জাহাঙ্গীর কবির নানক : বিএনপির মানবতার শিক্ষা নেয়া দরকার

আগের সংবাদ

এপার ওপার সুড়ঙ্গ সংযোগ : কর্ণফুলীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধনের অপেক্ষায়

পরের সংবাদ

জামায়াত-জঙ্গি নতুন সমীকরণ : দলটির আমির ডা. শফিকের ছেলে ডা. রাফাতকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে নতুন তথ্য ও যোগসূত্র

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানাভাবে চেষ্টা করছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। প্রকাশ্য তৎপরতা না থাকলে গোপনে চলছে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। সারাদেশে নিয়মিত চলছে ভার্চুয়ালি সভা। মাঝে মধ্যে তারা ঝটিকা মিছিল করছে। এর মধ্যে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘আমিরপুত্র’ গ্রেপ্তারের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে জামায়াতের জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবকটি ইউনিট ও গোয়েন্দারা খুঁজে খুঁজে জামায়াতের জঙ্গি কানেকশনের তথ্য সংগ্রহ ও অনুসন্ধান শুরু করেছে। জামায়াত ও শিবিরের কারা কীভাবে জঙ্গি কার্যক্রমে ভূমিকা রাখছে- এ ব্যাপারে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সিলেটের জামায়াত অধ্যুষিত তাকওয়া মসজিদ ঘিরে জঙ্গিদের মগজধোলাই কার্যক্রম হয়। অনলাইনে তারা দাওয়াতি কার্যক্রম ছড়িয়ে দিয়েছে সারাদেশে।
এ প্রসঙ্গে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) প্রধান রুহুল আমীন ভোরের কাগজকে বলেন, জামায়াতের জঙ্গি কানেকশন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানানো হবে। কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. মো. শফিকুর রহমানের ছেলে ডা. রাফাতকে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সম্পৃক্ততায় গ্রেপ্তারে পর দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
জামায়াত-শিবিরের জঙ্গি কানেকশনের ব্যাপারে খোঁজখবর করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, জঙ্গি তৎপরতায় যারা যেভাবেই যুক্ত হোক না কেন পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সোর্স ও গোয়েন্দারা তাদের ব্যাপারে সবসময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। ডা. রাফাতের সঙ্গে জামায়াত বা শিবিরে কোনো যোগাযোগ রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, একসময় শিবির করেছেন ডা. রাফাত। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে তার যে গোপন যোগাযোগ, তা খতিয়ে

