ক্র্যাবের স্থায়ী অফিস দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ

আগের সংবাদ

রপ্তানি পণ্যের বহর বাড়ছে : মাইলফলকের ঘরে টেক্সটাইল, কৃষি এবং চামড়াজাত পণ্য

পরের সংবাদ

স্পষ্ট নয় আয় বাড়ানোর খাত : এ বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা > বৈশ্বিক অস্থিরতাও নেয়া হচ্ছে না বিবেচনায়

প্রকাশিত: মে ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলী ইব্রাহিম : দেশের মোট রাজস্বের প্রায় ৮০ শতাংশ আদায় করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতি বছরের মতো আগামী বাজেটেও কোনো ধরনের আয়ের খাত তৈরি না করেই প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই প্রতি বছর একটা বড় লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়। অর্থাৎ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যাই হোক- প্রতি বছরই বাড়ে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা। যে কারণে প্রায় প্রতি বছরই এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি থেকে যায়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। সেই সঙ্গে বিশ্বে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার বিষয়টি আগামী বাজেটে বিবেচনায় নেয়া হবে। সেই সঙ্গে করপোরেট করহার কমানোর একটা প্রস্তাব করা হতে পারে। এতে উল্লেখযোগ্য হারে রাজস্ব আয় না কমলেও বাড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এই পরিস্থতিতে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আগামী ২ মাসে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। যা অসম্ভব বলে মনে করছেন খোদ এনবিআর কর্মকর্তারাই।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নানা কারণে এই বাজেটে ঘাটতির চাপ বাড়বে। এনবিআরের আয় বাড়ানোর বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ ছাড়া বিশাল এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব। প্রাকবাজেট আলোচনার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেটে

বিভিন্ন খাতে ছাড় আসতে পারে। সব মিলে বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ ছাড়া নতুন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে আমরা বেশ কিছু ছাড়ের কথা শুনছি। যদি এসব ক্ষেত্রে ছাড়া আসে তাহলে রাজস্ব আয় না কমলেও বেশি বাড়বে না। এই পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন খুবই চ্যালেঞ্জিং। যেখানে চলতি অর্থবছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। সেই হিসাবে আগামী অর্থবছরে আরো ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কোনো যৌক্তিকতা দেখেন না এই অর্থনীতিবিদ। বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, রাজস্ব আহরণ বাড়নোর বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ ছাড়া নতুন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়; এমনকি এই লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি রাজস্ব আদায় করাও খুব কঠিন এনবিআরের জন্য। গত কয়েক বছর ধরে অটোমেশন বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর কথা বলা হলেও এর গতি খুবই শ্লথ। যে কারণে আগামী অর্থবছরেও বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়তে পারে এনবিআর।
সূত্র আরো জানায়, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে ভ্যাট আদায়কে। এই খাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। যদিও বিগত দুই বছরে সবচেয়ে পিছিয়ে ভ্যাট আদায়। আগামী অর্থবছরে আয়করের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। আর আমদানি-রপ্তানির পর্যায়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, বরাবরের মতো এবারো এনবিআরকে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আসলে এনবিআর কি পরিমাণে রাজস্ব আদায় করতে পারবে এই বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয় না। যেহেতু অর্থনীতির আকার বাড়ছে, সে হিসাবে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রাও বেড়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কিনা- তা নিয়ে সংশয়ে এনবিআর কর্মকর্তারা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কাটছাঁট না হলে বছর শেষে প্রায় অর্ধ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি থাকবে বলেও মনে করেন রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা।
এই বিষয়ে কথা হয় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতি বছর বাজেটে আমাদের ব্যয়ের কাঠামো নির্ধারণ করে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। আগামী বাজেটেও এই গতানুগতিক ধারা অব্যাহত রাখা হতে পারে। তবে যৌক্তিক আয়ের কাঠামো তৈরি করে ব্যয়ের কাটামো নির্ধারণ করা উচিত বলেও মনে করেন এই অর্থনীবিদ। তিনি বলেন, গত বছরেও এনবিআর ডাবল ডিজিটের প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। তাই আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে আয়ের যৌক্তিক কাঠামো নির্ধারণ করা প্রয়োজন। আগের আয়ের কাঠামো নির্ধারণ না করার কারণে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না এবং বছর শেষে এই লক্ষ্যমাত্রা কাটছাঁট করতে হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়