

আগের সংবাদ

এপার ওপার সুড়ঙ্গ সংযোগ : কর্ণফুলীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধনের অপেক্ষায়

পরের সংবাদ

মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর অনুষ্ঠানে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত : অবাধ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ প্রয়োজন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান বলেছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে তুরস্ক অংশগ্রহণমূলক ভোট চায়। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের মতপার্থক্য মেটাতে ও সমাধান করতে হবে। একটা সময় বাংলাদেশ-তুরস্কের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিও হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। আগামী বছর তুরস্কের জাতীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশ সফরে আসবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। গতকাল বুধবার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক ও শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত তুরান জানান, তারা বাংলাদেশকে একটি বিশ্বস্ত উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে দেখেন এবং এটি এ অঞ্চলে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে যাচ্ছে। তুরস্ক বাংলাদেশে তাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বহুমুখী করার পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্ক আস্থার ভিত্তিতে এবং তারা বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব আরো স¤প্রসারিত করার অপেক্ষায় রয়েছে।
নির্বাচন প্রস্তুতি যে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় মন্তব্য করে বাংলাদেশের রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি দেশ তখনই এগিয়ে যায়, যখন দেশটি নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের দায়িত্ব নেয়। গণতন্ত্রের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। একই সঙ্গে বিরোধী দলেরও দায়িত্ব আছে। গণতন্ত্রে দুটি পক্ষ থাকে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সমস্যা আছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশের সরকার এবং নির্বাচন কমিশন চেষ্টা করছে যাতে বিরোধী

দল নির্বাচনে অংশ নেয়। বিরোধী দল অংশ না নিলে বাংলাদেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার সুযোগ হারাবে বলে জানান তিনি। অবাধ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হওয়া উচিত।
বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে আগে ভুল-বোঝাবুঝি হলেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস বলে মন্তব্য করেছেন ওই দেশের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে তুরস্কে মিলিটারি ক্যুর চেষ্টা করা হয়। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম নেতা, যিনি আমাদের প্রেসিডেন্টকে সমর্থন দিয়েছিলেন। এটি বিশ্বাস না থাকলে হতো না। ২০১৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত আমির মতিউর রহমান নিজামির ফাঁসি কার্যকরের পর বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয় তুরস্ক। বাংলাদেশও ওই সময়ে তার রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকে পাঠায়। এই গোটা বিষয়টি ভুল-বোঝাবুঝি ছিল বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। তুরস্কে আমাদের সেই অভিজ্ঞতা আছে। ষাটের দশকে মিলিটারি ক্যুর পর তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এর ১০ বছর পর ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে ওই দলের তিনজনকে প্রতিহিংসাবশত মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু গণতন্ত্রে প্রতিহিংসার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বন্ধুদেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা আমরা চেয়েছিলাম এবং আমরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছিলাম। কোনোভাবেই আমরা অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে নাক গলাতে চাইনি। কিন্তু বিষয়টি এমনভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যে, আমরা রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিই। যখনই বিষয়টি কিছুটা ঠিক হয়ে আসে, তখন আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতকে ফেরত পাঠাই।
তিনি বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে ঢাকা সফরের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী বছর তুরস্কের জাতীয় নির্বাচনের পর যে কোনো সময়ে ঢাকা সফর করবেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
বাংলাদেশে অস্ত্র কারখানা বানাতে চায় তুরস্ক : তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান আরো জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে চায় তার দেশ। এজন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর করতেও রাজি তারা। আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার, রকেট লঞ্চার, ড্রোনসহ আরো অনেক পণ্য বাংলাদেশ কিনেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি শুধু ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। তুরস্কের একটি কোম্পানি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে শেল বানানোর প্রযুক্তি দিয়েছে এবং সেটি এখানে বানানো হচ্ছে।
নেভি ও কোস্টগার্ডের জন্য নতুন প্রস্তাব বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা পেট্রোল বোট তৈরির জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব করেছি। এটি গ্রহণ করা হলে ৯টি পেট্রোল বোট খুলনা ও চট্টগ্রামে তৈরি করা হবে। গত ১৫ বছরে তুরস্কের কোম্পানিগুলো প্রতিরক্ষা পণ্য উৎপাদনে অনেক উন্নতি সাধন করেছে। তারা এখন ন্যাটো মানের পণ্য উৎপাদন করছে এবং শর্ত ছাড়া সুলভ মূল্যে এগুলো বিক্রি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তুরস্ক বাংলাদেশে অস্ত্র কারখানা নির্মাণ করতে চায়। ওই কারখানায় বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় অস্ত্র তৈরি করা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তাসংক্রান্ত সমঝোতা আছে। আর্থিক সহায়তার অধীনে বাংলাদেশ তুরস্কের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে প্রতিরক্ষা পণ্য কিনতে পারবে। বাংলাদেশের প্রায় তিন হাজার ডিফেন্স অফিসার তুরস্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়