দেখা হচ্ছে।
র‌্যাবের অপারেশন্স উইংয়ের পরিচালক কর্নেল মো. কামরুল হাসান বলেন, জঙ্গি ও জামায়াত একসঙ্গে দেখা হয় না। তদন্ত ও অনুসন্ধান করা হয় পৃথকভাবে। পুলিশের অন্য একটি ইউনিট জামায়াতের আমিরপুত্রকে আটকের পর এ নিয়ে কাজ করছে বলে মনে করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সিটিটিসির এডিসি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, সিলেটে সালাফি মতাদর্শের লোকজন জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয়। তাদের অনেকের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগ রয়েছে। এমন তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ডা. রাফাতকে প্রথম দফায় তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর সোমবার দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছে জামায়াতের জঙ্গি কানেকশন, অর্থ, বিস্ফোরক ও অস্ত্রের উৎসের ব্যাপারে তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে। তিনি সহজে মুখ খুলছেন না। তার তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
জানা গেছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল এবং যুদ্ধাপরাধের মামলায় শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর জামায়াত অনেকটা আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিতে পরিণত হয়। তবে তারা বসে নেই। বিদেশে বসে ব্যারিস্টার রাজ্জাকসহ অনেকে কলকাঠি নাড়ছেন। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে এমন নেতার সন্তানরাও গোপনে সক্রিয়। শিবির সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গোপনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। নাশকতার জন্য অনেকে জঙ্গি অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতায় জড়িত। এর মধ্যে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ৯ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর আমিরের ছেলে ডা. রাফাত চৌধুরী গ্রেপ্তারের পর আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। পুলিশ ও গোয়েন্দারা নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো এসব খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ক্যাম্পেও যাতায়াত ছিল ডা. রাফাতের। কেএনএফ অর্থের বিনিময়ে হিন্দাল শারক্বীয়ার তরুণদের ট্রেনিং দিয়েছে- এমন তথ্য মিলেছে। আনসার আল ইসলামের মতো অন্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদেরও ট্রেনিং দিয়ে থাকতে পারে। এ অবস্থায় নতুন জঙ্গি সংগঠন হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততা আছে কিনা বা থাকলেও কোন পর্যায়ে তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সিটিটিসি জানিয়েছে, ১ নভেম্বর রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেজাদুল ইসলাম সাহাব তানিম ওরফে ইসা ওরফে আরাফাত ওরফে আনোয়ার ওরফে আনবির, মো. জাহিদ হাসান ভূঁইয়া ও সৈয়দ রিয়াজ আহমদ নামে আনসার আল ইসলামের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সিলেট থেকে হিজরত করেছিল। স¤প্রতি যত যুবক হিজরত করেছে এর মধ্যে সিলেটে বেশি। হিজরতকালীন মাস্টারমাইন্ড ডা. রাফাত। ডা. রাফাত একটি মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্নি করছিলেন। ১ নভেম্বর গ্রেপ্তার তানিম, আনবির ও জাহিদের দেয়া জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, তিন যুবকসহ যারাই সিলেট থেকে হিজরত করেছে, নতুন করে দীক্ষা ও রেডিক্যালাইডজ হয়েছে এর নেপথ্যে মূল ব্যক্তি ছিলেন ডা. রাফাত।
এদিকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে র‌্যাবের অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিরেডিক্যালাইজেশনের মাধ্যমে দুই জঙ্গিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে র‌্যাব। এদের মধ্যে এক নারীকেও পরিবারে ফিরিয়ে দেয় র‌্যাব। তবে তার ছেলে এখনো হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দিয়ে নিখোঁজ আছেন। আম্বিয়া সুলতানা এমিলি নামের ওই নারীকে যেদিন পরিবারে ফিরিয়ে দেয়া হয়, সেদিনই জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে সিলেট থেকে জামায়াতে ইসলামের আমীর ডা. শফিকের ছেলে ডা. রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে গ্রেপ্তারের খবর জানায় সিটিটিসি।
তাদের দাবি, গ্রেপ্তার রাফাত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছিলেন। ডা. রাফাতের নেতৃত্বেই ২০২১ সালের জুন মাসে ১১ যুবক সিলেট থেকে হিজরত করে। তখন তা বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। তারা বান্দরবানে যায় কিন্তু কোনো কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তারা সাত দিন পর সিলেটে ফিরে আসে। তবে তারা তৎপরতা বন্ধ রাখেননি। রাফাতের মতো জঙ্গিবাদের বড় সহযোগী ও সংগঠক তাহহিয়াত। সে আবার গত বছরের আগস্টে পুনরায় হিজরত করে। নাইক্ষ্যংছড়ি পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ফেরত এক যুবককে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাহহিয়াতের ছবি দেখালে তিনি তা শনাক্ত করেন। তাহহিয়াতসহ বেশ কয়েকজন ২০২১ সালের আগস্টে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগ দেন। সিলেট অঞ্চল থেকে যেসব যুবক হিজরত করেছেন তাদের দীক্ষা, প্রভাবিত করা, দাওয়াত দেয়া, হিজরতে উদ্বুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন রাফাত।
কুমিল্লার ৭ তরুণ নিখোঁজের পর নতুন জঙ্গি সংগঠনের নাম উঠে আসে। এরপর সিটিটিসিসহ অন্যান্য বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করে। তারা গা-ঢাকা দেয়। তারা আবার সিলেট থেকে হিজরতের প্রস্তুতি নেয়। গত ১ নভেম্বরে গ্রেপ্তার তানিম, আনবির ও জাহিদের মতো আরো অনেককে নিয়ে পুনরায় বড় রকমের হিজরতের কথা ছিল। তাদের দেয়া তথ্যে ডা. রাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়