জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : ১০ বছরেও ক্লাসরুম আইন অনুষদ

আগের সংবাদ

প্রতিযোগিতার বাজারে ডলার : দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে পিছু হটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক > টাকার মান কমল ৯০ পয়সা

পরের সংবাদ

টেস্টে ফের অধিনায়ক সাকিব!

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সাদা পোশাকে অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন মুমিনুল হক। এরপর ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন চলছে পরবর্তী অধিনায়ক হচ্ছেন কে? এরই মধ্যে সাকিব আল হাসানের নাম অধিনায়কের তালিকায় চলে এসেছে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে এখনো মুমিনুলের অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ, নতুন অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত- কোনো বিষয়েই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে আজ বিসিবির বোর্ড সভায় কে হবে টেস্ট অধিনায়ক, তা জানা যাবে। টেস্টে সাকিবের অনাগ্রহের বিষয়টা ক্রিকেটপ্রেমীরা জানেন। কিন্তু গতকাল ভিন্ন কথা বলছেন দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। তিনি বলেন, সাকিব জানিয়েছেন, অন?্য ফরম?্যাটের চেয়ে টেস্ট ক্রিকেটই বেশি উপভোগ করেন। ব্যাটিং পারফরম্যান্স খারাপ হয়ে যাওয়ায় নেতৃত্বের চাপ থেকে মুক্তি চান মুমিনুল। টাইগার দলের টিম ডিরেক্টর সুজন মনে করেন, মুমিনুলের সিদ্ধান্তকে সম্মান করা উচিত। তার জায়গায় সাকিব দায়িত্ব নিলে দলের পরিবেশ ভালো হবে বলেও মনে করেন তিনি।
গতকাল মিরপুরে খালেদ মাহমুদ বলেছেন, সাকিব সবসময়ই বলে ও টেস্ট খেলতে চায় এখন। জানি না, এই কথাটি কেন আসে যে সে টেস্ট খেলতে চায় না। সাকিবের সঙ্গে যতবার কথা বলি, ও তো বলে অন্য ফরম্যাটের চেয়ে টেস্ট বেশি উপভোগ করে। সাকিব যদি খেলতে চায়, যদি অধিনায়কত্ব নিতে চায়, আমার মনে হয় দায়িত্ব দিলে সাকিবেরও একটা পরিবর্তন হতে পারে হয়তো। আমি মনে করি, সাকিব টেস্ট খেলতে চাইলে তাকে দায়িত্ব দিলে ভালো হবে। দলে পরিবর্তন আসতে পারে। দলের পরিবেশও ভালো হবে। কে হবে জানি না। তামিম-মুশফিকও আছে নেতৃত্ব নেয়ার জন্য।
এদিকে শরীরের চেকআপ করিয়ে গতকাল দুপুরেই সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছেন সাকিব। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল, সিঙ্গাপুর থেকে যুক্তরাষ্ট্র চলে যাবেন তিনি। কিন্তু এখন নতুন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, অধিনায়কত্ব বিষয়ে আলোচনার জন্যই সাকিব যুক্তরাষ্ট্র না গিয়ে দেশে ফিরেছেন। তাছাড়া টেস্ট অধিনায়কত্বটা মুমিনুলের কাছে এসেছে হঠাৎ করে। বলতে গেলে প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। সাকিবের নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারত সফরের আগে হুট করেই তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এই সময়টাতে সিনিয়র ক্রিকেটারদের দলেও পাননি নিয়মিত। তারপরও সাফল্য পেয়েছেন কখনো কখনো। বিপরীতে দল আর নিজের ব্যর্থতার পাল্লাই বেশি। তবে পরিসংখ্যান বলছে, সাকিব টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করেছেন। আজ বোর্ড সভায় সাকিবের কাঁধে দায়িত্ব দিলে তিনি ১২তম অধিনায়ক হবেন। এর আগে ২০০৯ সালে শুরুতে বাংলাদেশের টানা কয়েকটি হার এবং দীর্ঘ রানখরার কারণে আশরাফুলের অধিনায়কত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। সেই সময় থেকেই বিসিবি সাকিবকে জাতীয় দলের সম্ভাব্য কর্ণধার হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে। বিসিবি অবশ্য এত দ্রুত সাকিবের কাঁধে অধিনায়কত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার পক্ষপাতী ছিল না। পরবর্তী সময়ে ‘টি-২০ ওয়ার্ল্ড কাপ, ২০০৯’ এর প্রথম পর্বেই বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড ও ভারতের কাছে হেরে বিদায় নেয়ার ফলে আশরাফুলের অধিনায়কত্বের বিষয়টি আবার সামনে চলে আসে। জুন, ২০০৯তে মাশরাফিকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়, সাকিবকে করা হয় সহ-অধিনায়ক।
জুলাইয়ে বাংলাদেশ ওয়েস্ট-ইন্ডিজ সফরে যায়। প্রথম টেস্টেই মাশরাফি হাঁটুর ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। খেলার শেষ দিনে তিনি মাঠেই নামতে পারেননি এবং তার জায়গায় অধিনায়কত্ব করেন সাকিব। অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে সাকিব যেন নতুন রূপে জ্বলে ওঠেন। তিনি ও মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের বোলিং অ্যাটাকের নেতৃত্ব দেন এবং দুজনে মিলে মোট ১৩টি উইকেট তুলে নিয়ে দেশকে এক ঐতিহাসিক জয় এনে দেন। দেশের বাইরে এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। ওয়েস্ট-ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম এবং সর্বসাকুল্যে দ্বিতীয় টেস্ট বিজয়। ওয়েস্ট-ইন্ডিয়ান দলটি অবশ্য খানিকটা অনভিজ্ঞ ছিল। বেতনাদি নিয়ে তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ও ‘খেলোয়াড় সংগঠনের’ মধ্যে রেষারেষি চলছিল। দলের প্রথম একাদশ এ সিরিজ বর্জন করে এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি দল মাঠে খেলতে নামে। সাতজন খেলোয়াড়ের টেস্ট অভিষেক হয় এই ম্যাচে। দলের নেতৃত্বে ছিলেন ফ্লয়েড রেইফার, যিনি কিনা শেষ ১০ বছরে মাত্র ৪টি টেস্ট খেলেছিলেন।
এরপর মাশরাফির ইনজুরিজনিত অনুপস্থিতির কারণে সিরিজের বাকি সময়টা সাকিবই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন। ২২ বছর ১১৫ দিন বয়সে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ ও ইতিহাসের পঞ্চম কনিষ্ঠতম অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন তিনি।
সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টও জিতে নেয় এবং দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়। ব্যাট হাতে ১৬ ও ৯৬* রান করে এবং বল হাতে ৫৯/৩ ও ৭০/৫ উইকেট নিয়ে সাকিব ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও ম্যান অব দ্য সিরিজ- দুটো পুরস্কারই নিজের ঝুলিতে পোরেন। পুরো সিরিজে তিনি ৫৩.০০ গড়ে ১৫৯ রান করে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার হন এবং ১৮.৭৬ গড়ে ১৩ উইকেট নিয়ে কেমার রোচের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন। টেস্ট সিরিজ ২-০তে জেতার পর বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজও ৩-০ ব্যবধানে জেতে।
সিরিজে সাকিব দুটি হাফসেঞ্চুরি করেন। ব্যাটিং গড় ছিল ৪৫.০০। ৪৮.০০ গড়ে তিনি দুটো উইকেটও নেন। এই অনবদ্য পারফরম্যান্সের জন্য ওয়ানডে সিরিজেও তিনি ‘সেরা খেলোয়াড়’-এর খেতাব জিতে নেন।
মাশরাফি আহত থাকায় সাকিবকেই আগস্টে জিম্বাবুয়ে সফরে অধিনায়ক পদে বহাল রাখা হয়। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সাকিব মাত্র ৬৪ বলে ১০৪ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর গড়তে ও দলকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেন। সাকিব সিরিজ শেষ করেন ৪২.৫০ গড়ে ১৭০ রান করে পঞ্চম সর্বোচ্চ স্কোরার হিসেবে। ৩৯.৬৬ গড়ে নেন মোট ৬ উইকেট। ৪-১ এ সিরিজ জয় শেষে কুঁচকির ব্যথা সারানোর জন্য সাকিব অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই ব্যথাটা তাকে ভোগাচ্ছিল। ব্যথাকে উপেক্ষা করেই তিনি জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বছরজুড়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে সাকিব আইসিসি কর্তৃক ‘টেস্ট প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার, ২০০৯’ ও ‘ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার, ২০০৯’-এর জন্য মনোনীত হন। সাকিবই প্রথম বাংলাদেশি যিনি এ ধরনের ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছেন।
২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করা হয়, পরের মাসে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে সিরিজে মাশরাফিই বাংলাদেশকে নেতৃ?ত্ব দেবেন এবং সাকিব আবারও সহ-অধিনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। কিন্তু মাশরাফি হাঁটুর ইনজুরি থেকে সময়মতো সেরে উঠতে না পারায় সাকিবকেই অধিনায়কের দায়িত্বে রাখা হয়। উদ্বোধনী খেলায় হারলেও সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঠিকই ঘুরে দাঁড়ায় এবং ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয়। সে সময়ে অনবদ্য পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে নভেম্বরে ‘দ্য উইজডেন ক্রিকেটার্স’ সাকিবকে ‘বছরের সেরা টেস্ট ক্রিকেটার’ ঘোষণা করে।

