গরমে পুড়ছে নগর, কখন নামবে বৃষ্টি

আগের সংবাদ

ইস্যু যাই হোক টার্গেট সংখ্যালঘু

পরের সংবাদ

সারাদেশে নিন্দার ঝড় : হামলাকারীরা ভাবছে তারা বিচারের ঊর্ধ্বে!

প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে ফের সা¤প্রদায়িক হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটল নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ায়। গত ১৫ জুলাই রাতে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ এখন ভাইরাল হয়ে

ঘুরছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এদিকে ন্যক্কারজনক এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে।
রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে প্রতিবাদ। বক্তারা বলছেন, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ও সরকার ব্যর্থ হওয়ায় একের পর এক ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। আর হামলাকারীরাও নিজেদের ‘বিচারের উর্ধ্বে’ ভাবতে শুরু করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার পরও একের পর এক সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনা ঘটে যাচ্ছে- যা বেদনাদায়ক। পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা দেশব্যাপী চলমান সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়ন এবং শিক্ষকদের ওপর হয়রানি বন্ধের জোর দাবি তুলেছেন। অন্যথায় আগামী সংসদ নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ডাকে গণসমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল এবং বিভিন্ন সংগঠনের বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে এদিন সারাদেশে গণসমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে ঐক্য পরিষদ। তারা ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠানের পর এক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসমূহ প্রদক্ষিণ করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি ঊষাতন তালুকদার। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও, প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, সাংবাদিক বাসুদেব ধর প্রমুখ। ঊষাতন তালুকদার বলেন, নড়াইলের মতো ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৌলবাদীরা যখনই চাইবে তখনই হামলা করবে, তখনই চড়াও হবে, আগুন লাগিয়ে দেবে- এটা তাদের একটা খেলা হয়ে গেছে।
বক্তারা এসব হামলায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে জানান, নড়াইলে সহিংসতায় ৫টি মন্দির ভাঙচুর হয়েছে। অর্ধডজন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। হিন্দুদের ঘরে ঢুকে স্বর্ণালঙ্কার, নগদ অর্থ, ফ্রিজসহ দামি জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে। এমনকি বাড়ির টিউবওয়েলও ধ্বংস করা হয়েছে। মনে হচ্ছে আমরা একাত্তরে পাকিস্তানিদের হামলার ওই বর্বর সময়ে ফিরে গিয়েছি।
নড়াইলে সহিংসতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী জানায়, স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও ধর্মান্ধ, মৌলবাদীগোষ্ঠী দেশে একের পর এক সাম্প্রদায়িক তাণ্ডব চালিয়েই যাচ্ছে। কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর বা যশোরের মালোপাড়ার মতো ঘটনায় কোনো সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় তারা বারবার একই ধরনের তাণ্ডব চালানোর সাহস পাচ্ছে। যদি আগের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে হামলাকারী এবং উস্কানিদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যেত তাহলে হয়তো নড়াইলে নতুন করে এমন তাণ্ডব চালানোর সাহস পেত না মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে হিন্দুদের ওপর সা¤প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে সব অসা¤প্রদায়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
নড়াইলে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও ১৪টি জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশন। পাশাপাশি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলে, আগে ঘটে যাওয়া একই ধরনের অপরাধের দৃশ্যত কোনো বিচার দ্রুততম সময়ে না হওয়ায় অপরাধীরা এ ধরনের অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। তাই দ্রুততার সঙ্গে এ হামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। এছাড়া ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাসদ (মার্ক্সবাদী), ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্ক্সবাদী), সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে এই সহিংস ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়