পদ্মা সেতুর উদ্বোধন : সারাদেশে উৎসব হাতিরঝিলে হবে লেজার শো

আগের সংবাদ

সর্বনাশা ধ্বংসযজ্ঞের দায়ভার কার : নিহত অর্ধশত, দগ্ধ-আহত আড়াইশর বেশি, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মজুতের অনুমতি ছিল না, ২৫ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

পরের সংবাদ

সারাদেশে ফের সক্রিয় হচ্ছে ১৪ দলীয় জোট : ২০ জুনের মধ্যে ঢাকায় বড় সমাবেশ

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : বিএনপি ও জামায়াত রাজপথ দখলের পাঁয়তারা করছে। নেতারা বক্তব্যে ও স্লোগানে আরেকটি পঁচাত্তরের হুমকি দিচ্ছে। যার টার্গেট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দেশের পাশাপাশি চলছে আন্তর্জাতিক চক্রান্তও। আর এসব চক্রান্ত মোকাবিলায় মাঠে সোচ্চার হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। সারাদেশে জোটকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে সফর করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তার আগে বহুল কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলতি মাসেই ঢাকায় একটি বড় সমাবেশ করবে ১৪ দলীয় জোট। ২৫ জুন পদ্মা সেতুর জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে চান জোটের নেতারা।
দীর্ঘদিন পর গত শুক্রবার বিকালে জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর ইস্কাটনের বাসায় সরাসরি শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক। বৈঠকে বিএনপির আন্দোলনের পাশাপাশি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জামায়াত-শিবিরসহ মৌলবাদী অপশক্তির গোপন তৎপরতা, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রসহ জোটের সম্পর্ক অটুট রাখার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে সভায় অংশ নেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট কামরুল ইসলাম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, গণআজাদী লীগের সভাপতি এডভোকেট এস কে শিকদার, জাতীয় পার্টির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এজাজ আহম্মদ মুক্তা, তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব মো. আল ফারুকী প্রমুখ।
বৈঠকসূত্র জানায়, বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপতৎপরতার বিরুদ্ধে মাঠে সোচ্চার থাকবে ১৪ দল। এর অংশ হিসেবে ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ করবে

জোট। জেলাপর্যায়ে জোটকে শক্তিশালী করতে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী মাস থেকেই জেলা সফর করতে চান জোটের নেতারা। এর মধ্য দিয়ে বিএনপিকে মোকাবিলার পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্যও জোটকে প্রস্তুত করতে চান তারা। জোটের শীর্ষ নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ২৫ জুন দেশের অনেক বড় অর্জন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ১৪ দলীয় জোটনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই দুঃসাহসিক সফলতার জন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। সেতু উদ্বোধনের আগে ২০ জুনের মধ্যে ঢাকায় জোটের পক্ষ থেকে বড় একটা আনন্দ সমাবেশ করতে চাই। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের নতুন ষড়যন্ত্র মোকাবিলারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারা গণতন্ত্রের ভাষায় কথা না বলে হুঙ্কার দিচ্ছে। তাদের স্লোগানে বলা হচ্ছে ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’। এ স্লোগানের মাধ্যমে তারা জোটনেত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। বিএনপির এই ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে ১৪ দল লড়াই করবে।
জানা গেছে, সভায় আলোচনা হয় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠান অনেক জমকালো হবে। বাংলাদেশের জন্য ২৫ জুন নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক দিন হবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ করা বর্তমান সরকারের অনেক বড় অর্জন। এই সেতু বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা অনেক বাড়িয়েছে। জোটের মুখপাত্র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জোট নেতাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নিতে আহ্বান জানান। জোট নেতারা এতে সম্মতি জানিয়েছেন।
গত শুক্রবারের বৈঠকে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়েও আলোচনা হয়। এজন্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী ১ কোটি মানুষকে ওএমএস কার্ড দিচ্ছেন। তা যথেষ্ট নয়। এগুলো সঠিকভাবে বিতরণ হচ্ছে না। এজন্য বৈঠকে কার্ডের পরিবর্তে রেশনিং পদ্ধতি চালুর পরামর্শ দেয়া হয়। এ বিষয়ে গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে। এটাকে আরো কঠোর করতে হবে। পাশাপাশি ১ কোটি পরিবারকে ওএমএস কার্ড দেয়া হচ্ছে। এর সুফল যাদের প্রাপ্য তারা পাচ্ছেন না। তাই আমরা নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য রেশনিং কার্ড চালুর কথা বলেছি।
সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবির ও মৌলবাদী অপশক্তির গোপন কর্মকাণ্ড মনিটরিংয়ের পাশাপাশি তাদের মোকাবিলার কৌশল নিয়ে বক্তব্য রাখেন রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে দাওয়াতি কর্মসূচির নামে গোপনে সংগঠিত হচ্ছে জামায়াত-শিবির। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই অপশক্তিগুলো তাদের ক্ষমতা দেখাতে চাইবে। তারা নাশকতা করবে। কাজেই তাদের কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। কোনোভাবেই তাদের মাঠ অস্থিতিশীল করার সুযোগ দেয়া যাবে না।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে না এলে বিএনপির অবস্থা ন্যাপের মতো হবে- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্যের এমন বক্তব্যে অসন্তোষ জানিয়েছেন জোটের একজন নেতা। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে জাসদ নিয়েও বক্তব্য দিয়েছেন দলটির কয়েকজন নেতা। এসব বক্তব্যে জোট নিয়ে মানুষের কাছে ভুল ধারণা তৈরি হয়। বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। কাজেই জোটের জন্য ক্ষতিকর এসব বক্তব্য যেন আর না দেয়া হয়, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে জোটের প্রধান সমন্বয়ককে অনুরোধ জানানো হয়। জবাবে জোটের প্রধান সম্বয়ক জানান, এ ধরনের বক্তব্য ব্যক্তিগত। এতে জোটের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। এরপরও ভবিষ্যতে কেউ যেন এ ধরনের বক্তব্য না দেন সে অনুরোধ করা হয়।
বিএনপির জোট সম্প্রসারণ নিয়েও আলোচনা করেছেন কেউ কেউ। তবে এ নিয়ে চিন্তিত নন জোটের নেতারা। তাদের মতে, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হবে। জোট হবে। জোট ভাঙবে, গড়বে। এটা দোষের কিছু না। কিন্তু ১৫ আগস্টের ঘটনা আহ্বান করা গণতন্ত্র, দেশ ও জাতির জন্য বিপদজ্জনক। এগুলো কাপুরুষতার পরিচয়, চোরাপথে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা। এই ধরনের কর্মকাণ্ড ১৪ দল শক্তভাবে মোকাবিলা করবে।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া জানান, পলিসি মেকিং বৈঠক ছিল না। ১৩ জুন ঢাকায় আমরা জোটের প্রয়াত মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করব। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাছাড়া, আগামী মাস থেকে সারাদেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করব। এখন থেকে জোটের বৈঠক নিয়মিত হবে। ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা পরবর্তী মিটিংগুলোতে আলোচনা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়