সাংবাদিক ও গীতিকার কে জি মোস্তফা আর নেই

আগের সংবাদ

স্পষ্ট নয় আয় বাড়ানোর খাত : এ বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা > বৈশ্বিক অস্থিরতাও নেয়া হচ্ছে না বিবেচনায়

পরের সংবাদ

সয়াবিন তেল সংকট কারসাজিতে > ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করেছিলাম, তারা কথা রাখেনি : সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি

প্রকাশিত: মে ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাড়তি দামেই তেল কিনছেন ক্রেতারা। তারপরও চাহিদা মতো তেল নেই বাজারে। খুচরা বিক্রেতারা দুষছেন পাইকারদের,
আর
পাইকাররা মিল মালিকদের।
এদিকে ভোক্তা অধিকারের ভ্রাম্যমাণ আদালত পাইকারি মার্কেটগুলোতে অভিযান চালিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরির উদ্দেশ্যে গুদামে রাখা হাজার হাজার লিটার তেল উদ্ধার করছে। পাশাপাশি জরিমানাও করছে। তেল নিয়ে চলমান এ তেলেসমাতি নিয়ে এবার মুখ খুললেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ভোজ্যতেলের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরকারের ‘বিশ্বাসের সুযোগ’ নিয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, বেশি মুনাফার আশায় তেল ধরে রেখে তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। শুধু তাই নয়, যারা কারাসাজি করে দাম বাড়িয়েছে- ইতোমধ্যে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ব্যবসায়ীদের ডিলারশিপ এবং লাইসেন্স বাতিল করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে গতকাল সোমবার দুপুরে ভোজ্যতেল নিয়ে বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এসব কথা বলেন।
এদিকে, সারাদেশে ব্যবসায়ীদের মজুতকৃত তেল উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারে সোমবার একটি দোকানে ‘গোপনে মজুত করে রাখা’ ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেলের সন্ধান পেয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। আর ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ৩টি দোকানকে তারা জরিমানা করেছেন নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করার অভিযোগে। চলমান অভিযানে দেশের অন্যান্য স্থানেও হাজার হাজার লিটার তেল উদ্ধার হচ্ছে। মজুতকৃত তেল উদ্ধারে আরো কঠোর অভিযান পরিচালনা করার কথা জানিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর। এদিকে কারসাজি ঠেকাতে অসাধু ব্যবাসয়ীদের আইনের আওতায় আনতে সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানতে চাইলে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ভোক্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা যেন এ ধরনের কারসাজি করতে না পারে- এজন্য সরকারকে আরো কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকার যেহেতু কারসাজি ধরতে পেরেছে; তাহলে তো আরো আগেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার আইন আছে, এসেনসিয়াল কমোডিটি আইন আছে- এসব আইনের আওতায় এনে অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে আবার ভোজ্যতেল বাজার থেকে যেন উধাও না হয়ে যায় সেদিকেও সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে।
বিভিন্ন সংস্থার অভিযান শুরুর পর দেশের বড় বড় বাজারের মুদিপণ্যের দোকানগুলোতে নতুন দামের তেল সরবরাহ শুরু হয়েছে। আর পুরো বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ঢাকার অধিকাংশ বাজারে এখনো সয়াবিন ও পামওয়েল তেল পাওয়া যাচ্ছে না।

