যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি

আগের সংবাদ

সংঘর্ষে চার জেলা রণক্ষেত্র : নারায়ণগঞ্জ মানিকগঞ্জ সিরাজগঞ্জ নেত্রকোনায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত দুই শতাধিক

পরের সংবাদ

সংসদে প্রধানমন্ত্রী : আমি নীলকণ্ঠ হয়ে বেঁচে আছি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে শুধু একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হয়নি। একটি আদর্শকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী কর্তৃক উত্থাপিত বঙ্গবন্ধুর খুনি চক্রের অব্যাহত চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেয়ার শপথ গ্রহণের প্রত্যয়ে ১৪৭ বিধিতে আনীত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রস্তাবের ওপর আরো বক্তব্য রাখেন এ বি তাজুল ইসলাম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহম্মুদ আলী, আমিরুল ইসলাম, জাপার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুল হালিম গোলাপ, সিমিন হোসেন রিমি, মুজিবুল হক চুন্নু, তানভীর শাকিল জয়, জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙা প্রমুখ। পরে প্রস্তাবটি সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নির্মম অন্যায়-অবিচার হত্যাকাণ্ড ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত হয়েছিল। যার মাধ্যমে দেশে অন্যায়-অবিচার হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছিল। হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। তাদের বিচার বন্ধ করা হয়েছিল। এটা কিন্তু একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করেছে তা না, এটা ছিল সমস্ত জাতির বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বিজয়ের চেতনাকে হত্যা করা, একটি আদর্শকে চিরতরে হত্যা করা হয়েছিল। যিনি একটি জাতি উপহার দিয়েছেন, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়েছেন তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিজয়ের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কাজ করেছে। শুধু হত্যা নয়, ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। জাতির পিতার নামটা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পরে এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র। আমার কাছে অবাক লাগে যারা খুনিদের ক্ষমতা দিয়ে মন্ত্রী বানায়, গণতন্ত্রকে হত্যা করে সেনাশাসন আনে, এদের সাথে কীভাবে অনেক মানুষ চলে গেল। তাদের নিয়ে ক্ষমতায় বসায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে গিয়ে কথা বলেছে, তারাই হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি। আমি তো সব শোক নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, আমি তো নীলকণ্ঠ হয়ে বেঁচে আছি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুুত হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, কী অপরাধ ছিল এদের, এত মানুষকে কেন হত্যা করা হলো। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কী পেল। এটাকে জায়েজ করতে কত অপবাদ? এ হত্যা তো শুধু রাষ্ট্রপতিকে হত্যা না, সেখানে যত মুক্তিযোদ্ধা ছিল তাদের হত্যা করা, একটি আদর্শকে হত্যা করা হয়েছিল। এর পরে এটাকে ইসলামী রিপাবলিক ঘোষণা করা হয়, যদিও সেটাকে রাখতে পারেনি। একজন কর্নেল নূর কানাডায়, রাশেদ চৌধুরী আমেরিকায়, এদের আমরা আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি, এরা আবার আমাদের মানবাধিকার শেখায়। আবার এসব দেশে তো তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। কর্নেল রশীদ লিবিয়ায়। ৩ নভেম্বর এরা দেশ ছেড়ে বেরিয়ে যায়, তখন জিয়াউর রহমান ভুট্টোকে মেসেজ পাঠায়, ভুট্টো গাদ্দাফিকে মেসেজ পাঠায়, গাদ্দাফি খুনিদের আশ্রয় দেয়। এর থেকে বোঝা যায় খুনির সঙ্গে কারা জড়িত ছিল। খুনি রশীদ, হুদা এ সংসদে সদস্য হন। তারপরে ক্ষমতায় এসে আমরা অর্ডিনেন্স বাতিল করে এদের বিচার করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পরে সেনাবাহিনীতে একের পর এক ক্যু হয়েছে, বহু সেনাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অনেকের লাশ পায়নি। মামলার নামে প্রহসন, হত্যাকাণ্ডের পরে মামলা দেয়ার ঘটনাও হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাত ছিল। এরপরে অবৈধভাবে ক্ষমতা বৈধ করার জন্য ভোটের কারচুপি শুরু হলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস, আদর্শকে ধ্বংস করে দেয়া হলো। যারা খুনি, স্বাধীনতাবিরোধী তারা ক্ষমতাধর হয়ে গেল আর স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হয়ে গেল ক্ষমতাহীন। যারা সরাসরি হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার হয়েছে। কিন্তু ১৫ আগস্টের চক্রান্ত শুধু আমাদের বিরুদ্ধে নয়, এটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের স্বাধীনতার বিরদ্ধে, ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে আদর্শের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ চক্রান্ত একদিন বেরিয়ে আসবে, তবে জানি না আমরা দেখে যেতে পারি না।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের জন্য আমি প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছি, আমি জানতাম এদেশের মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। আমার বাবার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু আমার চলার পথ অতো সহজ ছিল না। তারপরও জীবন বাজি রেখে আমি কাজ করে যাচ্ছি। আমি জানি একদিন তো মরতে হবে, তবে মরার আগে মরতে রাজি ছিলাম না।
