করোনা পরিস্থিতি : সংক্রমণের হার ১১.৬০ শতাংশ

আগের সংবাদ

খোলা ছাদে খুশির নিনাদ : মেয়েদের ঘিরে শোভাযাত্রায় লাখো মানুষ

পরের সংবাদ

নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসংঘে চিঠি রোহিঙ্গাদের : এবার উখিয়া সীমান্তেও গোলাগুলি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জসিম আজাদ, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ও শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি (তুমব্রু) সীমান্ত থেকে : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলাগুলির পর এবার কক্সবাজারের উখিয়া পালংখালী সীমান্তে গোলাগুলির পাশাপাশি থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে মর্টার শেল। এতে এপারের বসতিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে পালংখালী ইউনিয়নের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ববালুখালী, আঞ্জুমান পাড়া ও থাইংখালী গ্রামের ৭০টির বেশি পরিবার।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পালংখালীর আঞ্জুমান পাড়ার সীমান্তে বসবাসকারীরা ভারী অস্ত্র ও

গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান বলে জানিয়েছেন। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসাইন সজীব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তুমব্রুর পর এবার উখিয়া পালংখালীর আঞ্জুমান পাড়ার সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্তের মানুষ যাতে ভয় না পায়, সেজন্য তাদের অভয় দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনা বিজিবিকে অবহিত করা হয়েছে।

ইউএনও ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, স্থানীয়রা গতকাল সকালে উখিয়া সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়ার কথা অবহিত করেছে। এখানে সীমান্তের ৩০০ মিটারের ভেতরে প্রায় ১০০ পরিবার রয়েছে। আমরা তাদের খোঁজখবর রাখছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এদিকে সকাল থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তেও গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। মাসখানেক ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল, গোলাগুলিসহ নানা ভারী অস্ত্রের আওয়াজে এপারের ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ও বাইশফাঁড়ি এলাকার মানুষ দিন কাটাচ্ছে আতঙ্কে।

বেশ কয়েকবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডেও এসে পড়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে তুমব্রুর কোনারপাড়া সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক যুবক নিহত হন। আহত হয় রোহিঙ্গা শিশুসহ ৫ জন।

এ ঘটনায় নাইক্ষ?্যংছড়ির সীমান্ত থেকে স্থানীয় ৩০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার সদস্যকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। কিছু পরিবারকে এরই মধ্যে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র।

নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসংঘে চিঠি শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের : বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মর্টার শেল ও গোলাবর্ষণে হতাহতের ঘটনার মধ্যে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসংঘে চিঠি দিয়েছে শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। মিয়ানমার থেকে আসা গোলায় এক কিশোর নিহতের ঘটনার তিন দিনের মাথায় সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়া ক্যাম্পের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্দার (মাঝি) দিল মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত চিঠিটি মেইল যোগে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে কমিউনিটি নেতা মো. আরিফ জানান। মাঝি দিল মোহাম্মদ বলেন, আমরা চিঠিতে জাতিসংঘকে জানিয়েছি, সামরিক জান্তা বাহিনী যে কোনো মুহূর্তে আমাদের ওপর আরো বড় আক্রমণ করতে পারে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতিসংঘকে শূন্যরেখার আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান দিল মোহাম্মদ।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা ৬২১টি পরিবারের চার হাজার ২০০ রোহিঙ্গা এখনো তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়ার শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে। তাদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি)।
এর আগে সীমান্তের তুমব্রু জিরো পয়েন্টের অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা মর্টার শেল হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে। সোমবার বিকালে এ মানববন্ধন হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মর্টার শেল হামলায় রোহিঙ্গা কিশোর ইকবাল হত্যার প্রতিবাদ জানানো হয়।
মানববন্ধে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, মাসখানেক আগে শুরুর দিকে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দেশটির বিদ্রোহী সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ শুরু হলেও এখন তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি) একতরফাভাবে গুলি করছে। থেমে থেমে আর্টিলারি, মর্টার শেলের গোলা ছুড়ে পরিস্থিতি অশান্ত করেছে। তাতে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের ৫ হাজারের কাছাকাছি রোহিঙ্গারা আতঙ্কে। তাদের জীবন নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা আব্দুর রহিম বলেন, গত শুক্রবার রাতে শূন্যরেখায় পরিকল্পিতভাবে মর্টার শেল হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা। তারা চায় আমরা এখান থেকে সরে যাই, আমরা যাব না। যদি যেতেই হয় শূন্যরেখায় রোহিঙ্গারা হেঁটে পাহাড়ের অপর প্রান্তে রাখাইনে নিজেদের ভিটায় ফিরবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়