২০১০-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে ইংল্যান্ড। সবগুলো ম্যাচেই ইংল্যান্ড জয় পায়। টেস্ট ও ওয়ানডে- দুটোতেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন সাকিব। দ্বিতীয় টেস্টের দুই ইনিংসে সাকিব যথাক্রমে ৪৯ ও ৯৬ রান করেন এবং ১২৪ রান দিয়ে নেন ৪টি উইকেট। দুটো টেস্টই শেষ দিন পর্যন্ত গড়িয়েছিল। ম্যাচের তৃতীয় দিনে আম্পায়ারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত অবশ্য যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনক হারের জন্য সাকিব আম্পায়ারদের পরোক্ষভাবে দোষারোপ করেন। সে বছরই মে মাসে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড সফরে যায়। এবারও বাংলাদেশ ২-০তে টেস্ট সিরিজ হারে এবং ৮টি উইকেট নিয়ে সাকিব সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে দিয়ে বাংলাদেশ ‘এশিয়া কাপ, ২০১০’ খেলার উদ্দেশ্যে শ্রীলঙ্কা যায়। তিনটি ম্যাচের প্রতিটিতেই বাংলাদেশ হারে। সাকিব ও শফিউল ৫টি করে উইকেট নিয়ে যৌথভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন। অধিনায়ক হিসেবে সাকিব নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। সেই সঙ্গে অলরাউন্ডার হিসেবেও নিজের সেরাটা দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। এই দ্বিবিধ জটিলতার কারণে জুলাইয়ে সাকিব অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়