তিনি বলেন, আমি তো সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছি। আমি কারো বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নিতে চাইছি না। আমি মানুষের জন্য কাজ করে যাব। মানুষের জন্য তিনবার ক্ষমতায় থাকার পরে জনগণের জন্য কিছু কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলা করেও চেয়েছি দেশের মানুষ ভালো থাকুক।
প্রস্তাবটির ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারদলীয় সাংসদ আমির হোসেন আমু বলেন, এই দেশে দ্বিজাতীয় রাজনীতির প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান। এদেশে সাম্প্রদায়িক চেতনা, পাকিস্তানি চেতনার উন্মেষ ঘটানোই ছিল জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন। তারা কোন সাহসে সংবিধান সংশোধন করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য ছলে, বলে, কৌশলে দেশের ক্ষমতা দখল করতে হবে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা দরকার। আজকে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে। আজকে বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করার আরেকটি কাজ হলো স্বাধীনতাবিরোধীদের খুঁজে বের করে তাদের প্রতিরোধ করা।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের আমি ক্ষমা করতে পারব না। যিনি না জন্মালে আমরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেতাম না, একটি পতাকা পেতাম না। তাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের সমূলে উচ্ছেদ করতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার আন্দোলন সংগ্রামের স্মৃতিচারণ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রকৃতপক্ষে জনমানুষের নেতা। তিনি দেশের মানুষের জন্য সব কিছু ত্যাগ করেছেন। বহুবার জেলে গেছেন। পাকিস্তান সরকার জেলের মধ্যে কবর খুঁড়েছিল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাকে তোমরা ফাঁসি দাও এতে আমার কোনো দুঃখ নেই, তবে আমার লাশটা যেন আমার দেশের মাটি-মানুষের কাছে তুলে দেয়া হয়।
জাতীয় পার্টির উপনেতা জি এম কাদের বলেন, ১৫ আগস্ট কালরাত্রি ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কালো অধ্যায়। বঙ্গবন্ধুই ছিলেন একমাত্র নেতা, যার এক কথায় দেশের লাখো মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ত। তিনি কখনো অন্যায়র সঙ্গে আপস করেননি।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটনের জন্য জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, ’৭৫-এর বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকাণ্ড, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা একই সূত্রে গাঁথা। আজকেও স্বাধীনতাবিরোধীরা সক্রিয়, পাকিস্তানপন্থিদের চক্রান্ত চিহ্নিত না করলে ’৭৫-এর ওই হত্যাকাণ্ডের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং কার্যকারণ উদঘাটন করা যাবে না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে যারা হত্যা করেছে, দেরিতে হলেও তাদের বিচার হয়েছে। তারা এরপরে তারই কন্যাকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করতে চেয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী ১৬ ডিসেম্বরের পরে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশন অব ইনকোয়ারিজ অ্যাক্টের অধীনে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ষড়যন্ত্র উদঘাটন করতে একটি জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দেব। তবে এ কমিশনের দায়িত্ব হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সেই বেইমানদের চিহ্নিত করে দিয়ে যাওয়া।
শেখ সেলিম বলেন, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। মোশতাক, ফারুক, কর্নেল রশীদ- এরাই শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল না, এদের সঙ্গে দেশি ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত জড়িত। পাকিস্তান সরকার যাকে হত্যা করতে পারেনি, তারই দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।
লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহের জন্য ছয় মাসভিত্তিক চুক্তি হয়ে থাকে। বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মজুদকৃত জ্বালানি তেল দ্বারা ৩০ থেকে ৩৫ দিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে এবং এই সময়ের মধ্যে জ্বালানি তেল নিয়ে দুটি জাহাজ দেশে এসে পৌঁছাবে অর্থাৎ নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশে জ্বালানি তেল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়