পুরনো তেল যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে তাও বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে। খোলা পামওয়েল ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিলিটার। এছাড়া পাঁচ লিটারের ক্যান বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকার উপরে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ডিলার কিংবা পরিবেশকরা তেল দিচ্ছে না। আবার বড় বড় বজারে কিছু তেল পাওয়া গেলেও তা চাল, চিনি, চা কিংবা অন্যান্য মুদিপণ্যের কেনার শর্ত হিসেবে দেয়া হচ্ছে। ফলে ভোজ্যতেলের বাজারের অস্থিরতা কমছে না।
চলতি মাসের শুরুতে ঈদের ঠিক আগে আগে খুচরা বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় রান্নায় ব্যবহৃত সয়াবিন তেল। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সায় নিয়ে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকার কাছাকাছি নির্ধারণ করেন মিল মালিকরা। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বাড়তি লাভের জন্য ব্যবসায়ীরা ১০ দিনে ৪০ হাজার টনের মতো সয়াবিন তেল অবৈধভাবে মজুত করেছেন বলে ধারণা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের। এতে তারা অতিরিক্ত দেড়শ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করার সুযোগ নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করেছিলাম এটাই আমাদের ব্যর্থতা। বিশ্বাস করা ভুল হয়েছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমরা শিখেছি মানুষকে বিশ্বাস করতে হয়। মিল মালিকরা কথা রাখলেও খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে। সয়াবিন তেল নিয়ে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কারসাজি করেছেন। তেল মজুতকারীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের যেসব ব্যবসায়ী এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। যখন যেখানে প্রয়োজন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু তারা সংখ্যায় লাখের উপরে। এটা একটা সমস্যা। ভোক্তাদের উদ্দেশে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সত্য যতই কঠিন হোক, তা মেনে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে তেলের দাম বাড়া মেনে নিন। পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের এখনকার দামও বিবেচনায় নিতে হবে। 
গত ফেব্রুয়ারি মাসে তেলের দাম নির্ধারণের পর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ানোর ফলে রোজার মধ্যেই আরেকবার দাম পরিবর্তন করা প্রয়োজন ছিল বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তবে রোজায় যাতে মানুষের কষ্ট না হয়, সেজন্য তিনি মিল মালিকদের অনুরোধ করে দাম বাড়ানো কিছুটা বিলম্বিত করেছিলেন। মন্ত্রী বলেন, এখনতো দেখছি রোজার ভেতর একবার দাম বাড়ানোই ভালো ছিল। মিল মালিকরা মেনে নিলেও খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা ঠিকই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ঈদের পর তেলের দাম বাড়বে, এটা সবাই অনুমান করতে পারছিলেন। শুধু তাই নয়, তেলের উচ্চমূল্যে দরিদ্র মানুষ যাতে চাপে না পড়ে,  সেজন্য সরকার টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি দরিদ্র পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করবে। আগামী জুন মাসে টিসিবি এসব পণ্য সরবরাহ করবে।
এক বছর ধরে দেশে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা চলছে। করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের কাঁচামালের দাম দফায় দফায় বাড়ার কারণে দেশীয় বাজারে এ পণ্যটির দাম হুহু করে বেড়েছে। প্রতিবারই সরকারি হস্তক্ষেপে দাম নির্ধারণ করা হলেও কোনোবারই প্রতিফলন ঘটেনি বাজারে। এবারে রমজান শুরুর আগেই বাজারে পাম ও সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে একটা সংকট তৈরি হয়েছিল। তখন সরকার হস্তক্ষেপ করে দাম নির্ধারণ করার পর সেই দফায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে। এখন আবার তেল নিয়ে হাহাকার চলছে। সর্বশেষ ঈদের পরের দিন ৫ মে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা নির্ধারণের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর থেকে সয়াবিন তেলের বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকটের জন্য বরাবরের মতো একে অন্যকে দুষছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ভোজ্যতেল বিপণন ব্যবস্থায় মিলার তথা পরিশোধনাগার কোম্পানি, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা ভূমিকা রাখেন। এ তিন স্তর হয়ে ভোক্তার হাতে আসে তেল। ভোজ্যতেলের চলমান সংকটের জন্য তিন স্তরের ব্যবসায়ীরা পরস্পরকে দায়ী করেন।
গত মার্চে ভোজ্যতেলের বাজারে যখন অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন মিল মালিকদের দাবির মুখে ভোজ্যতেলের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে সব মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার এবং আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট কমানো হয়। বিশাল কর ছাড়ের পরও এর সুফল পাননি ভোক্তারা। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কর ছাড় দেয়ার ফলে এ খাত থেকে ২৭০ কোটি টাকার রাজস্ব গচ্চা গেছে। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন করে আর কর ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঈদের পর দাম বাড়তে পারে, এমন খবরে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তেল বিক্রি না করে মজুত করেছেন। কয়েকটি বাজার পরিদর্শন করে আমরা এমন প্রমাণ পেয়েছি। যারা এসব অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়