ঢাকায় সিপিবির সমাবেশ কাল

আগের সংবাদ

টার্গেট এবার রাজপথ দখল : পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ ও প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি

পরের সংবাদ

প্রতিযোগিতার বাজারে ডলার : দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে পিছু হটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক > টাকার মান কমল ৯০ পয়সা

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলী ইব্রাহিম : ডলারের সংকট কাটাতে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে প্রথমে বাজারে বিপুল পরিমাণে ডলার ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে কাজ না হলে পরবর্তীতে ডলারের দাম নির্ধারণ করে দেয়। এতে ডলারের বাজারে অস্থিরতা আরো চরম আকার ধারণ করে। কিছুতেই কিছু না হওয়ায় ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ডলা?রের বাজা?রে অস্থিরতা কাটা?তে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস এসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম নির্ধারণ করে ৮৯ টাকা। আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য বিসি সেলিং রেট নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। তবে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া রেট মানেনি বেশিরভাগ ব্যাংক। ইচ্ছেমতো আমদানিকারকদের কাছ থেকে ডলা?রের মূল্য নি?য়ে?ছে ব্যাংকগুলো। এতে ডলারের বাজারে অস্থিরতা আরো তীব্র আকার ধারণ করে। এসব সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীত হওয়ায় ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া থেকে পিছু হটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সর্বশেষ খবর পাওয়া তথ্যেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরো ৯০ পয়সা কমিয়ে ৮৯ দশমিক ৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাস্তব বিবর্জিত সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ডলারের সংকট আরো বেড়েছে। আর বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আহরণ কমে যায়। যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের মাসে অর্থাৎ গত এপ্রিল মাসে ছিল ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার। এক মাসের ব্যবধানে প্রবাসী আয় কমেছে ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার কম এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম।
ডলারের দাম নির্ধারণের বিষয় নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, যারা রেমিট্যান্স আহরণ করে তারাই ডলা?রের একটা রেট দি?য়ে?ছিল। এই রেট বিবেচনায় নিয়ে মৌখিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো বেঁধে দেয়া রেট দিয়ে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনতে পারছে না। তাই এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ এখন ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতামূলকভাবে ডলারের দাম নির্ধারণ করবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়গুলো তদারকি করবে বলেও জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই মুখপাত্র।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রপ্তানি আয়েও। মে মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩৮৩ কোটি ডলার আয়। এই আয় গত ৯ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। আর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এছাড়াও গত এপ্রিল মাসের চেয়েও ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ কম এসেছে রপ্তানি আয়। গত বছরের আগস্টে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৩৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর পর থেকে প্রতি মাসেই ৪০০ কোটি (৪ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রপ্তানি দেশে এসেছে। সবচেয়ে বেশি এসেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, অবশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাস্তব বির্বজিত সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। এতে ডলারের অস্থিরতা কাটতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। কারণ ডলারের সংকট কাটাতে তারা এবার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এতে কতটা স্থিতিশীল থাকবে; তার ওপর নির্ভর করবে ডলারের বাজার। কারণ ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে না দিয়ে কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কারণে বাজারে অস্থিরতা আরো বেড়েছে। বাজারে আস্থা ফিরলে ডলারের অস্থিরতা কাটতে বেশি সময়

লাগবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তে প্রবাসী আয়ে ইতিবচক প্রভাব পড়বে। সেই সঙ্গে রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে রাতারাতি ডলারের বাজারের অস্থিরতা শেষ হবে না বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়