শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে নি¤œচাপ : মঙ্গলবার আঘাত হানতে পারে ‘সিত্রাং’

আগের সংবাদ

সিত্রাংয়ের ভয়াবহ ছোবল ১৩ জেলায় : ভোলা ও নড়াইলে ৩ জনের মৃত্যু > তিন বিমানবন্দরে কার্যক্রম বন্ধ > ২৫ লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে > তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

উপকূলে জলোচ্ছ¡াসের আশঙ্কা : যেসব এলাকায় আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নি¤œচাপটি আরো সামান্য উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এ রূপ নিয়েছে। এটি দেশের উপকূলীয় এলাকার ১৯টি জেলায় আঘাত হানতে পারে। অতি ভয়ঙ্কর না হলেও অমাবস্যা তিথি ও বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে জলোচ্ছ¡াসের আশঙ্কা রয়েছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। সিত্রাং নামটি থাইল্যান্ড দিয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সরে যাওয়ার পর সমুদ্রের তাপ বাড়ছে। যা বঙ্গোপসাগরের ওপর সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে। এর জেরে মহাসাগরীয় অঞ্চলে বায়ুমণ্ডলীয় আর্দ্রতাও বাড়ছে। এই অবস্থায় যখন দক্ষিণ চীন সাগর থেকে ঝঞ্ঝা বঙ্গোপসাগরে পৌঁছায়, তখন অনুকূল পরিস্থিতি অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড়ের গঠন এবং তীব্রতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে আন্দামান সাগরে ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্ট হয়। যা প্রতিনিয়ত শক্তি বাড়িয়ে নি¤œচাপ, গভীর নি¤œচাপে রূপ নেয়। তা আরো শক্তি বাড়িয়ে চলতি বছরে বর্ষাপরবর্তী প্রথম ঘূর্ণিঝড়টি ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া দপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে।
দেশের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আন্দামান সাগরে ক্রমশই ঘনীভূত হচ্ছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। আর সেই ঘূর্ণাবর্ত ক্রমেই শক্তি বাড়িয়ে গভীর নি¤œচাপে পরিণত হয়েছে। পরে তা আরো শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর

গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
কখন আঘাত হানবে : ঘূর্ণিঝড়টি আরো শক্তি অর্জন করে আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সেই সঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ¡াস হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এমনটাই বলা হয়েছে। অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে ২ দিনের মধ্যে আঘাত হানতে পারে। আমরা এর গতিবিধি লক্ষ্য করছি। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে এটি মাঝারি মাত্রার ঘূর্ণিঝড়। তবে এটি আঘাত হানার সময় অমাবস্যা থাকবে। অমাবস্যা তিথি ও বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ¡াস হতে পারে। দেশের উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, বরিশাল, ভোলা, ল²ীপুর, নোয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে।
যেসব এলাকায় আঘাত হানতে পারে : ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গভীর নি¤œচাপটি গতি বাড়িয়েছে। এখন সরাসরি বাংলাদেশের দিকে মুখ করে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। এটি ঘণ্টায় ১৬ থেকে ২০ কিলোমিটার গতিতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।
তবে গত ৩ বছরে যে ঘূর্ণিঝড়গুলো হয়েছে তার চেয়ে বেশি এলাকায় সিত্রাং আঘাত হানতে পারে। দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলায় একযোগে এটি আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঝুঁকিতে থাকা দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলা হলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, ল²ীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরও একই পূর্বাভাস দিয়েছে। এতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে কেমন শক্তি নিয়ে এটি আঘাত হানবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এই বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, ম্যাপিং করা হয়েছে একেবারে কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত আমাদের ৭৩০ কিলোমিটার উপকূল পুরোপুরি আক্রান্ত হবে। এটা সিভিআর সাইক্লোন হবে। গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার।
কোনো কোনো বছরে দেখা গিয়েছে যে সমুদ্রের বায়ুমণ্ডলীয় কারণ ঘূর্ণিঝড় তৈরিতে বাধা দিয়েছে। যেমন, ২০২০ সালে নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগর বরাবর দুর্বল লা নিনা পরিস্থিতি ভারতের উপকূলের কাছাকাছি একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করেছিল। তবে, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং তেমন কোনো বাধার মুখে পড়েনি বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
ঘুর্ণিঝড়ের অভিমুখ : আবহাওয়া অফিসের বুলেটিন অনুযায়ী, ঘুর্ণিঝড়টি গতকাল রাত ৮টায় পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে দিক পরিবর্তন করে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।
পূর্বাভাস : আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, আজ সোমবার দেশের উপকূলসহ বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি বেশি হলে ঘূর্ণিঝড়ের গতি কমে আসতে পারে। সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে উপকূলের সবকটি জেলার জন্য ভারি বৃষ্টি ও বন্যার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী, ফেনীসহ দেশের নদী ও সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়