বাংলাদেশ আইন সমিতির বার্ষিক সম্মেলনে আইনমন্ত্রী : কক্সবাজারে ধর্ষণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে

আগের সংবাদ

সক্ষমতা বেড়েছে, সঙ্গে দুর্নীতিও > ফিরে দেখা : স্বাস্থ্য খাত

পরের সংবাদ

সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে তো! : বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম শুরু > ঘাটারচর-কাঁচপুর রুটে চলবে সবুজ রংয়ের ৫০ বাস

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত রাজধানীর প্রায় ২১ কিলোমিটার রুটে সবুজ রংয়ের বাস দিয়ে আজ চালু হচ্ছে ঢাকা নগর পরিবহন। বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চালু হচ্ছে এটি। সকাল ১০টায় মোহাম্মদপুর বিআরটিসি ডিপো সংলগ্ন বাস স্টপেজ থেকে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক উপস্থিত থাকবেন।
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর ডিএসসিসির নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২০তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ওইদিন সভাশেষে ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দেন, ২৬ ডিসেম্বর ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে বিআরটিসির ৩০টি বাস এবং ট্রান্সসিলভার ২০টি বাস নিয়ে ঢাকা নগর পরিবহনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। এ রুটের বাসগুলো হবে সবুজ রঙের। প্রথমে ৫০টি বাস নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও কিছুদিনের মধ্যে এ রুটে মোট ১০০টি বাস চলাচল করবে। আর ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, প্রথম দিন থেকেই এ রুটের বাসগুলোতে ই-টিকেটিং সিস্টেম চালু হবে। আমাদের বাস বে, যাত্রী ছাউনিগুলোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি বাসের ড্রাইভার-স্টাফদের নির্দিষ্ট পোশাক থাকবে, সেই সঙ্গে তাদের আইডি কার্ড গলায় ঝুলানো অবস্থায় থাকবে। যেসব বাসের রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট আছে, সেসব বাসই কেবল এ রুটে বাস পরিচালনা করতে পারবে।
এদিকে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ডিএসসিসির নগরভবনে বাস রুট রেশনালাইজেশনে সম্পৃক্ত চালকদের দিনব্যাপী ওরিয়েনেটশন প্রশিক্ষণ দিয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা রহমান

এই ওরিয়েন্টেশন প্রশিক্ষণের উদ্বোধন ও সমাপন করেন। বাসচালক ও কাউন্টার ম্যান মিলিয়ে প্রশিক্ষণে মোট ৭০ জন অংশ নেন। ৪টি সেশনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম, গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা ও দুর্ঘটনারোধে করণীয়, ট্রাফিক সাইন, সিগন্যাল ও মার্কিং পরিচিতি এবং সড়ক পরিবহনসংক্রান্ত আইন, নীতিমালা ও বিধিবিধান সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থীদের ধারণা দেয়া হয়। এছাড়া ২২ জন কাউন্টারম্যানকে আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, নানা বাঁধা-বিপত্তি উপেক্ষা ও কয়েক দফা তারিখ পিছিয়ে অবশেষে চালু হতে যাওয়া এই নগর গণপরিবহন কতটুকু টেকসই হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। খোদ দায়িত্বপ্রাপ্তদের মুখেই নানা সময়ে শোনা গেছে হতাশার কথা। কেননা বাস রুট রেশনালাইজেশনের ২০তম সভাতেও পরিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে গত ৫ অক্টোবর ১৯তম সভা শেষে ডিএসসিসির মেয়র শেখ তাপস ঘোষণা দিয়েছিলেন ১ ডিসেম্বর থেকে ১২০টি নন-এসি বাস নিয়ে নগর পরিবহন চালু হবে। নগরের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এক বছর আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। বিষয়টি অত্যন্ত জটিল ও দুরূহ ছিল। এখন আমরা লক্ষ্য পূরণের কাছাকাছি আছি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তা হয়নি। ২০তম সভা শেষে ঘোষণা আসে ৫০টি বাস নিয়ে ২৬ ডিসেম্বর থেকে যাত্রা শুরু ঢাকা নগর পরিবহনের। সেক্ষেত্রে ৭০টি বাস আর আসেনি। এর আগে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনও একাধিকবার এই পরিবহন চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এমনকি তারিখও ঘোষণা করেছিলেন পরিবহন চালুর। কিন্তু চালু করতে পারেননি।
রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর একটি কমিটি গঠন করা হয়। ডিএসসিসির মেয়রকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের এই কমিটিতে ডিএনসিসির মেয়রকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বিআরটিএর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের চেয়ারম্যান, রাজউকের চেয়ারম্যান, ডিএমপির কমিশনার, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক। বেশ কয়েকটি বৈঠক করলেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি তারা।
২০১৯ সালের ২৭ মার্চ বৈঠক শেষে কমিটির প্রধান তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দেন- ‘ধানমন্ডি-সায়েন্সলাব-আজিমপুর রুটে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু হবে। এতে বিআরটিসির যে ৪০০টি অত্যাধুনিক বাস আনা হচ্ছে তা থেকে ২০ থেকে ২৫টি বাস এই রুটে দেয়া হবে। এজন্য ৩৬টি স্পট করে দেয়া হবে। এসব স্পটে বাসগুলো এসে নির্ধারিত সময়ের জন্য অপেক্ষা করবে। এসব কাউন্টারে প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর একটি করে বাস আসবে। যাত্রী তোলা শেষে কাউন্টার ত্যাগ করবে। তার সেই সিদ্ধান্তও আলোর মুখ দেখেনি। তাই এ পরিবহনের যাত্রা নিয়ে শঙ্কিত নগর পরিবহন বিশ্লেষকরা।
জানতে চাইলে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, উদ্যোগটা খুবই সুন্দর এবং সহজ। তবে এই পরিবহন চালু হচ্ছে একটা ¯্রােতের বিপরীতে গিয়ে। ১৯৮৩ সালের পর থেকে গণপরিবহনে একটা বিশৃঙ্খল সিস্টেম চলে আসছে। এর বিপক্ষে গিয়ে একটা আধুনিক সুশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থা প্রচলন করলে পরে এই বিশৃঙ্খল সিস্টেমের যারা বেনিফিসিয়ারি তারা সেটা হতে দেবে না। পাশাপাশি যেভাবে এটা তারা চালু করছেন, তা টেকসই হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখি না। কারণ, জানা লোক নিতে হবে। নইলে এটা সবসময় ওনাদের কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ মনে হবে। তবে আমি এই গণপরিবহন যাত্রার শুরুটার জন্য শুভ কামনা জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ খান ভোরের কাগজকে বলেন, ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত যে ঢাকা পরিবহন চালু হচ্ছে, সেখানে আমরা থাকব। ঢাকা সিটি করপোরেশন ও ডিটিসিএ এটা চালু করছে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করব। যাতে এই উদ্যোগটি পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়